Professor Sheikh Makbul Islam: রথ নয়, কোলে করে প্রভু জগন্নাথকে নিয়ে পরিক্রমা ভক্ত মকবুল ইসলামের
Professor Sheikh Makbul Islam: সারা ভারত, ভারতের বাইরে শ্রীলঙ্কা থেকে সিঙ্গাপুর। ডঃ শেখ মকবুল ইসলাম সব জায়গায় ঘুরেছেন জগন্নাথ দেবের টানে। পুরী, মাহেশ, আমরা জানি। কিন্তু জানার পরিধির বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নিজের 'প্রভুর' মন্দিরের খোঁজ দিচ্ছেন তাঁর বইয়ে।
ডঃ শেখ মকবুল ইসলাম। হাফ হাতা সাদা ফতুয়া। সাদা ধুতি। কাঁধে সোনালি পাড়ের সাদা উড়নি। দেখা হলে বলেন, “জয় জগন্নাথ”।
জগন্নাথ দেবের অন্ধ ভক্ত। পুজো করেন। গবেষণা করেন। কলকাতার সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল মিশন কলেজের বাংলার প্রফেসর। একাই থাকেন। জগন্নাথকে নিয়েই সংসার। একটুও বাড়িয়ে বলা নয়। মিথ্যে বলা নয়। রং চড়িয়ে বলা নয়। স্বচক্ষে দেখতে চাইলে হাওড়ার কদমতলার কাছে তাঁর বাড়িতে চলে আসুন সটান। উনি থাকেন গুরুজির পুরনো আমলের বাড়িতে। ডঃ শেখ মকবুল ছোট থেকেই জগন্নাথকে ভালবেসেছেন।
জগন্নাথদেবের মুসলিম ভক্ত শালবেগের কাহিনি জানেন তো। এখনও নিয়ম করে শ্রী জগন্নাথের রথ সেই ভক্তের দরজায় এসে থামে। সে গল্পের বাস্তব রূপ যেন দেখলাম ডঃ মকবুলের কাছে এসে।
পুরীর মন্দিরে অন্য ধর্মের মানুষ নাকি ঢুকতে পারেন না? কে বলেছে? ডঃ শেখ মকবুল মুচকি হেসে বলেন, এই নোটিস ঝুলিয়েছিল ইংরেজরা। পুরীর মন্দির কর্তৃপক্ষ নয়। সেই নোটিস এখনও আছে। লেখা আছে হিন্দুরাই মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবে। কোথাও লেখা নেই অন্য ধর্মের লোকেরা তফাৎ যাও। প্রফেসর মকবুল মন্দিরের সিঁড়ি থেকে গর্ভগৃহের প্রতিটি জিনিস জানেন। ওড়িয়া ভাষা ছিল সেকেন্ড ল্যাঙ্গোয়েজ। অনর্গল বলতে পারেন। এই রথে তাঁর চারটি বই বেরোচ্ছে। শ্রী জগন্নাথের ওপর।
প্রথম বইয়ের নাম, শ্রী জগন্নাথ, নানা স্থানে অন্বেষণে। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে দেখা জগন্নাথের মন্দির। আগে থেকে ঠিক করে রাখা নয়, যেমন দেখেছেন। জগন্নাথ বিষয়ক তিনটি ওড়িয়া গান স্বরলিপি সহ দিয়েছেন। বাংলা তর্জমায়। ডঃ মকবুল ইসলাম মনে করেন, বাংলায় জগন্নাথ জনপ্রিয় । কিন্তু তাঁকে নিয়ে গবেষণার কাজ বড় একটা হয় না বাংলায়। এই কাজটার ভার নিয়েছেন তিনি।
৩৫ বছরের অভিজ্ঞতা, গবেষণা। সারা ভারত, ভারতের বাইরে শ্রীলঙ্কা থেকে সিঙ্গাপুর। সব জায়গায় ঘুরেছেন জগন্নাথ দেবের টানে। পুরী, মাহেশ, আমরা জানি। কিন্তু জানার পরিধির বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নিজের ‘প্রভুর’ মন্দিরের খোঁজ দিচ্ছেন তাঁর বইয়ে।
দ্বিতীয় বইয়ের নাম জগৎ মঙ্গল, জগন্নাথ মঙ্গল। ডঃ মকবুলের মতে, তিনি ঘেঁটে দেখেছেন বাংলা সাহিত্যে সেভাবে জগন্নাথের ওপর কিছুই নেই। বাংলায় যেভাবে বৈষ্ণব সাহিত্য, শাক্ত বাউল সুফি সাহিত্য নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা হয়েছে, সেখানে জগন্নাথ সাহিত্য বলে কিছুই হয়নি। মধ্যযুগে দুটি জগন্নাথ মঙ্গল কাব্য লেখা হয়েছিল। একটি লেখেন গদাধর দাস। অন্যটি লেখেন বিশ্বম্ভর দাস। দুজনের লেখা জগৎ মঙ্গল ও জগন্নাথ মঙ্গল কাব্য দুটির তুলনামূলক আলোচনা।
তৃতীয় বইটির নাম শ্রী জগন্নাথ, চর্চায় ও চিন্তনে। এটি ডঃ মকবুলের সম্পাদিত বই। মোট ১৩টি গবেষণা প্রবন্ধের সংকলন। তেরো জন মানুষের লেখা। এই বইটি প্রমাণ করে যে জগন্নাথ সাহিত্য নিয়ে চর্চা বাড়ছে ক্রমশই।
ডঃ মকবুল রথের দিন ছোটদের নেমন্তন্ন করেন। রথ নয়, জগন্নাথকে কোলে করে এলাকা পরিক্রমা করেন। সঙ্গে থাকে কচিকাঁচার দল। সে এক দেখার মত ব্যাপার স্যাপার। রথ বড়দের নয়, ছোটদের উৎসব। বড়দের ছোট হওয়ার উৎসব। আমরা তো ছোটবেলায় রথের মেলা ভরপুর পেয়েছি । এই প্রজন্মের মধ্যেও জারিত হোক এই নির্মল অনাবিল আনন্দ। বলতে বলতে চশমার ওপারে চকচক করে ওঠে কলিকালের ভক্ত শালবেগ শেখ মকবুল ইসলামের চোখ।
জগন্নাথ ভক্ত শালবেগ-
আহে নিল শৈল সে ক্ষেত্রে বহুল পরিচিত একটি ভজনের প্রথম লাইন। কবি লেখক শালবেগ। তিনি মুসলমান সম্প্রদায়ে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা লালবেগ ছিলেন মুঘলদের সুবেদার। যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে ফেরার পথে ললিতা নামক এক বিধবা ব্রাহ্মণীকে দেখে বিবাহ করেন। এবং তাঁদেরই একমাত্র পুত্র শালবেগ। জীবনের প্রথম অধ্যায়ে রাজ কর্মচারী হিসেবে কাজ করলেও মায়ের উৎসাহে জগন্নাথ প্রভুর গল্প শোনা এবং আকর্ষিত হন। কিন্তু সাম্প্রদায়িক সমস্যার কারণে তাঁকে মন্দিরে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। তিনি এরপর পদব্রজে বৃন্দাবনে যান এবং রথ দেখার জন্য তিনি আবার সে ক্ষেত্রে ফেরেন। শোনা যায় তিনি অসুস্থ হয়েছিলেন এবং প্রভু এসে তাঁর শুশ্রূষা করেন। এবং তাঁর মৃত্যুর পর আজও শালবেগ সমাধির সামনে দিয়ে রথ যখন যায় তখন থেমে যায়।