কলকাতা: পরাজয়ের ফাঁড়া যেন কিছুতেই কাটছে না। বিধানসভা, পঞ্চায়েতের পর সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটেও নৌকা ডুবেছে বামেদের। কিন্তু, ভোটের আগে জোরদার প্রচার, সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্যাম্পেইন, কিছুই তো বাকি ছিল না। মাঠে নামানো হয়েছিল একাধিক হেভিওয়েট মুখকে। বড় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তরুণদের কাঁধে। কিন্তু, তারপরেও বাংলায় স্কোরবোর্ড সেই শূন্য। এবার শূন্য থেকে শিক্ষা নিয়েই ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে বামেরা। একইসঙ্গে চলল হারের ময়নাতদন্তও। সম্প্রতি পার্টি চিঠিতে চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তিও করতে দেখা গিয়েছে সিপিএমকে। লক্ষ্মীর ভান্ডারকে কটাক্ষ দলের বিরুদ্ধে গিয়েছে। লক্ষ্মীর ভান্ডারকে ডোল বা উৎকোচ বলে কটাক্ষ কটাক্ষ দলীয় কর্মীদের একাংশের। যা গরিব মানুষ থেকে দলকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে বলে মনে করছেন দলের শীর্ষ নেতারা। লোকসভা নির্বাচনের পরে প্রাথমিক পর্যালোচনা শেষে সামনে এসেছে সেই পার্টি চিঠি।
মূলত রাজ্য কমিটি ও সেন্ট্রাল কমিটির মেম্বারদের মতামতের ভিত্তিতে এই চিঠি তৈরি বলেও তাতে অনেক সময়ই নিচুতলার মতামতকেও মান্যতা দেওয়া হয়। এত প্রচারের পরেও কেন মানুষের মন জিততে পারছে না সিপিএম? আন্দোলনে জনগণের অংশগ্রহণ আর তাঁদের ভোট দেওয়ার প্রবণতায় মিল থাকছে না বলে মনে করছে সিপিএম। পার্টি চিঠিতে সে কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। একইসঙ্গে তরুণ যুবকদের কাছে টানতে যে দলের তরফে খামতি রয়েছে তাও স্বীকার করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘অনেক আসনে আমাদের শ্রেণি ও গণ সংগঠনের মোট সদস্য সংখ্যাপ্রাপ্ত ভোটের চেয়ে কম। স্থানীয় স্তরে শ্রেণী আর জনগণের ইস্যুতে আন্দোলনে বিকাশে তেমন অগ্রগতি ঘটেনি। গণনা কেন্দ্রে কর্মীরা যাননি। তৃণমূল স্তরে সক্রিয় পার্টি ইউনিটের অভাব রয়েছে।’
যান্ত্রিক প্রচারে ক্রুটির কথাও মানছে সিপিএম। পার্টি চিঠিতেই বলা হচ্ছে, বিরোধীরা পেশাদার সংগঠনকে নিয়োগ করেছে। সিপিআইএম পারেনি। সিপিআইএম বাইনারি ভাঙতে পারেনি। উল্টে ইন্ডিয়া ব্লককে ব্যবহার করে ধর্মনিরপেক্ষ ভোট নিজেদের পক্ষে নিয়ে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে সিপিএমের এও দাবি, ১২ থেকে ১৪ শতাংশ বুথে পোলিং এজেন্ট ছিল না। তার ছাপ পড়েছে ভোটে। ডায়মন্ড হারবারের লোকসভার ভোটের ফল বিকৃত হয়েছে।
একইসঙ্গে নিচুতলাকেও নিশানা করা হয়েছে পার্টি চিঠিতে। বিজেপি এবং তৃণমূলকে পরাস্ত করার আহ্বান জানানো হলেও প্রকৃত প্রচারের সময় নিচুতলায় বিজেপির বিরুদ্ধে সংসদীয় নির্বাচনে লড়াই করার মনোযোগ কম ছিল বলে আক্ষেপ ধরা পড়েছে পার্টি চিঠিতে। তুলনায় তৃণমূলকে বেশি আক্রমণ করেছেন দলীয় কর্মীরা। পার্টির লাইন নিয়ে দলীয় কর্মীদের শিক্ষায় ঘাটতির কথাও কবুল করেছে সিপিআইএম।