কলকাতা: হৃৎপিণ্ডের জটিল অসুখে ভোগা শিশুদের প্রাণ রক্ষার জন্য রয়েছে সরকারি প্রকল্প। সেই প্রকল্পেও সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের দড়ি টানাটানি! আর তার জেরেই বিপন্ন হচ্ছে শিশুদের প্রাণ! আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে (RG Kar Medical College) সম্প্রতি দুই শিশুর মৃত্যু ঘিরে উঠেছে প্রশ্ন। যথা সময়ে ‘শিশুসাথী’ প্রকল্পের সুবিধা না পেয়ে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। সেই পরিষেবার মুখাপেক্ষী হয়ে বাঁচার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে আরও এক শিশু। ’শিশুসাথী’ প্রকল্পে অসুস্থ শিশুদের যে ঠিক সময়ে চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না সেই প্রসঙ্গ উঠে এসেছে রোগীকল্যাণ সমিতির বৈঠকেও।
আর জি করের এসএনসিইউ বিভাগের প্রধান চিকিৎসক গোবিন্দ চন্দ্র দাস নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন সমস্যার কথা। প্রশাসনিক দড়ি টানাটানির জেরে সরকারি প্রকল্পের বাস্তবায়ন থমকে থাকার অভিজ্ঞতা রাজ্যবাসীর রয়েছে। তাই বলে শিশুদের চিকিৎসাও সেই দড়ি টানাটানির শিকার! এসএনসিইউ’র এক চিকিৎসকের দাবি, শিশুসাথী প্রকল্পে আরজি করের সঙ্গে যুক্ত বেসরকারি হাসপাতাল তাদের দায়িত্ব পালন করছে না। শিশুসাথী প্রকল্প কী, তা জানলেই এই অভিযোগের কারণ স্পষ্ট হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে ০ থেকে ১৮ বছর বয়সী, যারা জন্মগতভাবে হৃদরোগের সমস্যায় ভোগে, তাদের নিখরচায় চিকিৎসার জন্যই এই শিশুসাথী প্রকল্প। সরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামোগত সমস্যায় যাতে এই ধরনের অসুস্থ শিশুদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে দেরি না হয়ে যায়, তা সুনিশ্চিত করার জন্য বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করা হয়।
গত ২ নভেম্বর আরজি করে এক ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন শ্যামলী সরকার। আট দিন পর হাসপাতাল থেকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মাস খানেক পর শিশুকন্যার শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয়। গত ২৭ ডিসেম্বর আরজি করের বহির্বিভাগে সদ্যোজাতকে দেখানো হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানানো হয়, তার হার্টের সমস্যা রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। শিশুসাথী প্রকল্পের পরিষেবা পেতে আবেদন করা হয়। গত ৯ জানুয়ারি চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে তা আরজি করে পাঠিয়ে দেয় স্বাস্থ্য ভবন। এরপর ১৯ জানুয়ারি শ্যামলী সরকারের পরিবারকে ডেকে পাঠায় বেসরকারি হাসপাতাল। অস্ত্রোপচারের জন্য নয়, চার মাস পরে অস্ত্রোপচার হবে সে কথা জানানোর জন্য। পরদিনই গুরুতর অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় সেই শিশুকন্যার। একই ভাবে অস্ত্রোপচারের দিন নির্ধারণের আগেই মৃত্যু হয়েছে টুম্পা দাসের সন্তানেরও।
৯ জানুয়ারিই আফরোজা খাতুনের সন্তানের চিকিৎসার কাগজপত্রও চলে যায় আরজি করে। বেসরকারি হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য এখনও অপেক্ষা করছেন তিনি। আফরোজার পরিবার এই অভিযোগ নিয়ে আপাতত সরকারের কাছে সাহায্য প্রার্থী।
আরজি করের চিকিৎসকদের বক্তব্য, এই প্রকল্পে চুক্তিবদ্ধ বেসরকারি হাসপাতাল অসুস্থ শিশুদের স্থিতিশীল করে পাঠাতে বলছে। তাতে দেরি হচ্ছে। আর তার জেরেই অসুস্থ শিশুদের বাঁচানো যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, মেডিক্যাল ম্যানেজমেন্টের খরচ একসময় ৫০-৬০ শতাংশ হতো। তা কমানোর নির্দেশ আসায় বেসরকারি হাসপাতালগুলি অসুস্থ শিশুদের শুধু অস্ত্রোপচারটুকুই করতে চাইছে। প্রশ্ন উঠছে তাহলে শ্যামলী সরকার, আফরোজা খাতুনদের সন্তানদের কী হবে?
অভিযোগের কাঠগড়ায় থাকা বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে TV9 বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয়। অভিযোগ খতিয়ে দেখে বক্তব্য জানাবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। তবে প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত সেই প্রতিক্রিয়া মেলেনি।