AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

লাল-সবুজ পেরিয়ে এবার গেরুয়া বলয়ে মহাগুরু: মিঠুনের রাজনৈতিক সফরনামা

একদা সুভাষ চক্রবর্তীর অতিঘনিষ্ঠ মিঠুন বরাবর বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে জ্যোতি ‘আঙ্কল’ সম্মোধন করতেন। মুম্বইতে তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবন। জানা যায়, সেই মুম্বইয়ের একদা মুকুটহীন সম্রাট বালাসাহেব ঠাকরেরও স্নেহধন্য ছিলেন চক্রবর্তী বংশোদ্ভুত এই ব্রাহ্মণ সন্তানটি।

লাল-সবুজ পেরিয়ে এবার গেরুয়া বলয়ে মহাগুরু: মিঠুনের রাজনৈতিক সফরনামা
মিঠুনদা।
| Edited By: | Updated on: Mar 07, 2021 | 6:23 PM
Share

নিবাস—জোড়া বাগান এলাকার ২০ সি, মথুর সেন গার্ডেন লেন। নিমতলা ঘাট স্ট্রিটের কাছে এই পাড়াতেই বড় হয়ে ওঠা। শোনা যায়, এক সময়ে তাঁকে দেখা মাত্র গুলি করার (‘শুট অ্যাট সাইট’) নির্দেশ পেয়েছিল জোরাবাগান থানা। কারণ, নকশাল আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন জোড়াবাগানের গৌরাঙ্গ। ‘মৃগয়া’র দৌড় লাগানো সেই লম্বা-রোগাটে ছেলেটি চরাই-উতরাই পেরিয়ে ছুটেছেন অনেকটা পথ। এখনও সচল তিনি। এই এই গতিময়তাই যেমন তাঁকে চূড়ান্ত পেশাদার সাফল্য এনে দিয়েছে, তেমনই বারবার বাঁক বদল করিয়েছে রাজনৈতিক বিশ্বাসের। গাঢ় লাল থেকে সবুজ হয়ে মহাগুরু এবার গেরুয়া সরণিতে।

 

আরও পড়ুন মিঠুন আসলে জলঢোড়া, জাতগোখরো হলে মোদীর পায়ে মাথা ঠেকাত না: মদন মিত্র

 

তাঁর জীবনে কত শেড, কত ধরণের উঁচু-নিচু, কত তিক্ততা, স্বেচ্ছানির্বাসন। সিটি অফ জয় তাঁর কাছে এক সময়ে একেবারে ‘জয়ফুল’ হয়ে ওঠেনি। মিঠুন পালিয়ে যান, শহর ছেড়ে অনেক দূরে, মায়া নগরীতে। এক সাক্ষাৎকারে মিঠুন বলেন, “জানতাম না খাবার জুটবে কি না…ভেবেছিলাম এবার আত্মহত্যা করতে হবে”। কিন্তু লড়াই ছিল, সে লড়াই পৌঁছে দিয়েছিল পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউটে, পড়াশোনা, প্রথম দিনে র‍্যাগিং, তবুও চুপ ছিলেন মিঠুন। কিন্তু যেই না বাঙালিকে গাল পাড়লেন এক সিনিয়র, মিঠুন বললেন, “অনেকক্ষণ ধরে সহ্য করেছি। বাঙালি নিয়ে, আর একটা কথা বললে, মেরে মুখ ফাটিয়ে দেব”। অনেকে বলেন, এটাই মিঠুন চক্রবর্তী। চির প্রতিবাদী।

‘ডিস্কো ড্যান্সারে’র আজ বয়স বেড়েছে। শরীর ভেঙেছে। এখন কম কথা বলেন। বুঝে কথা বলেন। বয়স সত্তরের কোঠায়। অভিনয় জীবনে তাঁর সাফল্য প্রশ্নাতীত। সামাজিক কাজেও বারবার এগিয়ে এসেছেন মিঠুন। সর্বোচ্চ করদাতা হিসাবে একাধিকবার খবরের শিরোনামেও এসেছেন। আবার এসবের পাশাপাশি, রাজনৈতিক কারণেও কখনও কখনও আলোচনায় থেকেছেন ‘বাঙালিবাবু’।

 

