কলকাতা: রাজ্যে কোভিড পরিস্থিতি যে কতটা ভয়ঙ্কর হতে চলেছে তা বোধহয় কল্পনার বাইরে চলে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত বুলেটিনে এ রাজ্যের দৈনিক সংক্রমণ ২ হাজার পার করে গেল। একদিনে হাজার পার! এ কোন ভাঙনের পথে ছুটছে সংক্রমণের বাংলা, প্রশ্ন বিভিন্ন মহলের।
বৃহস্পতিবারের বুলেটিন অনুযায়ী, এ রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ২ হাজার ১২৮ জন। এর মধ্যে কলকাতায় সংক্রমিত ১ হাজার ৯০ জন। মৃতের সংখ্যাও বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ জন করোনার বলি হয়েছেন। এর মধ্যে কলকাতায় মৃত্যু হয়েছে চারজনের।
কলকাতা: ১০৯০ জন
উত্তর ২৪: ৩১৫ জন
দক্ষিণ ২৪: ১০৬ জন
হাওড়া: ১৫৮ জন
পশ্চিম বর্ধমান: ১২১ জন
হুগলি: ৯১ জন
গত ২৪ ঘণ্টায় পজিটিভিটি রেটও এক ধাক্কায় বেড়ে গিয়েছে অনেকটা। বুধবার যা ২.৮৪ শতাংশ ছিল, বৃহস্পতিবার তা বেড়ে ৫.৪৭ শতাংশ হয়ে গিয়েছে। এই মুহূর্তে রাজ্যে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ৮ হাজার ৭৭৬ জন।
এতেই অবাক হলে চলবে না। উদ্বেগ এখনও বাকি! গত ২৪ ঘণ্টায় দৈনিক সংক্রমণের পরিসংখ্যানকে কার্যত সুনামি বলছে ওয়াকিবহাল মহল। অথচ বুধবার ও বৃহস্পতিবারের নমুনা পরীক্ষায় কিন্তু খুব একটা ফারাক হয়নি। স্বাস্থ্য ভবনের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ৩৮ হাজার ৩৭৫টি। বৃহস্পতিবার তা সামান্য বেড়ে ৩৮ হাজার ৮৯৮ হয়েছে। অর্থাৎ নমুনা পরীক্ষা বেড়েছে ৫২৩টি। কিন্তু হাজারের উপরে বেড়ে গিয়েছে সংক্রমণ।
প্রথমে ৩ জানুয়ারি থেকে মাইক্রো কনটেনমেন্ট জ়োনের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছিল। এখন যা পরিস্থিতি তাতে এটুকু অপেক্ষার মাশুলও হয়ত অনেক দামী হতে পারে। সে কারণে যে সব এলাকায় করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন ধরা পড়ছে, সেই সমস্ত জায়গায় মাইক্রো কন্টেনমেন্ট জ়োন তৈরির নির্দেশ জারি হয়ে গিয়েছেন। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, শুক্রবার থেকেই কলকাতা পুর এলাকার বেশি কিছু জায়গায় মাইক্রো কন্টেনমেন্ট জ়োন চালু হয়ে যাবে।
জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তা। জোর দেওয়া হচ্ছে কনট্যাক্ট ট্রেসিংয়েও। ওমিক্রন সন্দেহভাজনেরা ফোন না ধরলে প্রয়োজনে বাড়ি যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীদের। সন্দেহভাজন হোম আইসোলেশন মানছেন কি না তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে জিও ট্যাগিংয়ের সাহায্য নেওয়ার পরামর্শ স্বাস্থ্য ভবনের।
কলকাতায় মিলেছে গোষ্ঠী সংক্রমণের ইঙ্গিত। ইতিমধ্যেই জেলায় জেলায় সতর্কবার্তা দিয়েছে স্বাস্থ্যভবন। প্রকাশ্যে আসছে একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য। এক সপ্তাহের মধ্যেই একেবারে চূড়ায় পৌঁছতে পারে সংক্রমণ। দৈনিক সংক্রমণের ৩০-৩৫ হাজার ছুঁতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নমুনা পরীক্ষার হারেও বিপদ বার্তা দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, বেসরকারি ল্যাবে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে টেস্ট। হাতে আসা তথ্য নতুন করে ভয় ধরাচ্ছে মনে।
আরও পড়ুন: ফের কলকাতায় বিমান অবতরণে নিষেধাজ্ঞা! ব্রিটেন ফেরত বিমানে না নবান্নের