কলকাতা: প্রবল চাপের মুখে শেষমেশ পদত্যাগ করলেন আরজি কর হাসপাতালের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। ‘কেউ বাধ্য করেননি, স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছি’, প্রেস মিট করে বললেন সন্দীপ ঘোষ। যদিও তিলোত্তমার বাড়িতে গিয়ে আরজি করের অধ্যক্ষের ইস্তফা প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আজ অধ্যক্ষ নিজেই ইস্তফা দিয়ে দিয়েছেন। উনি বলছিলেন যে আমার বাড়িতেও বাচ্চারা আছে। আমায় গালিগালাজ করছে। আমরা ওঁকে বুঝিয়ে বলেছি ঠিক আছে কাজ করতে হবে না। আমরা ওঁকে সরিয়েছি অন্য জায়গায়।”
সোমবার ইস্তফা দেওয়ার সময়ে আরজি করের বাইরে দাঁড়িয়েই সন্দীপ ঘোষ বলেন, “ঘটনার পর ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা পৌঁছে যান ঘটনার ২ ঘণ্টার মধ্যে। পুলিশ পৌঁছে যায়। সিপিও আসেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আন্ডারে সব কিছুই কমপ্লিট হয়ে যায় খুবই অল্প সময়ের মধ্যে। সে রকম যদি হত, আমার হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ ১ ঘণ্টার মধ্যে আমি পুলিশকে হ্যান্ডওভার করতাম না। অনেক ক্ষেত্রে দোষীদের ধরতেই পুলিশের অনেক সময় লেগে যায়। এক্ষেত্রে কিন্তু বেশি সময় লাগেনি। ১ জনকে অন্তত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধরে ফেলেছে।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, ‘আপনি নাকি বলেছেন, ওই চিকিৎসক একা কেন সেমিনার রুমে ঘুমোতে গিয়েছিলেন?’ সাংবাদিকদের তরফে প্রশ্ন করা হয় তাঁকে। অধ্যক্ষের সাফাই, “এটা সম্পূর্ণই ভুল। আমার মুখে, আমার নামে বসানো হয়েছে। বিগত দিনেও আমার ঘাড়ে এভাবেই কাঁঠাল ভাঙা হয়েছে।” তিনি স্পষ্ট করেছেন, “আমার সঙ্গে কোনও মন্ত্রী, কোনও সিনিয়র অফিসারের কথা হয়নি। কোনও স্বাস্থ্যমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীর কথা হয়নি। এটা আমার নিজের দায়িত্ব।” সোমবার সকাল থেকেই সূত্র মারফত শোনা যাচ্ছিল, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে সন্দীপ ঘোষকে। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বে যাচ্ছেন তিনি। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজের পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেন সন্দীপ ঘোষ। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন, “আমার কাছে বদলি সংক্রান্ত কোনও তথ্য নোটিস নেই। আমি নিজে থেকেই পদত্যাগ করছি। ” তিনি বললেন, “এই ঘটনার নৈতিক দায়িত্ব স্বীকার করে নিয়ে পদত্যাগ করলাম। আমার নামে যে অপপ্রচার হয়েছে, (ওঁ নির্যাতিতার নাম বলেছেন) তিলোত্তমা একা ছিল কেন, তিলোত্তমা ( (ওঁ আবারও নির্যাতিতার নাম বলেছেন)) আত্মঘাতী হয়েছেন, এগুলো আমি কখনই বলিনি। আমার নামে মিথ্যা রটেছে। ডাক্তারদের মধ্যেও চোর ডাকাত রয়েছে, সেই মুখোশগুলো খুলে যাবে। আমি অর্থোপেডিক সার্জেন, আমার দুটো হাত রয়েছে, আমি কিছু করে খেতে পারব।” তাঁর কথায়, “আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে, আমি বাবা হিসাবে পদত্যাগ করলাম।”
আরজি কর কাণ্ডে প্রথম থেকেই কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসক পড়ুয়া, চিকিৎসকরা। প্রথম থেকেই অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা। কারণ এর আগেও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছিল। তা নিয়ে চলেছিল কাটাছেঁড়াও। তবে এবার তিলোত্তমার ঘটনার পর ক্ষোভে ফুঁসতে থাকেন চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা সকলেই। বাকি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোও বিক্ষোভে সামিল হন। রবিবার অপসারিত হন আরজি করের সুপার। কিন্তু তখনও প্রশ্ন ওঠে, সুপার অপসারিত হলেও, বহাল তবিয়তে কেন থাকবেন অধ্যক্ষ? সোমবার থেকে লাগাতর কর্মবিরতির ডাক দেন তাঁরা। সে কর্মবিরতি চলছে। এই পরিস্থিতিতে চাপ বাড়তে থাকে। সকাল থেকেই জল্পনা তুঙ্গে ওঠে সন্দীপ ঘোষকে আরজি কর থেকে বদলি করে দেওয়া হবে। তার মধ্যেই তাঁর ইস্তফার কথা ঘোষণা সন্দীপ ঘোষের।
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)