কলকাতা: বছর শেষের উৎসবে মেতে মহানগর। বড়দিনে রাস্তায় মানুষের ঢল নেমেছে। এক কথায় বেলাগাম কলকাতা। কারও কারও মুখে মাস্কের দেখা মিললেও, অধিকাংশই সেসবের ধার ধারেনি। তার কিছুটা ফলও মিলেছে হাতেনাতে। কলকাতায় ফের করোনার ডবল সেঞ্চুরি। উৎসবমুখর তিলোত্তমায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২১৯ জন। রাজ্যেও বাড়ল সংক্রমণ।
রবিবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪৪ জন। লাফিয়ে বেড়েছে দৈনিক পজিটিভিটি রেটও। একদিনেই ২.৪১ শতাংশ পজিটিভি রেট রাজ্যে। মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের। শনিবার রাজ্যে একদিনে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন ৫৫২ জন। মৃত্যু হয়েছিল চারজনের। পজিটিভিটি রেট ছিল ১.৭১ শতাংশ।
উল্লেখযোগ্যভাবে সংক্রমণ বাড়লেও গত একদিনে নমুনা পরীক্ষা কিন্তু হু হু করে কমেছে। স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী শনিবার ৩২ হাজার ৩৭৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। রবিবার তা কমে হয়েছে ২২ হাজার ৫৩৩টি। কলকাতায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২১৯ জন। মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। ২৫ ডিসেম্বর এই সংখ্যাটা ছিল ১৯৭ জন।
বড়দিনে ঝেঁপে রাস্তায় নেমেছেন লোকজন। আনন্দ উল্লাসে ভাসিয়েছেন গা। কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, শনিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে পার্ক স্ট্রিটে ১ লক্ষের বেশি মানুষ গিয়েছেন। এদিন ইকোপার্কে গিয়েছেন ৬০ হাজারের কাছাকাছি মানুষ। চিড়িয়াখানায় গিয়েছেন ৫১ হাজারের কাছাকাছি।
চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকারের মতে, “মাস্ক না পরে এভাবে এত উদ্দীপনা যদি কাজ করে তা হলে সামনে কিন্তু আবারও বিপদ আসতে পারে। প্রত্যেক মানুষকে তার দায়িত্ব বুঝে নিতে হবে। তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে মাস্ক পরা, টিকা নেওয়া। অকারণে ভিড়ে না যাওয়াটাও তারই দায়িত্ব।” সত্যিই তো সে পথেই এগোচ্ছে ওমিক্রন। ডেল্টার চেয়েও দ্রুত গতিতে ছড়াচ্ছে নতুন প্রজাতি। দেড় থেকে তিনদিনের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অপূর্ব ঘোষের মতে, “সম্প্রতি একজন এসেছিলেন আমার কাছে। মন্দারমণি বেড়াতে গিয়েছিলেন। আসার পর বললেন, বাচ্চার পেটের গোলমাল। আমি জানতে চেয়েছিলাম, কেন গেলেন? উনি বললেন, ডাক্তারবাবু হাপিয়ে উঠেছি। আমি ওনাকে বললাম, একবার ১২ ঘণ্টা পিপিই পরে ডিউটি করুন, তাহলে বুঝবেন হাপিয়ে ওঠা কাকে বলে।”
করোনা পরীক্ষায় দেশের মধ্যে পিছনের সারিতে রয়েছে এ রাজ্য। প্রতি ১০ লক্ষে কত জনের নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে, সেই হিসাব করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, গত দু’সপ্তাহ ধরে পশ্চিমবঙ্গ একেবারে পিছনের সারিতে রয়েছে। সবচেয়ে কম টেস্ট হয়েছে যে পাঁচটি রাজ্যে, পশ্চিমবঙ্গ তার মধ্যে অন্যতম। এই অবস্থায় দ্রুত পরীক্ষা বাড়তে উদ্যোগী হয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। শুক্রবার এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে স্বাস্থ্য সচিব নির্দেশ দেন, নমুনা পরীক্ষা যেন বাড়ানো হয়। কিন্তু স্বাস্থ্যভবন শুধু প্রস্তুতি নিলেই তো হবে না, সাধারণ মানুষকেও ইচ্ছায় খানিক লাগাম যে পরাতেই হবে।