কলকাতা: আচার্য পদে পরিবর্তন নিয়ে জোর তরজায় রাজ্য-রাজ্যপাল। বাগডোগরায় নেমে রবিবারই রাজ্যপাল যখন বললেন, মুখ্যমন্ত্রীকেই তা হলে আচার্য করে দেওয়া হোক। দমদমে এক দলীয় কর্মসূচিতে গিয়ে তখন পাল্টা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বিঁধলেন, ‘একজন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীর বয়েই গেছে মনোনীত রাজ্যপাল হতে।’ আসলে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে ব্রাত্য বসু বোঝাতে চাইলেন, গণতন্ত্রে ‘সিলেক্টেড’ ও ‘ইলেক্টেড’-এর তফাৎ কতটা।
এদিন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের বক্তব্যের রেশ টেনে কটাক্ষের সুরে বলেন, “আমার মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যপাল হতে বয়ে গেছে। আমাদের মুখ্যমন্ত্রীকে আমরা রাজ্যপাল করতে চাইব কেন? আমার মুখ্যমন্ত্রী তিনবারের জয়ী মুখ্যমন্ত্রী। ওই একবারের জন্য রাজস্থানের কোন বিধায়ক হওয়া নন। তিনি নির্বাচিত। মাননীয় চ্যান্সেলারের মাথায় রাখা উচিৎ নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী এবং মনোনীত রাজ্যপাল, নির্বাচিত এবং মনোনীত, সিলেক্টেড এবং ইলেক্টেড এই দুইয়ের মধ্যে ফারাক আছে গণতন্ত্রে। সেটা ওনার নিজের স্মরণও করা উচিৎ।”
রবিবার সকালে দার্জিলিং যাওয়ার পথে বাগডোগরা বিমানবন্দরে শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় বলেন, “শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য করবেন। উনি ওঁকে রাজ্যপালই করে দিন না! অসুবিধা কোথায়! দিদিকেই বরং রাজ্যপাল করে দেওয়া হোক!”
চলতি মাসের ২০ তারিখ রাজ্যপাল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ জন উপাচার্য ও আচার্যকে ডাকেন একটি বৈঠকে যোগদানের জন্য। শিক্ষার মানোন্নয়ন বিষয়ক আলোচনার জন্য ডেকেছিলেন তিনি। উপাচার্য ও আচার্যরা সম্মিলিতভাবে একটি চিঠি দেন রাজ্যপালকে। সেখানে লেখেন, ওমিক্রনের কারণে তাঁরা এই মুহূর্তে রাজভবনে যেতে পারছেন না। রাজ্যপাল তাঁর প্রত্যুত্তরে জানান, কোভিডের কথা মাথায় রেখে রাজভবনে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে। তাতে বৈঠকে যোগদানের বিষয়ে কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ফের তাঁদের ২৩ ডিসেম্বর ডাকেন রাজ্যপাল।
কিন্তু সেদিনও কেউ যাননি। রাজভবনে ফাঁকা আসনের ছবি তুলে ধরে পাল্টা টুইট করেন রাজ্যপাল। তিনি টুইটে লেখেন, এর আগে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের তিনি ডেকেছিলেন, তাঁরাও কেউ আসেননি। উপাচার্য নিয়োগে আচার্যকে অবহেলা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে গত ২৪ ডিসেম্বর শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “উনি (রাজ্যপাল) দিনের পর দিন ফাইল ফেলে রাখেন। ফাইল আটকে রাখেন, বিন্দুমাত্র সহযোগিতার মনোভাব না দেখান তা হলে কেরলের রাজ্যপাল যা বলেছেন, আমরা বিচার করে দেখব আমাদের আইন মেনে, সংবিধান নিয়ে আলোচনা করে, আইনজ্ঞের পরামর্শ মেনে দেখব অন্তত সাময়িকভাবে আচার্য পদে আমরা মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে আনতে পারি কি না। সেটা আমরা খতিয়ে দেখব। শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত উনি। অথচ ওনার কোনও কাজ নেই! খালি টুইট আর ফেসবুক করা ছাড়া! আপনার মনে হতেই পারে কোনও সিদ্ধান্ত ঠিক না। তা নিয়ে আলোচনা করুন। ফাইল আটকে রেখে দিচ্ছেন এটা কেমন। বিধানসভার অধ্যক্ষ পর্যন্ত এই নিয়ে বিবৃতি দিতে বাধ্য হয়েছেন।”
আরও পড়ুন: Bengal BJP: আবারও বিজেপির অন্দরে ‘বিদ্রোহ’! এবার গ্রুপ ‘লেফট’ বাঁকুড়ার চার বিধায়কের