কলকাতা: শহরের নামী সরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিল পরিবারের এক সদস্য। রোজের মতো তাঁর সঙ্গে দেখা করতেও যেতেন পরিবারের অন্যান্যরা। প্রথম দু’দিন সব ঠিকঠাকই ছিল। তবে দু’দিন পর রোগীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে দেখেন বেডে নেই তিনি। শুরু হয় খোঁজ-খোঁজ রব। এসএসকেএম (SSKM) হাসপাতালের ঘটনা। সেখান থেকে ‘উধাও’ রোগী। হঠাতই খোঁজ মিলছে না তাঁর। এমনটাই দাবি রোগীর পরিবারের।
ওই রোগীর পরিবারের দাবি, গত ১৯ নভেম্বর শনিবার আমতলার বাসিন্দা বিশ্বনাথ রায়কে এসএসকেএম-এর মেন ব্লকের কার্জন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। হার্নিয়ার অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল তাঁর। ভর্তি হওয়ার দু’দিন পর তাঁর অস্ত্রোপচার হবে বলে ঠিক করেন চিকিৎসকরা। সেই মতো ২১ তারিখ রোগীর পরিবার পৌঁছয় হাসপাতালে। কিন্তু তখনই চক্ষু-চড়ক গাছ হওয়ার জোগাড় তাঁদের। ওয়ার্ডে গিয়ে দেখেন নিজের বিছানায় নেই বিশ্বনাথবাবু নেই।
এরপরই কর্তব্যরত নার্সদের জানান রোগীর পরিবারের সদস্যরা। গোটা ওয়ার্ডে শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। কিন্তু কোথাও মেলে না বিশ্বনাথবাবুর খোঁজ। পরিবারের দাবি, রোগীর কাছে যে মোবাইল ফোনটি ছিল, সেই ফোনও কার্যত বন্ধ পেয়েছেন তাঁরা। সঙ্গে-সঙ্গে তাঁরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানান। তবে হাসপাতালের তরফে উল্টে পরিবারের উপর দায় চাপানো হয়েছে যে কেন পরিবারের সদস্যরা নিজেদের রোগীকে দেখে রাখেননি। পরিবারের দাবি, নিখোঁজ হওয়ার একদিন পর সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে হাসপাতাল। সেখানে দেখা যায় হাসপাতালের মেইন গেট থেকে তিনি বেরিয়ে গিয়েছেন।
এই ঘটনার পর ভবানীপুর থানায় দারস্থ হয় বিশ্বনাথবাবুর পরিবার। রোগীর পরিবারের অভিযোগ, প্রথমে ভবানীপুর থানাও সেই অভিযোগ নিতে রাজি হয়নি। পরে অর্থাৎ ২২ তারিখ থানায় নিখোঁজ অভিযোগ নেয়। তবে এখনও পর্যন্ত সেই রোগীর খোঁজ মেলেনি বলে জানা গিয়েছে।
এই বিষয়ে বিশ্বনাথ রায়ের পরিবারের এক সদস্য বলেন, ‘উনি হাঁটাচলা করতে পারতেন। সেই কারণে আমাদের কেউ রাত্রিবেলা হাসপাতালে থাকতেন না। ২১ তারিখ হাসপাতালে গিয়ে দেখি রোগী বেডে নেই। এরপর আমরা জানাই হাসপাতালকে। কিন্তু দিনের দিন ওরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখায়নি। বলল পরের দিন আসুন। ২২ তারিখ সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে পেলাম। এরপর ভবানীপুর থানায় প্রথম অভিযোগ জানানো হলে ওরাও নেয়নি। পরে নিয়েছে।’
এই বিষয়ে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ বলেন, ‘ওয়ার্ড থেকে রোগী নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগের ক্ষেত্রে দেখা যায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিজে থেকেই চলে যান। সেক্ষেত্রে গাফিলতির অভিযোগ তোলা ঠিক নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের প্রতি অভিমান বা চিকিৎসার কারণে তিনি পরিবারের বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন, এই ভাবনা থেকেই ঘটনাগুলো ঘটে। এক্ষেত্রে ঠিক কী ঘটেছে দেখতে হবে। পুলিশি তদন্তে দেখা যাক কী উঠে আসে।’