কলকাতা: অস্ত্রোপচারের সময় রোগীর শরীরে কৃত্রিম যন্ত্র বসানোর গরমিলের অভিযোগ নিয়ে সরগরম নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ওই হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের এক রোগীর জন্য একটি কৃত্রিম ডিস্ক সার্ভিক্যাল চেয়ে পাঠানো হয়েছিল ইক্যুইপমেন্ট স্টোরে। অস্ত্রোপচারের পরে যখন কৃত্রিম ডিস্ক সার্ভিক্যালের টাকা বাবদ বিল জমা পড়ে, তখন দেখা যায় একটি বদলে দু’টি কৃত্রিম ডিস্ক সার্ভিক্যাল ব্যবহার করা হয়েছে। একটি কৃত্রিম ডিস্ক সার্ভিক্যালের দাম এক লক্ষ টাকার বেশি। প্রশ্ন উঠেছে, এই ভাবে কৃত্রিম যন্ত্রের অপচয় করা হচ্ছে, না কি ইচ্ছাকৃত ভাবেই বেশি টাকার বিল জমা পড়ছে। আরও অভিযোগ, হোকলাল শেখ নামে ওই রোগীর অস্ত্রোপচার হয় ২৭ মে। কিন্তু ২৩ মে কী করে ওই কৃত্রিম যন্ত্রের ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট তৈরি হয়ে গেল। গরমিলের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এনআরএস কর্তৃপক্ষ।
হোফলাল শেখ নিউ সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এপ্রিল থেকে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। গত ২৭ মে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই রোগীর জন্য রিক্যুইজশন স্লিপ দেওয়া হয়েছিল, তাতে উল্লেখ ছিল এক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল সার্ভিক্যাল ডিস্ক বসাতে হবে। যে যন্ত্রের দাম হচ্ছে ৯৫ হাজার টাকা। জিএসটি নিয়ে ১ লক্ষ টাকা হবে। ‘রিক্যুইজিশন’ ছিল একটা। যে ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট অর্থাৎ যার ভিত্তিতে টাকা দেওয়া হবে, সেখানে দুটি যন্ত্রের কথা উল্লেখ করা রয়েছে। অর্থাৎ যে রোগীর জন্য একটি যন্ত্রের প্রয়োজন ছিল, সেই রোগীর ক্ষেত্রে বরাদ্দ হয়েছিল ২টি যন্ত্র। বিল হয়েছিল ২ লক্ষ টাকা।
উল্লেখ্য, যে কোনও রোগীর চিকিৎসার জন্য যদি কোনও দামী যন্ত্রের প্রয়োজন হয়, তাহলে সেটি মেডিক্যাল কলেজের ইক্যুইপমেন্ট স্টোরের মাধ্যমেই নিতে হয়। তার জন্য একটি রিক্যুইজিশন স্লিপ জমা দিতে হয়। সেখানে একটি যন্ত্রেরই উল্লেখ ছিল। কিন্তু যখন বিল জমা হয়, সেখানে দুটি যন্ত্র একই রোগীর জন্য বলা হচ্ছে। আরও উল্লেখ্য, ওই যন্ত্র একটাই ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে এই ঘটনা ঘটল? এই রোগী এপ্রিল থেকে ভর্তি ছিলেন। তাঁর রিক্যুইজিশন স্লিপ তৈরি হল ১৯ মে। তার ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট অর্থাৎ বিল তৈরি হল ২৩ মে। অপারেশন হয়েছে ২৭ মে। প্রশ্ন উঠছে, যে রোগীর ১৯ মে রিক্যুইজিশন জমা পড়ল, ২৩ তারিখ ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট তৈরি হয়ে গেল, ১৯-২৩ এর মধ্যেই তাঁর অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা। কিন্তু তাঁর অস্ত্রোপচার দেরিতে হল। প্রশ্ন যন্ত্রের অপচয় নাকি ইচ্ছাকৃত ঘটনা?
রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান চিকিৎসক শান্তনু সেন বলেন, “ওরা বলছে, যে ওটি করতে গিয়ে নাকি ওরা দেখেছে আরেকটা অপারেটর্স লাগবে, তাই সেটা ব্যবহার করেছে। তাও আমি ডেপুটি সুপার ম্যাডাম ও সুপার ম্যাডামকে বলেছি অবিলম্বে চিকিৎসক পার্থ সারথী দত্ত, যাঁর নেতৃত্বে চিকিৎসা হচ্ছিল, তাঁর সঙ্গে কথা বলতে। কারণ ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট ও ডেট অফ অপারেশনের মধ্যে একটা পার্থক্য রয়েছে। রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে এই ইস্যুটি উঠবে। পার্থ সারথী দত্তকেও আসতে বলেছি। কোথাও কোনও অন্যথা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”