কলকাতা: দেড় বছরের থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ তারই দাদু ও কাকার বিরুদ্ধে। ঘৃণ্য, নৃশংস, নক্কারজনক ঘটনাটি ঘটেছে বেহালার পর্ণশ্রীতে। মেডিক্যাল টেস্টে শিশুটির ওপর যৌন নিগ্রহের প্রমাণ মিলেছে। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন শিশুটির মা। এখনও বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছেন অভিযুক্তরা।
ভালোবেসেই পর্ণশ্রীর ওই যুবককে ২০১৯ সালে বিয়ে করেছিলেন বছর পঁচিশের ওই তরুণী। শিশুটির মায়ের বয়ান অনুযায়ী, বিয়ের সময়েই তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে ব্লাড টেস্টের কথা বলা হয়। কিন্তু পাত্রের পরিবারের পক্ষ থেকে তাতে আর রাজি হয়নি। বিয়ের পর থেকে সব ঠিকই ছিল। ২০২০ সালে কন্যা সন্তাুন হয় তাঁদের।
নিগৃহীতার অভিযোগ, কন্যা সন্তান হওয়ায় তাঁর শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা বিষয়টি ভালোভাবে নেননি। এরপর শিশুটি কিছু দিন পর অসুস্থ হয়ে পড়ে। চিকিৎসকদের কাছে নিয়ে গেলে বিভিন্ন পরীক্ষা করানো হয়। তাতে ধরা পড়ে শিশুটি থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। তার ক্যারিয়ার বাবা এবং মা।
অভিযোগ, এরপর থেকেই শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের অত্যাচার শুরু হয়। একবার শিশুকে তার বাবা ছাদ থেকে ছুড়ে ফেলে দেওয়ারও চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। সে সময় মেয়েকে নিয়ে বাপেরবাড়ি চলে আসেন ওই তরুণী। পরে তাঁকে বুঝিয়ে ফের নিয়ে যাওয়া হয়। শ্বশুরবাড়িতে ঘরের বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন তরুণী।
তরুণীয় বয়ান অনুযায়ী, একদিন তিনি তাঁর মেয়েকে দেওরের কাছে রেখে কাজ করছিলেন। তখন মেয়ের প্রচণ্ড কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়ে ছুটে আসেন। তখন সন্দেহ হয় তাঁর। পরে ফের এক দাদুর রাখে রেখেও সেই একই অভিজ্ঞতার শিকার হন তিনি। সন্দেহ হয় তরুণীর। মেয়েক কেন এমনভাবে কাঁদছে, তা দেখার জন্য পরীক্ষা করেন। একদিন ফাঁকা ঘরে দাদু ও কাকার কাছে রেখে লুকিয়ে থাকেন তিনি। মেয়েকে যৌন নির্যাতনের শিকার হতে তিনি দেখেছেন বলে দাবি।
গোটা বিষয়টি তিনি তাঁর স্বামী ও শাশুড়িকে জানান। অত্যাচারের মাত্রা বাড়ে দ্বিগুণ। অভিযোগ, তাঁর স্বামী এরপর থেকে তাঁকে বেপরোয়া মারধর শুরু করেন। কোনওক্রমে মেয়েকে নিয়ে বাপেরবাড়ি চলে আসেন ওই তরুণী। এরপর ঠাকুরপুকুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। শিশুটির শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়। তাতে নির্যাতনের প্রমাণ মেলে। থানায় অভিযোগ করা সত্ত্বেও অভিযুক্তরা এখনও অধরা। শ্বশুরবাড়ির পরিবারের সদস্যদের শান্তি চাইছেন তরুণী।
শিশুটির মায়ের কথায়, “আমার শ্বশুর ও দেওর মেয়েকে মলেস্ট করে। প্রাইভেট পার্ট চেপে ধরে রাখত। আমি এগুলো দেখেছি। তখন ওর বয়স ৬-৭ মাস। আমি স্বামী, শাশুড়িকে জানাই। আমার বর, শ্বশুর. শাশুড়ি, দেওর আমাকে মারধর করত।”
শিশুটির মা প্রোটেকশন অফ চাইল্ড অ্যাক্টে মামলা দায়ের করেছেন। তবে এই ঘটনার পরই অভিযুক্তদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন TV9বাংলার প্রতিনিধি। একবারও ফোন তোলেননি তাঁরা। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত চলছে। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চায়নি পুলিশও। ছোট্ট মেয়েকে কোলে নিয়ে বিচারের আশায় ওই তরুণী। তবে পুলিশ একটা বিষয় নিশ্চিত হতে চাইছে। নিগৃহীতা তরুণী দীর্ঘদিন ধরেই অত্যাচারের শিকার। কিন্তু মেয়ের ওপর অত্যাচার সহ্য করতে পারেননি তিনি। শেষমেশ প্রশাসনের দ্বারস্থ হন।
আরও পড়ুন: Post Poll Violence: অভিজিৎ ‘খুনে’ তৎপর সিবিআই, গোপন জবানবন্দি নেওয়া হবে দাদার