কলকাতা : শহরের একাধিক হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তবে কলকাতার নীলরতন সরকার হাসপাতালে এত বেশি চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন যে পরিষেবা কী ভাবে চালু রাখা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পরিসংখ্যান বলছে, এনআরএসে একদিনে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৯৮ জন। এর মধ্যে চিকিৎসক, নার্স, পিজিটি ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যাই প্রায় ১০০।
করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এনআরএসের অধ্যক্ষ শৈবাল মুখোপাধ্য়ায়ও। এত বেশি চিকিৎসক আক্রান্ত হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই রোগী পরিষেবা নিয়ে সঙ্কট তৈরি হয়েছে। কী ভাবে হাসপাতাল চালু রাখা হবে, তা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জানা গিয়েছে, আপাতত আউটডোর বা বহির্বিভাগের পরিষেবায় কিছু কাটছাট করা হবে। এমার্জেন্সি বা অন্য়ান্য বিভাগের পরিষেবা চালু রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বর্তমানে যে প্রোটোকল রয়েছে, তাতে ১৪ দিনের আগে আইসোলেশনের মেয়াদ শেষ হয় না। এ ক্ষেত্রে, শুধু ১০০ জনই নয়, এর আগে আরও অনেকে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এই হাসপাতালে। ফলে, প্রত্যেককে আইসোলেশনে পাঠানো হলে, স্বাভাবিকভাবেই পরিষেবায় ব্যহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়ে যাচ্ছে। অন্যান্য হাসপাতালেও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে অন্য জায়গা থেকে চিকিৎসক এনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়াও সম্ভন নয়।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. কাজলকৃষ্ণ বণিক বলেন, ‘প্রত্যেক হাসপাতালেই গত কয়েকদিন ধরে করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন চিকিৎসকেরা। আর এটাই সবথেকে বড় উদ্বেগের বিষয়। আমরা যদি সবাই দায়িত্বশীল হই, তাহলে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।’ নাহলে রোগীদের পরিষেবা দেওয়াই কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করেন তিনি।
অনির্বান দলুই জানান, এই পরিস্থিতিতে টেলিমেডিসিনের ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘অনেকের বোঝার ভুল হচ্ছে। সবাই ভাবছেন এটা একটা সাধারণ স্ট্রেন, এতে গুরুতর রোগ হবে না। কিন্তু বুঝতে পারছেন না যে ভারতে সংক্রমণের হার না কমলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর চাপ পড়বে।’ তাই প্রত্যেকে যাতে করোনা বিধি মেনে চলেন, সেই বার্তা দেন তিনি।
গত কয়েকদিন ধরে শহরের একাধিক হাসপাতাল থেকেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছে। চিত্তরঞ্জন শিশু হাসপাতালেও পরিষেবায় প্রভাব পড়েছে। সব পরিষেবা চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত যে হিসেব এসেছে, তাতে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে আক্রান্ত ২৫ জন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ৭২ ঘণ্টায় চিকিৎসক-জুনিয়র চিকিৎসক-চিকিৎসক পড়ুয়া মিলিয়ে ৮০ জন কোভিড পজিটিভ হয়েছেন। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে তিন দিনে কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন চিকিৎসক-সহ ৯৩ জন। চিত্তরঞ্জন সেবা সদন, আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ, উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালেও আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে।
আরও পড়ুন : Kolkata Safe Home: কলকাতায় কোভিড ‘সুনামি’, আবারও শহরে চালু ৩টি সেফ হোম