সুপ্রিয় গুহ: কিডনিতে স্টোন হয়েছে। অস্ত্রোপচার করতে হবে। তাই স্থানীয় চিকিৎসকদের পরামর্শে এসএসকেএম হাসপাতালে এসেছিলেন উত্তরবঙ্গের প্রান্তিক এলাকার বাসিন্দা সারথী দাস (৪৭)। সঙ্গে ছিল তাঁর ছেলে। কিন্তু তারপরে এক এক করে তিন মাস কেটে গিয়েছে। হাসপাতাল চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু অস্ত্রোপচার হয়নি। রাজ্যের অন্যতম মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভোগান্তির মুখোমুখি সারথীদেবী। ঘর-বাড়ি ছেড়ে এখন হাসপাতালের ফুটপাথেই সংসার পেতেছেন মা-ছেলে।
সারথীর ছেলে প্রসেনজিৎ দাস বলেন, “একে ঠান্ডা, তার ওপর মা যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছে। বার বার চিকিৎসকদের অনুরোধ করেছি। কিন্তু বেড না থাকায় ভর্তি নেয়নি। ভর্তির জন্য কিছুদিন পর পর সময় দেওয়া হলেও এখনও তা হয়নি। সব মিলিয়ে শেষ তিন মাসে প্রায় ৬০ দিন হাসপাতলে দিন কাটিয়েছি।”
টাকার টান পড়ায় গত তিনমাসে ৮-৯ বার কলকাতা থেকে বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে। কখনও পরিচিতদের থেকে ধার করে, আবার কখনও পাড়ার সকলের সহযোগিতায় তুলে দেওয়া টাকা নিয়ে, তো কখনও আবার বাড়ির নিমগাছ বিক্রি করে টাকা জোগাড় হয়েছে। সেই টাকা নিয়ে আবার ভর্তির আশায় কলকাতায় ফিরে এসেছেন। কিন্তু প্রতিবারই তাঁদের শুনতে হচ্ছে ‘বেড নেই’।
সারথী বলেন, কালিপুজোর সময় একটানা দেড় মাস হাসপাতলের ভিতরে ফুটপাথে দিন কাটিয়েছেন। আবার জানুয়ারির ৭ তারিখে কলকাতায় এসেছিলাম। কিন্তু ভর্তি হতে পারিনি। তাই দু’দিন পরে ফিরে যাই।” এরপর ফের ২১ জানুয়ারি কলকাতায় এসেছেন দু’জনে। ২২ জানুয়ারি ভর্তির দিন দেওয়ায় হয়েছিল। বেড না থাকায় ২৯ জানুয়ারি যোগাযোগ করতে বলা হয়। তবে এবারেও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। ভর্তি সম্ভব নয় বলে জানানো হয় হাসপাতালের তরফে। ফলে দু-সপ্তাহ পরে ফের আসার জন্য চিকিৎসকদের তরফে জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে ১০ দিন হয়ে গেল হাসপাতালের ফুটপাতে দিন কাটছে। এই পরিস্থিতিতে বাড়ি ফেরা মানেই আবার ঝক্কি। টাকা পয়সাও শেষ। কী করবেন কিছুই বুঝতে পারছেনা মা ও ছেলে।
আরও পড়ুন: তৃণমূলের অনেকেই বলেছে, পার্টিটা ছাড়তে: রাজধানীমুখী রুদ্র
স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে সারথী দাসের সংসার। স্বামী প্যান্ডেল বাধার কাজ করেন। সেই আয়ের উপরেই নির্ভর করে সংসার চলত। কিন্তু লকডাউনে উৎসব, অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞার কারণে কাজ ছিল না। কোনও রকমে সংসার চলছিল। নিউ নরম্যালে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় আবার কাজ শুরু হয়েছে স্বামীর। ফলে স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে আর হাসপাতালে পড়ে থাকতে পারছেন না। আর থাকলে চিকিৎসার খরচই বা উঠবে কী করে! তাই বড় ছেলে প্রসেনজিৎ দাস এখন পড়াশুনা ছেড়ে মাকে সুস্থ করে তোলার আশায় হাসপাতলের ফুটপাথে দিন কাটাচ্ছেন। অপারেশনের জন্য হাসপাতালে কবে ভর্তি হতে পারবেন সারথী দাস, সেই উত্তর এখনো অজানা।
আরও পড়ুন: না থেকেও ডুমুরজলার সভায় থাকছেন অমিত শাহ!