আরও পড়ুন আমি জাত গোখরো, যা বলি তাই করি, ব্রিগেড থেকে হুঙ্কার মহাগুরুর

 

একদা সুভাষ চক্রবর্তীর অতিঘনিষ্ঠ মিঠুন বরাবর বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে জ্যোতি ‘আঙ্কল’ সম্মোধন করতেন। মুম্বইতে তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবন। জানা যায়, সেই মুম্বইয়ের একদা মুকুটহীন সম্রাট বালাসাহেব ঠাকরেরও স্নেহধন্য ছিলেন চক্রবর্তী বংশোদ্ভুত এই ব্রাহ্মণ সন্তানটি। এর পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বৃত্তেও আনাগোনা শুরু হয় তাঁর। ফলস্বরূপ তৃণমূল কংগ্রেস তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদ করে।

তবে মিঠুনের ঘাসফুল সংস্রব খুব দীর্ঘ হয়নি। সেই দীপ্তি ক্রমশ নিস্প্রভ হয়ে যায় চিটফান্ড কাণ্ড এবং তারপর ইডির ডাকে। শেষমেশ অসুস্থতার কারণে সাংসদ হিসাবে পদত্যাগ করেন মিঠুন। পরে বিতর্কের জেরে টাকাও ফেরত দেন এই অভিনেতা। তখন থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব তো বাড়েই, এমনকী লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান মেগাস্টার।

এসবের মাঝেই হঠাৎ ছড়িয়ে পড়ে মিঠুনের মৃত্যুসংবাদ! না, তাঁর মৃত্যু হয়নি। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ভুয়ো খবর ছড়িয়েছিল। আসলে তিনি দিব্য ছিলেন, সুস্থ ছিলেন। এবং হঠাৎ করেই আবার ফিরলেন রিয়েলিটি শোয়ের মঞ্চে। ডানদিকে শ্রাবন্তী (অভিনেত্রী), বাঁদিকে সোহম (অভিনেতা)  আর তিনি মধ্যমণি। আর তারপর আবার এক রিয়েলিটি শোতে তিনিই ‘মহাগুরু’, সঙ্গে দেব (অভিনেতা-তৃণমূল সাংসদ)।

রাজনীতির থেকে দূরে থাকতে একসময়ে স্বেচ্ছানির্বাসনে গিয়েছিলেন মিঠুন। কিন্তু রাজনীতি কি আর তাঁকে দূরে থাকতে দেয়। বাংলায় একুশের নির্বাচনের প্রাক্কালে হঠাৎ সকলকে অবাক করে একদা বালাসাহেব-ঘনিষ্ঠ মিঠুনের সঙ্গে দেখা করলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। জল্পনার সূত্রপাত তখন থেকেই, তাহলে কি এবার বিজেপি-তে মিঠুন?

 

 

সেই জল্পনা দীর্ঘস্থায়ী হল না। অনুমান সত্য করে উচ্চগ্রামের ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিত ব্রিগেডের মঞ্চে উঠলেন বাংলার ছেলে মিঠুন। মাইক হাতে নিয়ে অভি-নেতা বললেন, “আমি জলঢোড়াও নই, বেলেবোরাও নই। জাত গোখরো। এক ছোবলেই ছবি।”

রবিবার বিজেপিতে যোগ দিলেো বক্তব্য রাখতে উঠে মঞ্চে একটিবারও সরাসরি রাজনীতির কথা বলেননি তিনি। তবে তাঁর প্রতিটা শব্দের আড়ালে প্রচ্ছন্ন ছিল, ‘হুঁশিয়ারি’, যার অর্থ ছাড়বেন না সূচ্যগ্র মেদিনী। এদিন তিনি বলেন “আজকের দিনটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো। কানাগলিতে জন্মানো এক ছেলে আজ এখানে এসেছে! সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে এক মঞ্চে! আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম, গরীবদের জন্য কাজ করব। আমার মনে হচ্ছে সেই স্বপ্নটা আমি দেখতে পাচ্ছি। এটা হবেই। আমি বাঙালি। দাদার প্রতি ভরসা রাখবেন। দাদা কখনওই পালিয়ে যায়নি। এটা স্বপ্ন ছাড়া আরকি!”