কলকাতা: সকাল থেকেই একেবারে রণসজ্জায় ছিল পুলিশ। নবান্ন একেবারের দূর্গের চেহারা। জলকামান, টিয়ার গ্যাসের সেল তো বটেই, রাস্তায় গর্ত খুড়ে ব্যারিকেড ভেঙে ঢালাই করে দেওয়া হয়েছিল, আনা হয়েছিল বড় বড় কন্টেনার। বেলা সাড়ে বারোটার কিছুটা সময় পর থেকে মিছিল আসতে শুরু করে। একটার পর থেকে পরিস্থিতি তপ্ত হতে থাকে। অ্যাকশন শুরু ১টায়। প্রথমে সাঁতরাগাছি, তারপর হাওড়া ব্রিজ, তপ্ত হতে থাকে পরিস্থিতি। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগোতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। রীতিমতো ব্যারিকেড উপড়ে ফেলা হয়। পুলিশ ছুড়তে থাকে জল কামান, ফাটাতে থাকে টিয়ার গ্যাসের সেল। এ পর্যন্ত ছবিটা আর পাঁচটা নবান্ন অভিযানের মতোই। কিন্তু এরপর ক্যামেরায় ধরা পড়ে জাতীয় পতাকা হাতে এগিয়ে আসছেন দলে দলে আন্দোলনকারীরা। পুলিশ যখন জলকামান ছুড়ছে, তখনও পতপত করে উড়ছে জাতীয় পতাকা। আর সেটাই কার্যত ‘শেল্টার’! একেবারে নবান্নের কাছাকাছি পৌঁছে যান আন্দোলনকারীরা। শেষ কবে কোনও রাজনৈতিক দলের নবান্ন অভিযান এতটা কাছাকাছি পৌঁছতে পেরেছে, তা বলা কষ্টকর, বলছেন রাজনীতির কারবারিরাই।
পশ্চিমবঙ্গ ছাত্রসমাজের আন্দোলনে এদিন দেখা গেল বিভিন্ন বয়সের মানুষকে। তাঁদের কারোর হাতেই কোনও রাজনৈতিক পতাকা নেই। কেবল জাতীয় পতাকা। পুলিশ সেভাবে পুশ ব্যাক করতে বাধা পারছিল, কারণ আন্দোলনকারীদের হাতে জাতীয় পতাকা।
কোনও কোনও জায়গায় আন্দোলনকারীদের জমায়েত হঠাতে সমর্থ হয় প্রশাসন। কিন্তু যতক্ষণে সেদিকের পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে, ঠিক উল্টোদিক থেকে আরও এক দল এগিয়ে আসতে থাকে। কিন্তু এক পক্ষকে সামলাতে গিয়ে যে তখনই অনেকটা কসরত করতে হয়েছে পুলিশকে। ফলে অপরপক্ষ এগিয়ে আসতে পারে অনেকটাই। বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, পিছু হটছে পুলিশই। আক্রান্ত হতে হয়েছে তাঁদেরই। হাওড়া ব্রিজে ইটের আঘাতে মাথা ফেটে যায় পুলিশের। পুলিশকে মাটিতে ফেলে লাঠিপেটা করা হয়, লাথি মারা হয়। আবার কখনও দেখা যায়, আন্দোলনকারীরাই উদ্ধার করছেন আক্রান্ত পুলিশকে। একদিকে যখন আন্দোলনকারীদের সরাচ্ছে পুলিশ, তখন দেখা যায়, অন্যদিক থেকে ভিড় এগোতে থাকে। আন্দোলনকারীদের স্ট্র্যাটেজি, ‘গ্রুপ করে করে’ এগিয়ে এসেছেন আন্দোলনকারীরা, হাতে জাতীয় পতাকা। গ্রুপ করে লোক আসার পূর্বাভাস যদিও আগে থেকেই দিয়ে রেখেছিলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ।
বেলা ৩টে। নবান্নের সামনে কন্টেনার দিয়ে জমায়েত আটকাতে ব্যস্ত পুলিশ। দফায় দফায় ফাটানো হচ্ছে টিয়ার গ্যাসের সেল। নবান্নের উত্তরগেটমুখী রাস্তা, সেখান থেকে নবান্ন মাত্র ২-৩ মিনিট। কার্যত সে রাস্তায় পুলিশের সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। কারণ ততক্ষণে সেখান থেকে ভিড় সামলাতে পুলিশ চলে এসেছে সামনে। হঠাৎই একদল যুবক-যুবতী সেই রাস্তা ধরে এগোতে থাকেন। কয়েকশো ছেলে-মেয়ে, আর সেখানে তাঁদের সামলাতে হাতে গোনা কয়েকজন পুলিশ। নবান্নের একেবারে অদূরেই পৌঁছয়। প্রথমটায় পুলিশ সেভাবে তাঁদের আটকাতেই পারেনি।
৩ ঘণ্টা পেরিয়ে যায়, তবুও আন্দোলনের ঝাঁঝ কমাতে বেসামাল হয়ে পড়ে পুলিশ। টিয়ার গ্যাসের ধোঁয়ায় ঢাকে রাজপথ। একটা সময়ে কার্যত জল কামানের জলও শেষ হয়ে যায়। কিন্তু তখনও নবান্নের সামনে জমায়েত। যত সময় এগোতে থাকে, উদ্বেগ বাড়ছে পুলিশের।
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)