কলকাতা: ঠিক এক বছর আগের কথা। ২০২২ সালের সেই দিনটা সম্ভবত কখনও ভুলতে পারবেন না স্কারলেট জোহানসন- হলিউডের নামজাদা অভিনেত্রী। বাথটবে তাঁর জলকেলি করার ছবি ভাইরাল হয়েছে। দেখে আঁতকে উঠেছিলেন। বুঝতে পারেননি, তার নামে যে ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, সেই মহিলা আসলে কে? পরে সাংবাদিকদের বলেন, আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমার নামে যাঁকে চালানো হয়েছে, সেই মহিলা কে? আমার কোনও যমজ বোন, যার কথা আমি জানিই না। আসলে হলিউড অভিনেত্রীর ছবি ডিপফেক করে ভাইরাল করা হয়েছিল। মানে স্কারলেটের শুধু মুখ নয়, তাঁর হাঁটা-চলার ধরন থেকে চলাফেরা এমনকি কাঁধ ঝাঁকানোও কপি করে অন্য মহিলার শরীরে বসানো হয়েছিল। এই ডিপফেক জিনিসটা যে কী, এবার মালুম পেলেন রশ্মিকা মান্দানা। দক্ষিণী সেলিব্রেটি, বর্তমানে বলিউডেও বেশ জনপ্রিয়। তাঁর যে ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, সেখানে খোলামেলা পোশাকে লিফট থেকে বেরোতে দেখা যায় তাঁকে। চেহারার গড়ন দেখে রশ্মিকার ফ্যানেদের বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে সেটা জাল ভিডিয়ো। তবু তার মধ্যেই যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে।
বাড়ছে উদ্বেগ
তথ্য বলছে, সোমবার সকাল থেকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ১ কোটি ১০ লক্ষের বেশি ডাউনলোড ও শেয়ার করা হয়েছে রশ্মিকার ভুয়ো ভিডিয়ো। এক আইটি প্রফেশনাল বলছেন, রশ্মিকার ভিডিয়োটা ৮৩ শতাংশ মর্ফড। শুধু মুখটুকু নিয়ে অন্য মহিলার ছবি জুড়ে ভিডিয়োটি তৈরি হয়েছে। ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অমিতাভ বচ্চন। বিগ বি লেখেন, এসব ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা হওয়া দরকার। ঘটনায় এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে হায়দরাবাদ সাইবার পুলিশ। আর রশ্মিকা? তিনি এখনও আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারেননি। টুইটারে রশ্মিকা লিখেছেন, ভয়ঙ্কর ব্যাপার। যে ভাবে প্রযুক্তির অপপ্রয়োগ হচ্ছে, তাতে হয়ত আমাদের সবারই আতঙ্কে থাকার কথা। আসলে এই ডিপ-ফেক, ডি-পিক বা ডি এফেক্টস – এসবের মানেটা আমরা ভেবে দেখেছি কখনও? এরপর তো আমার – আপনার এমন কোনও ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়বে, যাতে হয়ত দেখা যাবে আমরা কোনও অপরাধমূলক কাজ করছি। বা হয়ত সম্মানহানিকর কিছু ভিডিয়ো ছড়িয়ে দেওয়া হবে। আমরা সেলিব্রিটি নই বলে এসব কিছুই হবে না, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই।
পরিসংখ্যান বলছে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্সের হাত ধরে চলা ডিপফেকে প্রতারণার শিকার কিন্তু আমাদের মতো সাধারণ মানুষরাই। সেটা আমেরিকাতেও সত্যি, ভারতেও সত্যি। একইসঙ্গে ডিপফেক মানে কিন্তু শুধু ছবির কারিকুরি করে প্রতারণা নয়, আসলে ডিপফেকের দুনিয়া অনেক, অনেক ভয়াবহ। আপনার, আমার বাঁচা-মরা এমনকি চলাফেরা বদলে যেতে পারে ডিপফেকের কারসাজিতে।
কত ভয়ের কারণ হতে পারে ডিপফেকিং?
এক সাইবার ক্রাইম এক্সপার্টে পুলিশের কাছ থেকে যা জেনেছিলেন তাতে চোখ কপালে উঠে যেতে পারে যে কারও। এদেশের এক ভদ্রলোক আননোন নম্বর থেকে একটা ফোন পান। ফোন তুলে শুনতে পেলেন ওপারে তাঁর আমেরিকাবাসী বন্ধুর গলা। বন্ধু বলল, একটা অন্য নম্বর থেকে ফোন করছে। ভারতে তার এক আত্মীয় বিপদে পড়েছেন। টেকনিক্যাল কারণে সে নিজে আমেরিকা থেকে টাকা পাঠাতে পারছে না। ওই ভদ্রলোক যদি অ্যাকাউন্টে অল্প কিছু টাকা পাঠিয়ে দেন তাহলে বড় সুবিধা হয়। গলা শুনে কোনও সন্দেহ হয়নি। তবুও আননোন নম্বর। আর চারদিকে এত জালিয়াতি হচ্ছে যে ভদ্রলোক কিন্তু কিন্তু করছিলেন। এবার বন্ধু বলল দাঁড়া। কল ব্রেক হচ্ছে। তোর কথা ভালমতো শোনা যাচ্ছে না। আমি তোকে ভিডিয়ো কল করছি। এবার ভিডিয়ো কলে ভদ্রলোক দেখলেন সত্যিই তো। তাঁর বন্ধুই তো ফোন করছে। তো ছবি দেখে আর গলা শুনে মনের সব সংশয় কেটে গেল। টাকা পাঠানোর জন্য ফোনের ওপার থেকে লিঙ্ক এল। সেই লিঙ্কে ক্লিক করার পরই ভদ্রলোক সর্বস্বান্ত হলেন। দেখলেন মুহূর্তের মধ্যে তাঁর নিজের অ্যাকাউন্ট ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। আসলে জালিয়াতরা বন্ধুর ছবি ও গলার আওয়াজ দুটোই ডিপফেকে তৈরি করেছিল। নেট দুনিয়ায় এরকমভাবেই ছড়িয়ে হাজারো প্রতারণার জাল। একচুলের জন্য অসতর্ক হলেই আপনি ডুববেন।