কলকাতা : ওদের কেউ বাবাকে হারিয়েছেন, কেউ সন্তানকে হারিয়েছেন, কেউ আবার নিজের স্ত্রীকে হারিয়েছেন। রানি রাসমণি মোড়ে বিজেপির মঞ্চে স্বজনহারাদের সেই কাতর বার্তা অত্যন্ত মর্মস্পর্শী। আর এই ভোট পরবর্তী হিংসার ইস্যুতে রাজ্যের অস্বস্তি ক্রমেই বাড়ছে। রানি রাসমণির মোড় থেকে রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে একপ্রস্থ তোপ দেগেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তারপর বিকেলে ভোট পরবর্তী হিংসার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সদস্যদের নিয়ে রাজভবনে চলে যায় বিজেপি। রাজভবন চত্বরে সাধারণত ১৪৪ ধারা জারি থাকে। কিন্তু সেখানে কার্যত এক নজিরবিহীন ব্যবস্থা দেখা গেল মঙ্গলবার। রাজভবনের পাশ দিয়েই মিছিল করে বিজেপি নেতৃত্ব আজ রাজভবনে প্রবেশ করে।
মঙ্গলবার বিকেলে ভোট পরবর্তী হিংসার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। রাজভবনের সিড়ির মধ্যেই বসেছিলেন স্বজনহারা মানুষরা। হাতে কাছের মানুষের ছবি, প্ল্যাকার্ড। সেখানেই প্রত্যেকের কথা শোনেন রাজ্যপাল। কারও কাধে হাত রেখে সমবেদনা জানান তিনি। এক মহিলা রাজ্যপালের পায়ে লুটিয়ে পড়েন, বিচার চেয়ে। প্রত্যেকে আকুল আবেদন মন দিয়ে শোনেন রাজ্যপাল। বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্যও শোনেন রাজ্যপাল। তাঁদের সেই আকুল আর্তি শোনার পর রাজ্যপাল বলেন, “আমি রাজ্যের ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখেছি। এক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর এই দৃশ্য দেখে, রাজ্যপাল হিসেবে আমি অত্যন্ত দুঃখিত ও বিচলিত।”
তিনি আরও বলেন, “ভোট পরবর্তী হিংসা সমাজের জন্য লজ্জার। এক বছর পরও কোনও সুরাহা না হওয়াটা সত্যিই চিন্তার বিষয়। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদাররা এই অবিচারের ইস্যুতে একটি স্বারকলিপি জমা দিয়েছেন। সেখানে ভোট পরবর্তী হিংসার শিকার হওয়া পরিবারগুলির জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণের দাবি করা হয়েছে। আমি সেই স্মারকলিপি খতিয়ে দেখব।”
রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাতের পর শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “রাজ্যপাল আমাদের যুক্তি শুনেছেন। তিনি রাজ্য সরকারকে পরামর্শ দেবেন। প্রশাসনিক প্রধান কথা শুনছেন না, তাই সাংবিধানিক প্রধান হস্তক্ষেপ করবেন।”
এদিকে রাজভবনে বিজেপির এই কর্মসূচি প্রসঙ্গে কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, “এটি হল বঙ্গ বিজেপির রঙ্গমঞ্চ। মৃত্যু দুঃখের। কিন্তু কেন মৃত্যু, কাদের হাতে মৃত্যু, এগুলি এখনও পরিষ্কার নয়। যাঁরা দাঁড়িয়ে রয়েছেন (বিজেপি নেতারা) তাঁরা প্রত্যেকেই এলাকার জনগণ থেকে বাংলায় আপাতত বিচ্ছিন্ন। ফলে রাজভবনের রঙ্গমঞ্চ, এদিক-ওদিক নাটক করা ছাড়া আর কোনও রাস্তা নেই। রাজ্যপালকে বলব, তিনি রাজ্যপাল পদের সাংগঠনিক গরিমাকে নষ্ট করছেন। রাজভবনের ঐতিহাসিক অলিন্দকে কি ধর্নামঞ্চ বানানো হচ্ছে? এটা কি হতে পারে?”