কলকাতা : রথযাত্রার কথা মাথায় এলে প্রথমেই আমাদের মাথায় আসে পুরীর রথযাত্রার কথা। বিশাল বড় রথ, হাজার হাজার ভক্তের ঢল। কিংবা নিদেনপক্ষে মাহেশের রথ, আর সঙ্গে মেলার জিলিপি। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রথ হল শ্রীরামপুরের মাহেশে। তবে এসব ছাড়াও কলকাতাতেও কিন্তু রথ উৎসবের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। কলকাতার বলরাম বসুর বাড়ির রথযাত্রা উৎসব। আাকারে-আয়তনে এই রথ পুরী কিংবা মাহেশের থেকে অনেকটাই ছিমছাম। তবে এরও রয়েছে এক দীর্ঘ ইতিহাস। বলরাম বসুর বাড়ির এই রথের বয়স ১৩৯ বছর বয়স। আর এই রথের ইতিহাস জানলে গায়ে শিহরণ জাগবে আপনারও।
কী সেই ইতিহাস? জানেন?
কলকাতায় ঐতিহ্যবাহী এই রথ এক সময় টেনে ছিলেন রামকৃষ্ণ পরমহংস। রামকৃষ্ণের শিষ্যদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বলরাম বসু। তখন ১৮৮১ সাল। গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক এতটাই ভাল ছিল যে, রামকৃষ্ণ পরমহংস যখন কলকাতায় আসতেন, তখন বলরাম বসুর বাড়িতে যেতেন। মাঝে মাঝে সেখানে রাতও কাটাতেন। পরে ১৮৮৪ সালে ৩ জুলাই প্রথম বলরাম বসুর বাড়ির রথ টানেন রামকৃষ্ণ। সেদিন ছিল উল্টো রথ। পরের বছর অর্থাৎ, ১৮৮৫ সালে ১৪ জুলাই এখানেই আবার রথ টানেন তিনি। বসু বাড়ির কূল দেবতা ছিলেন জগন্নাথ। শোনা যায়, কুল পুরহিতের মাধ্যম রামকৃষ্ণের কথা জানতে পেরেছিলেন বলরাম বসু। তারপর তাঁকে নিয়ে আসা হয়েছিল। রামকৃষ্ণ কলকাতায় এলে এই বাড়িতে অন্নও নিতেন ঠাকুর।
পরবর্তী সময়ে সারদা দেবীও থেকেছেন এই বাড়িতে। এই বাড়িতেই প্রথম পথ চলা শুরু হয়েছিল রামকৃষ্ণ মিশনের। তখন ১৮৯৭ সাল। দিনটা ছিল ১ মে। ওই দিনে বলরাম বসুর এই বাড়িতে বসেই স্বামী বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ মিশনের পরিকল্পনা করেছিলেন বলে জানা যায়। পরবর্তী সময়ে ১৯২২ সালে এখান থেকেই পথ চলা শুরু হয় রামকৃষ্ণ মঠের। আজও সেই ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে এই রথ টানা হয়। তবে এখন অনেকটাই ছিমছাম। বসু বাড়ির অন্দরেই রথের আনাগোনা সীমিত রাখা হয়েছে। রথের দিন এই বাড়ির প্রতিটি কোণা সাজিয়ে তোলা হয়। ভক্তেরা আসেন এই বাড়িতে, আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা ঠাকুর রামকৃষ্ণের স্মৃতির পরশ পেতে।