কলকাতা: রাজনীতিতে মতাদর্শের তফাত থাকতেই পারে। তা ব্যক্তিগত জীবনে প্রভাব ফেলবে না- এটাই কাম্য। রাজনৈতিক সৌজন্যের বিষয়টি এসেছে এই ধারণা থেকেই। অতীতে এই সৌজন্যের প্রচুর নিদর্শন রেখেছিলেন বঙ্গের রাজনীতিকরা। সৌজন্যের রাজনীতি ক্রমেই বিলীন হচ্ছিল এ রাজ্যে। সাম্প্রতিক কালে বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীদের কুরুচিকর আক্রমণের ঠেলায় সেই সৌজন্য ধূলায় গড়াগড়ি খাচ্ছিল বলে অভিযোগ। সে সবকে দূরে ঠেলে লুপ্তপ্রায় সৌজন্যের ছবি ধরা পড়ল ফরওয়ার্ড ব্লক অফিসে। বাম দলের সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের অফিসে গেলেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ফরওয়ার্ড ব্লকের অবিসংবাদী নেতা অশোক ঘোষের জন্মশতবর্ষে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই সেখানে গিয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী।
এ বছর অশোক ঘোষের জন্মশতবর্ষ পালন করছে ফরওয়ার্ড ব্লক। বাম রাজনীতির সঙ্গে আজন্ম যুক্ত থাকলেও সব দলের থেকেই সমীহ আদায় করে নিয়েছিলেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও দেখা গিয়েছে তাঁকে শ্রদ্ধা করতে। বাম রাজনীতিতে দীর্ঘদিন যুক্ত থাকলেও নন্দীগ্রাম বা সিঙ্গুর পর্বে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অশোক ঘোষের সম্পর্ক মধুর হয়েছিল বলে মত অনেকের। শনিবার ফরওয়ার্ড ব্লকের অফিসে পার্থের যাওয়া সেই সম্পর্কের রেশ দেখতে পাচ্ছেন রাজনীতির কারবারিরা।
ফরওয়ার্ড ব্লক অফিসে গিয়ে অশোক ঘোষের মূর্তিতে মালা পরিয়েছেন পার্থ। এ ব্যাপারে তিনি বলেছেন, “ফরওয়ার্ড ব্লক অফিসে এই প্রথম এলাম না। বিরোধী দলনেতা থাকার সময়ও এসেছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এসেছিলেন। আজ আমি অশোক ঘোষকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলাম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁরা আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। দিদি ব্যস্ত। তাই আমাকে পাঠিয়েছেন।” রাজনীতির সৌজন্যের রাজনীতি শেষ হয়ে যাচ্ছে বলেও আক্ষেপ শোনা গিয়েছে পার্থের গলায়।
ফরওয়ার্ড ব্লকের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাস বলেছেন, “অশোক ঘোষ সমস্ত রকম সংকীর্ণতার ঊর্ধেব ছিলেন। সব ধরনের মানুষকে তিনি শ্রদ্ধা করতেন। তিনি সুভাষচন্দ্রের আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমরা আজ থেকে অশোকদার জন্ম শতবর্ষ উদযাপন শুরু করছি। আগামী এক বছরে আরও অনুষ্ঠান হবে।” অশোক ঘোষ স্মারক বক্তৃতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। শনিবারের অনুষ্ঠানে ফরওয়ার্ড ব্লক অফিসে উপস্থিত ছিলেন বিমান বসুও।
রাজনীতিতে নিজেক গ্রহণযোগ্যতা অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন অশোক ঘোষ। স্বাধীনতার পর থেকে টানা ১৫ বার দলের শীর্ষ পদে ছিলেন। টানা ৬৫ বছর ফরওয়ার্ড ব্লকের বাংলা কমিটির সম্পাদক ছিলেন। ২০১৬ সালের ৩ মার্চ মৃত্যু হয় তাঁর।