কলকাতা: বয়স ৭৩। কিন্তু কে বলবে সে কথা? নির্বাচনের প্রচারে চরকি পাকে কার্যত তাঁর ধারে পাশে আপাতত কেউ নেই বললেই চলে। আর জনপ্রিয়তার কথা যদি বলতেই হয়, তাহলে বাকিদের ডজন-ডজন গোল দেবেন তিনি। আর এই নিয়ে অতি বিরোধীও তর্ক জুড়বেন না। তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এমনি সময় তো বটেই, নির্বাচনের আগে কার্যত ‘ছুটছেন’ দেশের এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত। পশ্চিমবঙ্গেই এসেছেন একাধিকবার। ক্লান্তি? তার লেশমাত্র চোখে পড়েনি। কিন্তু সব শেষ উঠে আসে সেই ‘কোটি টাকার’ প্রশ্ন এই খাটুনি-এই পরিশ্রম বঙ্গভূমিতে কি আখেড়ে চওড়া হাসি ফোটাবে পদ্মশিবিরে?
চার রাজ্যে আসন বাড়াতে হবে। সেই তালিকায় রয়েছে এ রাজ্যও। সেখানে ২৩ টি জনসভা করেছেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী। রাজ্যে প্রথমবারের জন্য একটি রোড-শো করেছেন। সব মিলিয়ে ভোট পর্বে ২৪ টি (১ মার্চ থেকে ২৯ মে পর্যন্ত) কর্মসূচি। আরও একটি কর্মসূচি ছিল তমলুক লোকসভার জন্য। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে সেই কর্মসূচি ভার্চুয়াল করেন প্রধানমন্ত্রী।
ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার আগে চারটি সভা করেছিলেন। পরবর্তীতে ১৯ টি সভা করেন তিনি। আরামবাগ লোকসভায় ১ মার্চ সভা করেন (প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক)। আবার ওই লোকসভায় পরবর্তীতে ফের একটি সভা করেন। কৃষ্ণনগরেও ভোট ঘোষণার আগে ২ মার্চ (প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক) সভা করেন। আবার ওই লোকসভার ভোটের কয়েকদিন আগে ফের সভা করেন মোদী।
উত্তর কলকাতায় মোদী রোড-শো করেছেন। সেখানে উপচে পড়েছে ভিড়। রাস্তার দু’ধারে মোবাইল হাতে দাঁড়িয়েছিলেন মানুষ। বাড়ির ঝুল বারান্দা দিয়েও উঁকি-ঝুঁকি মারতে ব্যস্ত ছিলেন অনেকে। তবে বিজেপি-র অন্দরে কান পাতলে শোনা যায়, মোদী ছাড়া দলের কোনও কেন্দ্রীয় নেতাই লোকসভায় এ বঙ্গে অন্তত এত কর্মসূচি করেননি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অঙ্ক কষে বলছেন, প্রধানমন্ত্রী এই কর্মসূচি অনেক আসনের হিসাব নিকাশ বদলে দিতে পারে। কারণ আট থেকে আশির একাংশের কাছে মোদী ‘ক্রেজ’ রয়েছে এক অন্যমাত্রায়। বারংবার দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন প্রচারে যখন তিনি ভাষণ রেখেছেন সেই সময় উপচে পড়েছে সভাস্থলের ভিড়। ‘মোদী’ ‘মোদী’ চিৎকারে তো কখনও-কখনও নিজের বক্তৃতা থামাতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। নিরবে মঞ্চের উপর থেকে তাকিয়ে সবটা লক্ষ্যও করেছেন তিনি। পরে কুর্নিশ জানিয়েছেন বাংলার জনগণকে। বলেছেন, বঙ্গে না এলে এত ভালবাসা অধরা থেকে যেত তাঁর। এও বলেছেন, “এখানে এসে আমার মনে হয়েছে গত জন্মে আমি হয়ত এই বাংলাতে জন্মেছিলাম।” তাই এই জনপ্রিয়তার কারণেই কি অমিত শাহ,জে পি নাড্ডাদের তুলনায় অনেক বেশি কর্মসূচি তিনি?
দেশের মধ্যে বিজেপির ফলের নিরিখে ‘টপার’ হবে পশ্চিমবঙ্গ, এ কথা বলেছেন নরেন্দ্র মোদী। সে কারণেই কি লোকসভা ভোটেও বারবার পশ্চিমবঙ্গে এলেন দু’বারের প্রধানমন্ত্রী। তবে এ রাজ্যে বিজেপি মোদীর কর্মসূচিতে কতটা লাভবান হল, হিসাব নিকাশের উত্তর মিলবে ৪ জুন। কিন্তু জনপ্রিয়তা আর পরিশ্রমের নিরিখে দলের বাকিদের কয়েক যোজন পিছনে ফেলবেন নরেন্দ্র মোদী, তা নিয়ে চর্চার অবকাশ নেই, মানছেন রাজনীতির কারবারিরাও।