কলকাতা: চন্দনগরের পিয়ালির জন্যই ফের গর্বিত আপামর বাঙালি। প্রথম বাঙালি মেয়ে, যিনি অক্সিজেন ছাড়াই পৃথিবীর সর্বোচ্চ শিখরটি ছুঁলেন। রবিবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় ওঠে এই নজিরবিহীন রেকর্ড গড়েন চন্দননগরের পিয়ালি বসাক (Piyali Basak)। তাঁর এই কীর্তিতে গর্বিত বাঙালি। গোটা বাংলা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও পিয়ালির জয়ের রাস্তা এতটা সহজ ছিল না। বন্ধুর পার্বত্য পথ পাড়ি দেওয়ার আগে লড়াই করতে হয়েছিল তীব্র আর্থিক সঙ্কটের সঙ্গেও। সামিটের জন্য সরকারের কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানানো হলেও তাতে কোনও সুরাহা হয়নি বলে দাবি করেছিলেন পিয়ালি। এমনকী সামিট শুরুর সময়েও গতমাসে কীভাবে সরকারের কাছে দরবার করেও ফিরে আসতে হয়েছিল, তা নিজেই জানিয়েছিলেন পিয়ালি। অবশেষে ক্রাউড ফান্ডিংয়ের (Crowd Funding) হাত ধরে শুরু হয় অভিযান।
পর্বতারোহী পিয়ালি ও তাঁর পরিবারের দাবি অনুযায়ী, এ বারে যে এভারেস্ট জয় করেছেন তাতে মেলেনি নূন্যতম সরকারি সাহায্য। এ কথা জানিয়েছেন বাংলার বিখ্যাত পর্বতারোহী নীলাঞ্জন রায়চৌধুরীও। তবে সামিট শুরুর সময় এ প্রসঙ্গে একটি ভিডিও বার্তায় পিয়ালি বলেছিলেন, “আমার এভারেস্ট ও লোৎসে অভিযানের জন্য ৩৫ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। পাশাপাশি অভিযান শেষের পর নেপাল সরকারের কর, সামিট বোনাস, এজেন্সি টিপস-সহ আমাকে আরও প্রায় ৪ লক্ষ টাকার কাছাকাছি দিতে হবে। মোট ৩৯ লক্ষের মধ্যে ১৩ লক্ষ টাকা জোগার হয়েছে। বাকি টাকা এখনও জোগাড় হয়নি”। প্রসঙ্গত, পরবর্তীতে বাকি টাকা ব্যাঙ্ক লোন ও ক্রাউড ফান্ডিংয়ের হাত ধরে জোগাড় হলেও এখনও বাকি ৪ লক্ষ।
এদিকে ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে ২০২১ সালে করোনা আক্রান্ত অবস্থাতেই বিনা অক্সিজেনে ধৌলগিরি পর্বতমালা জয় করেন তিনি। তারপর থেকেই লক্ষ্য ছিল এভারেস্ট। কিন্তু, বাধা ছিল অর্থ সঙ্কট। যদিও শেষ পর্যন্ত বঙ্গ কন্যার সাফল্যে গর্বিত গোটা রাজ্য। এ দিকে বাড়িতে বাবা অসুস্থ, খুবই কষ্টে দিন কাটে গোটা পরিবারের। তাঁর মধ্যেই শুরু থেকে লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন পিয়ালি। প্রমাণ করে দিলেন, সরকার মুখ ফেরালেও আমজনতার আশীর্বাদ মাথায় নিয়েও ছোঁয়া যায় স্বপ্ন, জয় করা যায় পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। এ দিকে বর্তমানে শৃঙ্গ জয়ের পর পিয়ালি খবরের শিরোনামে আসার পর আরও বেশি সরকারি উদাসীনতা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। প্রশ্ন উঠছে, দক্ষতা-যোগ্যতা থাকার পরেও যদিও পর্বতারোহীদের পাশে না দাঁড়ায় সরকার তবে কীভাবে লক্ষ্যপূরণের স্বপ্ন দেখবেন আগামীর পর্বতারোহীরা?
গত ২ মে অর্থ সঙ্কট নিয়ে একটি ফেসবুক পোস্ট করতে দেখা যায় পিয়ালিকে। সেখানে তিনি লেখেন, তখনও পর্যন্ত মোট ১৮ লক্ষ টাকা জোগাড় হয়েছে। যা নেপাল সরকারকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাকি ছিল প্রায় ১৭ লক্ষ টাকা। যা না দিলে তিনি এবারেস্টে যেতে পারবেন না। তাঁর এই পোস্ট নিয়েও চলে জোর চর্চা। টাকার অভাবে কী শেষ পর্যন্ত ফিরে আসতে হবে পিয়ালিকে? সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করে। এদিকে মেয়ের জয়ে স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত পিয়ালির মা। তবে অর্থসঙ্কট যে পিয়ালির সামিটে উদ্বেগের সঞ্চার করেছিল স্বীকার করে নিয়েছেন মা। এমনকী শুরুতে লোৎসে সামিটের অনুমতি মিললেও টাকার অভাবে এভারেস্টে যাওয়ার অনুমতি পাননি পিয়ালি।