কলকাতা: চতুর্থ দফার ভোটের দিন ফের ‘অডিয়ো বোমা’ বিজেপির (BJP)। তৃণমূলের ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর (পিকে) স্বীকার করে নিয়েছেন বিজেপিই বাংলায় ক্ষমতায় আসছে। একটি অডিয়ো টুইট করে এমনটাই দাবি করলেন বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য। যদিও এই অডিয়োর সত্যতা টিভি নাইন বাংলা যাচাই করেনি। তবে সেটি টুইট করে অমিত মালব্য দাবি করেছেন, ওই অডিয়োয় প্রশান্ত কিশোর বলেছেন, বাংলায় মেরুকরণই হবে। পাঁচ অস্ত্রে এবার শাসকদলকে পরাস্ত করবে পদ্মশিবির। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই ব্রহ্মাস্ত্র নরেন্দ্র মোদী।
অমিত মালব্যর টুইট করা অডিয়োটিতে শোনা যাচ্ছে, পিকে বলছেন, ‘মোদীর নামে, হিন্দুত্বের নামে ভোট হচ্ছে। মেরুকরণ, মোদী, হিন্দিভাষী, তফশিলি জাতি-এসবই ফ্যাক্টর। শুভেন্দু গেলেন কী প্রশান্ত কিশোর এলেন, এসব কোনও বিষয় নয়।’ এরপরই নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তার কথা তাঁর মুখে, ‘মোদী এখানে জনপ্রিয়।’ অর্থাৎ নমো ক্যারিশ্মা যে বিজেপিকে আলোর বৃত্তে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন পিকে, দাবি অমিত মালব্যর। উল্লেখ্য, ভোট প্রচারে নেমে বিজেপি কিন্তু প্রথম থেকেই নরেন্দ্র মোদীকে সামনে রাখছেন। নমো নামেই ভোট চাইছেন বাড়ি বাড়ি। ঠিক যেমন, তৃণমূল সুপ্রিমো বলে থাকেন, ২৯৪টা আসনে তিনিই মুখ।
In a public chat on Club House, Mamata Banerjee’s election strategist concedes that even in TMC’s internal surveys, BJP is winning.
The vote is for Modi, polarisation is a reality, the SCs (27% of WB’s population), Matuas are all voting for the BJP!
BJP has cadre on ground. pic.twitter.com/3ToYuvWfRm
— Amit Malviya (@amitmalviya) April 10, 2021
তৃণমূল যখন বিভিন্ন প্রচারে গিয়ে ভিন রাজ্যে দলিতদের দুর্দশার অভিযোগ তুলে বিজেপিকে নিশানা করছে, তখন তৃণমূলের ভোট কুশলীকে বলতে শোনা যাচ্ছে, এ রাজ্যে এক কোটির বেশি অবাঙালি ভোট, দলিত- তফশিলি ভোট বিজেপির দিকে যাচ্ছে। ভিডিয়োটিতে শোনা যাচ্ছে পিকে বলছেন, ‘১ কোটির বেশি হিন্দিভাষীর ভোট রয়েছে এখানে। ২৭ শতাংশ দলিত রয়েছেন। আর তাঁরা পুরোপুরি বিজেপির পাশে রয়েছেন।’ অর্থাৎ যে হিন্দিভাষীদের ভোটকে এতদিন সংরক্ষিত করে রেখেছিল তৃণমূল, এবার সেখানে বড় থাবা বসাতে চলেছে বিজেপি। অন্যদিকে বাঁকুড়ায় বাগদি-বাউড়ি ভোটের একটা অংশ লোকসভা ভোটে বিজেপির দিকে ঝুঁকেছিল। পুরুলিয়া, বীরভূমেও এই সম্প্রদায়ের ভোটার অসংখ্য। তাঁদের জন্য আলাদা পর্ষদ গড়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাতে আদৌ কাজ হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ উস্কে দিলেন পিকে।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে মতুয়া ভোটকে নিজেদের দিকে টেনে নিয়েছিল বিজেপি। তাতেই এসেছিল বনগাঁ, রানাঘাটের মতো আসন জয়ের সাফল্য। কৃষ্ণনগরেও বড় ফ্যাক্টর বিজেপি। বিধানসভা ভোটের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই ভোটকে ফিরিয়ে আনতে একাধিক সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন। মতুয়া সম্প্রদায়ের হরিচাঁদ- গুরুচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথিতে ছুটি ঘোষণা থেকে এই সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা উন্নয়ন পর্ষদ-বাদ দেননি কিছুই। তবে পিকের দাবি, “লোকসভা ভোটের মত না হলেও মতুয়াদের ৭৫ শতাংশ ভোট বিজেপির দিকেই যাবে। ২৫ শতাংশ পাবে তৃণমূল।”
মতুয়া, তফশিলি, হিন্দিভাষী সকলের ভোটের পাল্লা বিজেপির দিকে ঝুঁকে। শুধু তাই নয় বামেদের ভোটও এখানে ফ্যাক্টর বলে দাবি পিকের। বামের ১০-১৫ শতাংশ ভোটের দুই-তৃতীয়াংশ পদ্ম শিবিরের দিকে ঝুঁকে রয়েছে। তাঁরা মনেই করছেন বিজেপি সরকার গড়তে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গে নিচুতলায় বিজেপির সংগঠন নেই বলে যে ধারণা ছিল তাও ভ্রান্ত বলেই দাবি করেন প্রশান্ত কিশোর। পিকের দাবি, ‘বাম সমর্থকরাও কেউ কেউ বলছেন, বিজেপি আসুক, মমতার হারা দরকার। বিজেপির নিচুতলায় বামেদের থেকে আসা বহু কর্মী রয়েছেন। তাঁরা মন দিয়ে কাজ করছেন। দু’ একটি জেলা বাদে বাংলার সব জায়গায় বিজেপির ক্যাডাররা শক্তিশালী।’
Another candid admission by Mamata Banerjee’s election strategist – all that the Left, Congress and TMC ecosystem have done in the last 20 years is Muslim appeasement.
Implication? It has resulted to resentment on ground. The speakers had not realised that the chat was public! pic.twitter.com/2kyLsQXYyi
— Amit Malviya (@amitmalviya) April 10, 2021
পিকের দাবি, তাঁরা একটা সমীক্ষা করেছিলেন। মানুষ কাকে ভোট দিতে চায়, সরকার কে তৈরি করবে? পিকের দাবি, ‘এই প্রশ্নে আমাদের সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে মানুষ বলছেন যে বিজেপিই আসছে। যারা বিজেপিকে ভোট দেবেন তারা তো বটেই, যাঁরা বামেদের ভোটার তাঁদেরও দুই তৃতীয়াংশ বিশ্বাস করছেন বিজেপিই আসবে। ৫০ শতাংশ থেকে ৫৫ শতাংশ হিন্দুরা বিজেপিকে ভোট দিচ্ছেন।”
যদিও এই অডিয়ো নিয়ে প্রশান্ত কিশোরের বক্তব্য, গোটা ভিডিয়োটি প্রকাশিত হলে স্পষ্ট হবে তিনি কি বলতে চেয়েছেন। কাটছাট করে যা প্রকাশ করা হয়েছে, তা রাজনীতির তুরুপের তাস ছাড়া আর কিছুই না বলে দাবি পিকের।