কলকাতা : পরীক্ষা দিয়েছিলেন, প্যানেলে নামও উঠেছিল। কিন্তু বছরের পর বছর কেটে গেলেও চাকরি মেলেনি। এমন ভূরি ভূরি অভিযোগ রয়েছে এ রাজ্যে। মামলাও হয়েছে অনেক। সম্প্রতি সেই সব মামলার তদন্ত শুরু হতেই একে একে সামনে আসছে স্কুল সার্ভিস কমিশনের উচ্চপদস্থ কর্তাদের নাম। দুর্নীতির জাল কতদূর ছড়িয়েছিল, সেই রিপোর্ট সামনে আসতেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, কেলেঙ্কারির শিকড় অনেক গভীরে। যাঁরা যোগ্য, তাঁদের চাকরি মেলেনি বলেই অভিযোগ। আর রিপোর্টে দেখা গেল, এমন অনেকে চাকরি পেয়েছেন যাঁদের প্যানেলে নাম থাকা তো দূরের কথা, পরীক্ষাই দেননি তাঁরা। কী ভাবে সেই নিয়োগ হল? এর পিছনে কাদের মাথা ছিল? সেই সব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে বাগ কমিটির রিপোর্টে। শুক্রবার সেই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে আদালতে।
এসএসসি গ্রুপ সি নিয়োগে ২০১৭ সালের ১৮ মে প্যানেলের মেয়াদ ফুরিয়ে যায়। আর ৩৮১ জনকে একসঙ্গে নিয়োগ করা হয় ২০ মে। প্যানেলের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পর কেন নিয়োগ, তা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। প্যানেলে ছিল না ৩৮১ জনের নাম, নাম ছিল না ওয়েটিং লিস্টেও।
পরীক্ষায় যাঁরা পাশ করতেন তাঁদের নাম থাকত প্যানেলে। তাহলে কী ভাবে তার বাইরে নিয়োগ হল? রিপোর্টে দাবি, এসএসসি-র উপদেষ্টা কমিটির তৎকালীন সদস্য শান্তি প্রসাদ সিনহা, সৌমিত্র সরকাররাই পাল্টে দিতেন প্যানেল। বদলে যেত নাম। এরপর শান্তি প্রসাদই বানাতেন ভুয়ো সুপারিশ পত্র।
স্কুল সার্ভিস কমিশন সুপারিশ করার পর নিয়োগ করে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। তাই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে যায় ভুয়ো সুপারিশ পত্র। তাতেই সই করতেন কল্যাণময়। তারপর টেকনিক্যাল অফিসার রাজেশ লায়েককে সুপারিশ পত্র তৈরি করতে দেওয়া হত। সফট কপি, সিডি, ইমেল তৈরি করে করে রাখতেন তিনি। সেই সুপারিশ পত্রেই ছিল এই ৩৮১ জনের নাম।
যাঁরা পরীক্ষাই দেননি তাঁদের ইন্টারভিউ দেওয়ারও প্রশ্ন নেই। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। ৩৮১ জন-এর মধ্যে ২২১ জন পরীক্ষাই দেননি, বাকিরা পরীক্ষা দিলেও নাম ওঠেনি প্য়ানেলে। তাই তাঁরা সরাসরি কাউন্সেলিং-এ যান।
রিপোর্ট বলছে, প্যানেলে নিজের র্যাঙ্ক ছাড়া যাতে আর কারও র্যাঙ্ক দেখা না যায়, সেই ব্যবস্থা করেছিলেন শান্তি প্রসাদ।
ওএমআর শিট-এর মাধ্যমে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। সেই ওএমআর শিটের নম্বর কারও পক্ষে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। তাই ভুয়ো নিয়োগ করতে সেই শিট নষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি রিপোর্টে।
রিপোর্টে যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা করা সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি, পার্থ চট্টোপাধ্যায় যে কমিটি তৈরি করেছিলেন, তা বেআইনি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।