কলকাতা: বিজেপি ছাড়লেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর নাতি চন্দ্র বোস। বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর), বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডাকে চিঠি দিয়ে দলত্যাগের কথা জানান তিনি। চিঠিতে চন্দ্র বোস জানিয়েছেন, সুভাষচন্দ্র, শরৎচন্দ্রের মতো জাতীয়তাবাদী নেতাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রচারের প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি দল। তাই দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন চন্দ্র বোস। ২০১৬ সালের বিধানসভা এবং ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তিনি বিজেপির টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছিলেন। এদিন তিনি বলেছেন, “বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সময় আমায় প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং শরৎচন্দ্র বসুর অন্তর্ভুক্তিমূলক আদর্শ প্রচার করতে দেওয়া হবে। কিন্তু সেরকম কিছুই হয়নি।”
বিজেপির প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার বিষয়ে, সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে চন্দ্র বোস বলেছেন, “২০১৬ সাল থেকে আমি বিজেপিতে অবদান রেখেছি। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। আমার নীতিগুলি আমার দাদু শরৎচন্দ্র বসু এবং তাঁর ছোট ভাই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। তাঁরা দেশের প্রত্যেক ধর্মের মনুষকে দেখেছিলেন শুধুমাত্র ভারতীয় হিসেবে। বিভাজন ও সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন তাঁরা। আমি বিজেপির রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে বাংলায় রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তাঁরা সেগুলি দরকারি মনে করলেও, কখনও আমার প্রস্তাবগুলির বাস্তবায়িত করেননি। যখন আমার কোনও প্রস্তাবই গৃহীত হয় না, তখন এই দলের সঙ্গে থাকার কোনও মানে হয় না। আমি কাজ করতে পারছি না। তাই ভেবে দেখলাম, এই দলের সঙ্গে থাকাটা নেতিবাচক কাজ। আমি জেপি নাড্ডাকে বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছি। আমার শুভকামনা দলের সঙ্গে রইল। তবে তাদের উচিত সমস্ত সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করা।”
#WATCH | Kolkata: On his resignation from the BJP, Netaji Subhash Chandra Bose’s nephew, Chandra Kumar Bose says, “In 2016, I had contributed to the BJP. I was inspired by the leadership of Narendra Modi. My principles are in line with my grandfather Sarath Chandra Bose and his… pic.twitter.com/DTSW2NH8Fp
— ANI (@ANI) September 6, 2023
বিজেপির সভাপতি জেপি নাড্ডাকে দেওয়া পদত্যাগপত্রে তিনি লিখেছেন, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সময় তিনি বসু ভাইদের আদর্শ প্রচার করতে পারবেন বলে ভেবেছিলেন। ধর্ম, বর্ণ ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকল জনগোষ্ঠীকে ভারতীয় হিসাবে একত্রিত করার জন্য বিজেপিতে আজাদ হিন্দ মোর্চা গঠনের সিদ্ধান্তও হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর মতে, দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে এই পদক্ষেপ অপরিহার্য ছিল। এর জন্য তিনি এককভাবে প্রচেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, কেন্দ্র বা রাজ্য স্তরে বিজেপির কাছ থেকে কোনও সমর্থন পাননি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন বিষয়ে রাজ্য নেতৃত্বের বিরোধিতা করছিলেন চন্দ্র বসু। এমনকি, ২০১৯ সালে দলীয় নির্দেশ না মেনে সিটিজেন্স অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট বা সিএএ-র বিরোধিতা করেছিলেন।
২০১৬ সালে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরই, চন্দ্র বোসকে বঙ্গ বিজেপির সহ-সভাপতি নিযুক্ত করা হয়েছিল। ২০২০ সাল পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন তিনি। তারপর, সাংগঠনিক রদবদলের জেরে বাদ পড়েন।
দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন বিষয়ে রাজ্য নেতৃত্বের বিরোধিতা করছিলেন চন্দ্র বসু। এমনকি, ২০১৯ সালে দলীয় নির্দেশ না মেনে সিটিজেন্স অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট বা সিএএ-র বিরোধিতা করেছিলেন। এদিন তাঁর পদত্যাগের প্রতিক্রিয়ায় রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমিক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন দীর্ঘ সময় ধরেই চন্দ্র বসুর দলের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ ছিল না। কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “কোথায় চন্দ্রযান চাঁদে পৌঁছে যাচ্ছে, আর আপনারা চন্দ্র বসুকে নিয়ে পড়ে আছেন। তিনি দলে ছিলেন কবে? এতদিন থেকেও ছিলেন না। এবার দলে না থেকে থাকবেন না।”