SSC Candidate Soma Das : ‘মৃত্যুর দোরগোড়ায় পৌঁছেও হাল ছাড়িনি…’, অন্য জীবনের কথা লিখলেন ক্যানসার আক্রান্ত SSC প্রার্থী সোমা

TV9 Bangla Digital | Edited By: সঞ্জয় পাইকার

Apr 18, 2022 | 9:28 PM

SSC candidate Soma Das : "বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর করার পর ঠিক করে নিই শিক্ষকতাই করব। এটাই ছিল আমার স্বপ্ন। পড়াশোনায় ভাল ছিলাম। তাই চাকরির পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করতে হবে বলে জীবনের সবটুকু দিয়েছিলাম। কিন্তু বাধ সাধল এসএসসি পরীক্ষার দুর্নীতি।"

SSC Candidate Soma Das : মৃত্যুর দোরগোড়ায় পৌঁছেও হাল ছাড়িনি..., অন্য জীবনের কথা লিখলেন ক্যানসার আক্রান্ত SSC প্রার্থী সোমা
ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই, স্বপ্ন পূরণের লড়াই নিয়ে টিভি নাইন বাংলা ডিজিটালে কলম ধরলেন সোমা দাস

Follow Us

চাকরির দাবিতে দিনের পর দিন আন্দোলন করে চলেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। হাইকোর্টে মামলা চলছে। আর মামলার শুনানি যত এগোচ্ছে, একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসছে। আর এই আন্দোলনে সামিল এক তরুণীর লড়াই নজর কেড়েছে সবার। ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইয়ের পাশাপাশি সামিল হয়েছেন আন্দোলনে । তাঁর কথা জানতে পেরে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানতে চেয়েছিলেন, অন্য কোনও সরকারি চাকরি করতে চান কি না? সসম্মানে বিচারপতির সেই অফার ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। কারণ, শিক্ষিকা হওয়াই তাঁর স্বপ্ন। তিনি বীরভূমের নলহাটির সোমা দাস। ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই, স্বপ্ন পূরণের লড়াই নিয়ে কলম ধরলেন টিভি নাইন বাংলা ডিজিটালে…

 

মাননীয় বিচারপতির অফার সসম্মানে ফিরিয়ে দিতে পেরেছি। তাতে শুধু আমি নই, বাড়ির লোকও খুশি। আমার এই সিদ্ধান্তকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন আমার মা। ওনার শিক্ষায় শিক্ষিত যে। মা বারবার বলেন, সবার ভালর মধ্যেই নিজের ভাল খুঁজো। সে দিন আমি সেটাই করেছি।

বীরভূমে নলহাটিতে বাড়ি। নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি। বাড়িতে মা, বাবা ও ভাই আছে। ভাই বেকার। মা আইসিডিএস কর্মী। তাঁর উপার্জনেই সংসারটা চলে আমাদের। এভাবেই চারটি মানুষের কোনওক্রমে দিনযাপনের মধ্যেই বড় বিপর্যয় নেমে আসে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ব্লাড ক্যানসার ধরে পড়ে আমার। মাথায় আকাশটাই যেন ভেঙে পড়েছিল সে দিন।

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর করার পর ঠিক করে নিই শিক্ষকতাই করব। এটাই ছিল আমার স্বপ্ন। পড়াশোনায় ভাল ছিলাম। তাই চাকরির পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করতে হবে বলে জীবনের সবটুকু দিয়েছিলাম। কিন্তু বাধ সাধল এসএসসি পরীক্ষার দুর্নীতি।

প্রথম কেমো নিই মার্চে। সল্টলেকে যখন চাকরিপ্রার্থীরা আন্দোলন করছেন, আমি তখন মুম্বইয়ে কেমো নিচ্ছি। ক্যানসারের বিরুদ্ধে তখন আমার অপ্রতিরোধ্য লড়াই। সেখান থেকে চাকরিপ্রার্থী দাদাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ওঁরা বলেন, তুমি তোমার লড়াই চালিয়ে যাও। তোমার হয়ে আমরা এখানে লড়াই চালাচ্ছি। তখন থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এই লড়াইয়ের সঙ্গে জুড়ে যাই আমি।

আন্দোলনে সামিল সোমা দাস

দুর্নীতিতে ভরে গিয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা। স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ছাত্ররাই রাস্তায় নামছে শিক্ষকের দাবিতে। আমার প্রশ্ন, তাহলে নিয়োগ করতে বাধা কোথায়? বৃহত্তর অব্যবস্থার দিকে যাচ্ছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা। জনগণও প্রতিবাদে সোচ্চার হচ্ছেন। শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাঁচানোর জন্য সবার মধ্যে যে চেতনা জেগেছে, এটা আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়।

প্রথম থেকেই আন্দোলনে নানা ভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে। পুলিশি অত্যাচার হয়েছে। মঞ্চ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। একাধিক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কখনও মুখ্যমন্ত্রী, কখনও শিক্ষামন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু কোনও কাজই হয়নি। উপরন্তু নির্বিচারে অত্যাচার করা হয়েছে আমার সহযোদ্ধাদের উপর। কারোর বিরুদ্ধে ৬-৭টি মামলা হয়েছে। তাই, সবার পরিশ্রমের ফল আমি একা ভোগ করতে পারি না। আমার শিক্ষা, আমায় সেই অধিকার দেয় না।

চাকরির দাবিতে আন্দোলন

এখন আমার শরীর একটু ভাল আছে। ইতিমধ্যেই দুটো সাইকেলে কেমো হয়েছে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কেমো দিলেও ট্রান্সপ্ল্যান্ট না হওয়া পর্যন্ত ভয় থেকে যাচ্ছে। সে সময় ট্রান্সপ্ল্যান্টের খরচ দেওয়া হয়েছিল ১২ লক্ষ টাকা। পারিনি। ট্রান্সপ্ল্যান্টের সময়ও পেরিয়ে গিয়েছে। দেখুন, এই লড়াই তো শুধু আমার একার। আর চাকরির লড়াই সবার। একসঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে নিজের লড়াইয়ে মনোবল পেয়েছি ভীষণরকম। মৃত্যুর দোরগোড়ায় পৌঁছেও তাই হাল ছাড়িনি। সত্যি বলছি।

আরও পড়ুন : SSC Recruitment Case: ক্যান্সার আক্রান্ত সোমা দাসকে কি সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ করা যায়? বিবেচনা করে দেখার নির্দেশ হাইকোর্টের

Next Article