পার্থ-অর্পিতার সম্পত্তির শেষ কোথায়? এটাই বোধ হয় সবথেকে বড় প্রশ্ন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের কাছে। গ্রেফতার করার পর ৫৬ দিন কেটে গিয়েছে, এখনও নতুন সম্পত্তি, নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশ পাচ্ছে ইডি। তারপরও প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, তাঁর বাড়ি থেকে তো কিছু পাওয়া যায়নি। আর যে যাঁর বাড়ি থেকে উদ্ধার হল টাকার পাহাড়, সেই অর্পিতার দাবি, তিনি জানতেনই না! কোথা থেকে টাকা এল, তা নিয়ে নাকি কোনও ‘আইডিয়া’ নেই তাঁর। ঠিক কী হল এ দিন আদালত কক্ষে?
বিচারক : আপনি কি জামিন চাইছেন?
অর্পিতা: আমি জানি না, আইনজীবীরা বলবেন।
বিচারক: টাকার ব্যাপারে কিছু জানা আছে?
অর্পিতা: জানি না স্যর। ৪ ঘণ্টা বাথরুমে ছিলাম। তারপরে বেডরুমে ছিলাম সে দিন।
বিচারক: টাকাটা কোথা থেকে পাওয়া গেল?
অর্পিতা: জানি না স্যর! স্যর আমার আইডিয়া নেই কী করে এল!
বিচারক: আপনি বাড়ির মালিক তো?
অর্পিতা: হ্যাঁ আমি মালিক।
বিচারক: আপনি মালিক, অথচ জানেন না, এটা তো আয়রনি! মালিক হিসেবে আপনার তো জানা উচিত।
অর্পিতা: আমি সাধারণ মানুষ। আমার বাড়িতে তো ইডি-র যাওয়ার কথা নয়।
বিচারক: এরকম কোনও আইন নেই। আইনে আছে, ইডি যে কোনও জায়গায় যেতে পারে।
অর্পিতা: আমি সাধারণ পরিবারের মেয়ে। বাবা নেই, মা আছেন। মায়ের ৭৫ বছর বয়স। মা অসুস্থ।
বিচারক: আপনি মায়ের অসুস্থতার কথা বলছেন। অপনি কি মায়ের কাছে থাকতেন?
অর্পিতা: না থাকতাম না, আমার কেরিয়ার এন্টারটেনমেন্টের সঙ্গে যুক্ত। তার জন্য দক্ষিণ কলকাতায় থাকতাম।
বিচারক: আপনার কী ব্যবসা ছিল?
অর্পিতা: আমার ‘ইচ্ছে এন্টারটেইনমেন্ট’ নামে একটা কোম্পানি আছে।
পার্থ: আমি জানি না ১০০ কোটি টাকার কথা কী করে বলছে?
পার্থ: আমি ইকনমিক্সে অনার্স, পিএইচডি। স্কলারশিপ পেয়েছিলাম। দীর্ঘদিন মন্ত্রী ছিলাম। তার আগে বিরোধী দলনেতা ছিলাম। কেউ আমার সম্পর্কে এরকম অভিযোগ করেনি।
পার্থ: আমিও আইনজীবী। এলএলবি ডিগ্রি আছে।
পার্থ: জানতে চাই এটা কে করল?
পার্থ: আমার বাড়িতে, আমার বিধানসভা এলাকায় ইডি-কে আসতে বলুন। কে করল আমিও জানতে চাই।
পার্থ: (চোখে জল নিয়ে) স্যর প্লিজ কনসিডার, অ্যালাও মি টু লিভ পিসফুলি (স্যর দয়া করে আমাকে শান্তিতে বাঁচতে দিন)
পার্থ: আমার বাড়িতে ৩০ ঘন্টা ইডি ছিল। কিছু পায়নি। আমি একজন জনপ্রতিনিধি।
পার্থর আইনজীবী: রোজ ইডি বলে, তদন্তে সাহায্য করছে না। এটার মানে কী? ওরা বলবে তাই বলা?
বিচারক : কো অপারেট করা মানে হল স্যাটিসফ্যাকটরি (সন্তষজনক) উত্তর দেওয়া। যে প্রশ্ন করা হয়েছে, সেই প্রশ্নের উত্তর ঠিক মতো দেওয়া।
পার্থর আইনজীবী: আমার মক্কেল আজ নিয়ে মোট ৫৬ দিন হেফাজতে আছেন। এখনও পর্যন্ত একটা কাগজও দেখাতে পারেনি, যে এই অপরাধের সঙ্গে তাঁর যোগ রয়েছে।
বিচারক : আপনি কি বলতে পারেন, ৫৬ দিন যথেষ্ট তদন্ত শেষ করার জন্য?
ইডি: পার্থ শাসকদলের প্রভাবশালী নেতা। তাই এই পরিস্থিতিতে তাঁকে জামিন দেওয়া যাবে না।
ইডি: তিন তলা বাড়ি বাজেয়াপ্ত হয়েছে, যেটা একটি কোম্পানির নামে। ১০০ টা শেল কোম্পানি মিলেছে এখনও পর্যন্ত
ইডি: বাবলি চ্যাটার্জির নামে পিংলায় ১৫ কোটি টাকার স্কুল। এসএসসির টাকায় তৈরি সেই স্কুল।
ইডি: ১০০ টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট পাওয়া গিয়েছে। কালো টাকা সাদা করা হত। অর্পিতার নিজস্ব তিনটি অ্যাকাউন্টে মিলেছে ২.২২ কোটি।
ইডি: ইচ্ছে এন্টারটেইনমেন্ট ও ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থার ডিরেক্টর অর্পিতা। সেখানে ২০১৭ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ৩.১০ কোটি টাকা জমা পড়েছে।
শুনানি শেষে ফের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।