কলকাতা: অজানা জ্বর (Unknown Fever) নিয়ে রাজ্য জুড়ে তৈরি হয়েছে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি। গত ১০-১২ দিন ধরে জলপাইগুড়ি থেকে শুর করে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় এই জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে কয়েক’শ শিশু। ৬ জনের মৃত্যুও হয়েছে বলে খবর। বেশ কয়েকদিন কেটে গেলেও স্বাস্থ্য দফতরের (Health Department) তরফে কোনও কমিটি কেন গঠন করা হয়নি, তা নিয়েও উঠেছিল প্রশ্ন। এবার স্বাস্থ্য সচিব (Health Secretary) নারায়ণ স্বরূপ নিগম দাবি করলেন অজানা জ্বরে কারও মৃত্যু হয়নি। যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের অন্য রোগ ছিল বলে দাবি করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার এসএসকেএম স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে বৈঠক শেষে এমনটাই দাবি করেছেন তিনি। স্বাস্থ্য সচিব জানিয়েছেন, এই বিষয়ে বিশদে রিপোর্ট দেবে স্বাস্থ্য ভবন।
এ দিন এসএসকেএমে বৈঠক শেষে স্বাস্থ্য সচিব বলেন, ‘অজানা জ্বরে মারা যাওয়ার কোনও ঘটনা নেই।’ একই দাবি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। তিনি দাবি করেন, শিশুদের এই জ্বরের প্রকোপ অজানা কিছু নয়। ইনফ্লুয়েঞ্জা বি ও আরএস ভাইরাসের জন্যই এই জ্বর হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। মৃত শিশুদের অন্যান্য অসুখ ছিল বলেও দাবি করেছেন তিনি। তবে এই জ্বর নিয়ে এ দিনের বৈঠকে কোনও ও আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সচিব। তিনি জানান, এই বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক আরও স্পষ্ট তথ্য জানাবেন।
এ দিকে, এই অজানা জ্বর নিয়ে ইতিমধ্যেই সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন বিরোধীরা। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ইতিমধ্যেই এই ইস্যুতে চিঠি লিখেছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্যকে। তাঁর অভিযোগ, ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোনও গুরুত্ব নেই এই বিষয়ে। তারা ভবানীপুর উপনির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত।’ শুভেন্দু মনে করছেন, এই জ্বরের বিষয়টি সামনে এলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে, কারণ তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীও বটে। আর তার প্রভাব পড়বে ভবানীপুর উপ নির্বাচনে। তাই অবিলম্বে কেন্দ্র থেকে বিশেষজ্ঞদের টিম পাঠানোর আর্জি জানিয়েছেন তিনি। অন্য দিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করার অভিযোগ এনেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছুই স্বীকার করেন না অথচ শ্মশানে চিতা জ্বলে।
বিভিন্ন জেলায় স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। উত্তরবঙ্গে বেশিরভাগ হাসপাতালে বেডের অভাবে ঠাঁই হচ্ছে না শিশুদের। করোনার র তৃতীয় ঢেউয়ের বাচ্চাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। রাজ্য জানিয়েছিল সেইমতো পরিকাঠামো গড়ে তারা তৈরি। কিন্তু গত এক সপ্তাহে অজানা জ্বরে যে ভাবে রাজ্যে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে, এবং হাসপাতালে জায়গা হচ্ছে না, তার প্রেক্ষিতে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে। বেশ কয়েকদিন কেটে গেলেও স্বাস্থ্য ভবনের তরফে কোনও কমিটিও গঠন করা হয়নি। সংবাদমাধ্যমেবিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য দফতর। গতকাল, ৮ সদস্যের কমিটি গঠন করে পুরো বিষয়টাতে নজরদারি চালানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন: WB Fever: দশ রকমের জ্বর কাঁপুনি ধরাচ্ছে বাংলায়, কী লক্ষণ, কী করবেন জেনে নিন