কলকাতা: ফের করোনার বিপদ ঘিরছে রাজ্যকে। হুড়মুড়িয়ে বেড়েছে নতুন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। শুধু রাজ্যেই নয় কলকাতাতেও এবার পারদ ঊর্ধ্বমুখী। একদিনে ত্রিপল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে করোনা। একদিকে পুরভোট অন্যদিকে বড়দিন। গণতন্ত্রের উৎসব, যিশুপুজোর উন্মাদনা কাটিয়ে শহর এখন বছর শেষের উল্লাসে মাতোয়ারা। এরই মধ্যে ভয় ধরাল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন।
মঙ্গলবার এ রাজ্যে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৭৫২ জন। কলকাতাতে এই সংখ্যাটা ৩৮২। পজিটিভিটি রেটও উপরদিকেই, ২.৩৫ শতাংশ। একদিনে রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। এর মধ্যে কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনায় ২ জন করে করোনার বলি হয়েছেন।
হাওড়া, হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় মৃত্যু হয়েছে ১ জন করে। উত্তর ২৪ পরগনাতেও ফের আক্রান্ত বেড়েছে। নতুন করে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১০২ জন। হাওড়ায় ৫৮ জন। এরপরই হুগলিতে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৪১।
মঙ্গলবার সকালেই খবর এসেছে বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং তৃণমূল নেতা লুইজিনহো ফেলেইরো কোভিড পজিটিভ। এদিন সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন প্রকাশ হতেই বোঝা গেল সত্যি ফের মাথা চাড়া দিচ্ছে বিপদ। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ সামলে ধীরে ধীরে বাংলা ছন্দে ফিরলেও আবার নতুন করে বিপদের ভ্রুকুটি। মঙ্গলবার যা রিপোর্ট এল, এরপর গা আলগা দিলে ভেসে যেতে হতে পারে বলে মন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
চিকিৎসক শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “কোভিডের যে ক’টা ভ্যারিয়েন্ট আমরা জানতাম ওমিক্রন সবথেকে বেশি সংক্রমণ ক্ষমতা রাখে। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সে শিক্ষা পাওয়া গিয়েছে। একইসঙ্গে ওমিক্রনের সিভিয়ারিটি ডেল্টা প্লাসের থেকে এখনও কম। কিন্তু ওমিক্রন ছড়াতে শুরু করলে তার মধ্যে নতুন মিউটেশন হয়ে তা বিপদজনক হবে কি না সেটা কিন্তু এখনও বোঝা যাচ্ছে না। সাধারণত অতিমারির ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে একটা ভাইরাসের যতদিন গিয়েছে খারাপ করার ক্ষমতা কমেছে। সেটাই আমাদের আশা এবং বিশ্বাস, এরও হয়ত সেই ক্ষতিকর দিকটা ফিকে হবে। ওমিক্রনে ডেল্টা প্লাসের মতো অত মানুষ হয়তো অসুস্থ হবেন না বা মারা যাবেন না।”
একই সঙ্গে শ্যামাশিসবাবুর ব্যাখ্যা, “দেশে যদি ১০০ কোটি লোক থাকে, ডেল্টা প্লাসের ক্ষেত্রে হয়ত ১০০ জনের মধ্যে ৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, ওমিক্রনে সেটা একজন হচ্ছেন। কিন্তু ওমিক্রনের সংক্রমণের ক্ষমতা বেশি হওয়া মানে আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি হবে। তাতে হাসপাতালের উপর চাপ কিন্তু মোটেই খুব একটা কম হবে না।” তাই ওমিক্রনে বিপদের ভার কম ভেবে কম গুরুত্ব দিলে তা কিন্তু মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “চিকিৎসকরা ভয় দেখাচ্ছেন, সংবাদমাধ্যম ভয় দেখাচ্ছে, এটা একটা বিজনেস এই ধারনা নিয়ে বসে থাকলে কিন্তু কোনও বর্মই কাজ করবে না। এপ্রিলেও একই কথা শোনা গিয়েছিল। অথচ সেই সময় ডেল্টা প্লাসে কারও ঘরের লোক অসুস্থ হয়েছেন, কেউ প্রাণ দিয়ে প্রমাণ দিয়েছেন কেউ ভয় দেখাচ্ছে না। এটা বাস্তব, কিন্তু সমাজ তা বুঝতে চায়নি।”
আরও পড়ুন: Child vaccination: স্কুলে স্কুলেই কি তবে সোমবার থেকে টিকাকরণ? কী বলছে নবান্ন