কলকাতা: আপাতত সালকিয়ার ছোট্ট মেয়ে থাকবে তার পালিতা মায়ের কাছেই। তবে সপ্তাহে তিন দিন তিন্নিকে নিয়ে যেতে হবে সিডাব্লিউসি-তে। সেখানে এক ঘণ্টার জন্য বাবার সঙ্গে কথা বলবে মেয়ে। এদিন রিপোর্ট জমা পড়ার পরেও সিডাব্লিউসি-র সদস্যদের চেম্বারে ডেকে নিয়ে প্রায় ৪৫ মিনিট কথা বলেন বিচারপতিরা। শেষ পর্যন্ত আগামী ৫ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত এই নির্দেশ বলবৎ থাকবে বলে জানায় আদালত।
এর আগে বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে শিশু সুরক্ষা কমিশন ডেকে পাঠায় সাড়ে চার বছরের ছোট্ট শিশুকে। সেখানে মায়ের কথা বলে সে। ইতিমধ্যে হঠাৎ বাবা সেখানে এলে সেখানে অঝোরে কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। কথা না বলতে পেরে তাকে বাড়িতে অয়াঠিয়ে দেয় কমিশন কর্তারা। এর পর এদিন আদালতে রিপোর্ট দেয় কমিশন।
জন্মেই বাবাকে দেখেনি সে। যখন চারমাস বয়স, বাবা ছেড়ে চলে যান। বোধ হওয়ার আগেই সাতমাস বয়সেই আত্মহত্যা করেন মা। তারপর দিদার কাছে কিছুদিনের আশ্রয় খুঁজে নিয়েছিল একরত্তি মেয়েটা। কিন্তু, কোথায় কী! বিধি বাম তার! মা-মরা মেয়েটার সেই আশ্রয়টাও চলে গেল। আত্মঘাতী হলেন দিদাও। ওইটুকু মেয়ে যাবে কোথায়! নিজের মনে করে কোলে তুলে নিয়েছিলেন জুলি রায়। বড়ও করেছেন ওই একরত্তি একেবারে নিজের মেয়ের মতোই।
কিন্তু, আচমকাই মেয়ের জন্মদাতা বাবা মাঝে এসে পড়েন। হাইকোর্টে মামলা করে নিজের মেয়েকে ফেরত চান তিনি। । আগেও এমন আইনি লড়াই হয়েছে। তখন হাওড়া আদালত রায় দিয়েছিল, মেয়ে ১৫ বছর বয়স অবধি তার দিদার কাছে থাকবে। তারপর, সে নিজে নির্বাচন করবে সে কার সঙ্গে আদপে থাকতে চায়। এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু, জন্মদাতা বাবার মন ভরেনি। আপিল করেন হাইকোর্টে।
হাইকোর্টের বাদী-বিবাদী পক্ষের উভয় আইনজীবীও জানিয়েছেন, মা-বাবাদের এমন আইন লড়াইয়ে কার্যত মনোকষ্টে ভোগে শিশুরা। আইনি এই টানাপোড়েন সর্বাধিক প্রভাব ফেলে শিশুদের মনে। ফলে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয় শিশুদের। মেয়েটির জন্মদাতা বাবা দাবি করেন, তিনি অত্যন্ত বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন। তাঁর জীবনযাপনের সঙ্গে তাঁর সন্তানের বর্তমান পরিস্থিতি খাপ খায় না। তিনি মেয়েকে আরও বড় স্কুলে পড়াতে চান। সন্তানের ভবিষ্যত্ সুনিশ্চিত করতে চান। যদিও জন্মদাতা বাবার এই আবেদন কার্যত খারিজ করে দেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী।
বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, আপাতত ওই একরত্তি মেয়েটা থাকবে তার পালক মা-বাবার কাছেই। সপ্তাহান্তে আদালতে আইনজীবীদের সামনে তাকে তার বাবার কাছে পাঠানো হবে।
বৃহস্পতিবারের শুনানিতে আদালত স্পষ্ট করে দেয়, আপাতত সালকিয়ার ছোট্ট মেয়ে থাকবে তার পালিতা মায়ের কাছেই। তবে সপ্তাহে তিন দিন তিন্নিকে নিয়ে যেতে হবে সিডাব্লিউসি-তে। সেখানে এক ঘণ্টার জন্য বাবার সঙ্গে কথা বলবে মেয়ে। আগামী ৫ জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি।