কলকাতা: খরগোশ-কচ্ছপের গল্পটা মনে আছে? খরগোশ প্রচণ্ড বুদ্ধিমান ও আত্মবিশ্বাসী এক প্রাণী। আর কচ্ছপ কিছুটা দুর্বল! কিন্তু সন্দীপের জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে এ প্রসঙ্গ আসছে কেন? কারণ সন্দীপ ঘোষও অত্যন্ত বুদ্ধিমান, যাঁর বিরুদ্ধে শত শত অভিযোগ উঠেছে, কিন্তু জামিন পেয়ে গেলেন তিনি! গল্পের খরগোশ হারলেও, বাস্তবের ‘খরগোশ’ কিন্তু জিতেই বেরিয়ে গেল আর তার কারণ কচ্ছপের মতো সিবিআই-এর মন্থর গতি! ৯০ দিন পরেও সিবিআই চার্জশিট দিতে পারল না। সেই কারণেই জামিন পেয়ে গেল তিলোত্তমা ধর্ষণ খুনে গ্রেফতার হওয়া আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল। এখনই জেল থেকে ছাড়া পাচ্ছেন না সন্দীপ ঘোষ। আর্থিক দুর্নীতির মামলায় জেলেই থাকতে হচ্ছে তাঁকে। কিন্তু প্রশ্ন হল কেন ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট দিতে পারলেন তদন্তকারীরা।
সিবিআই যখন অভিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছিল, সে সময়ে অভিযোগ ছিল তিনি প্রমাণ লোপাটে সহায়তা করেছেন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে প্রয়োজনীয় যে তথ্য প্রমাণ দরকার, তা অনেকাংশেই সিবিআই জোগাড় করতে পারেনি। এমনটাই সিবিআই সূত্রে জানা যাচ্ছে। আর সে কারণেই তাঁরা সব থেকে বেশি জোর দিচ্ছিলেন সিসিটিভি ফুটেজের ওপরে। কয়েকদিন আগেই সিবিআই-এর কৌশুলী আদালতে জানিয়েছিলেন, তাঁর হাতে একটি ৯০০ ঘণ্টার ফুটেজ রয়েছে, সেটাকে ‘ফ্রেম বাই ফ্রেম’ তাঁদের দেখতে হচ্ছে, তার জন্য পর্যাপ্ত সময়ের প্রয়োজন রয়েছে।
সিবিআই-এর বক্তব্য ছিল, যেহেতু এই সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে অনেকটাই সময় লাগছে, সে কারণে তাঁরা এই মুহূর্তে চার্জশিট দিতে পারছে না। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, সিবিআই যে তৎপরতার সঙ্গে গ্রেফতার করেছিল, সেই পরিমাণ তথ্য প্রমাণ জোগাড় করতে পারেইনি। এমনকি সিবিআই একথাও বলতে পারেনি, কী কী তথ্য প্রমাণ নষ্ট করা হয়েছে? সিবিআই-এর তদন্তের গতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল নির্যাতিতার পরিবারও।
নির্যাতিতার বাবা বলেন, “এই খবরটার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। আমাদের ধারণা ছিল এটাই হবে। তদন্ত ঠিকমতো হয়নি, প্রমাণই পাওয়া গেল। উচ্চ আদালতে যেতে হবে। আদালতই একমাত্র রাস্তা।”
কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের বক্তব্য, পুলিশি তদন্ত প্রথম থেকেই ঠিক পথেই এগোচ্ছিল। তদন্তে কোনও ফাঁক ছিল না। ধৃত সিভিক ভলান্টিয়রের ট্রায়ালও এখন মধ্য় পর্যায়ে। টালা থানার প্রাক্তন ওসিকে যে কারণে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাতে কলকাতা পুলিশের বক্তব্য, সিবিআই যে দাবি করেছিল ‘ফেক জিডি’, অর্থাৎ অভিজিতের মাধ্যমে জাল নথি তৈরি করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে একটা ডিপার্টমেন্টাল এনকোয়ারি অর্থাৎ বিভাগীয় তদন্ত হতে পারে, বিভাগ তাঁকে শাস্তি দিতে পারে, কিন্তু এই ধরনের অভিযোগে গ্রেফতার করা যায় না।