কলকাতা: তাপস মণ্ডলের বয়ানই এখন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)-র অন্যতম হাতিয়ার। আর সেই হাতিয়ারকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার ফের মানিক ভট্টাচার্যকে আদালতে পেশ করা হচ্ছে। সূত্রের খবর, শুধুই প্রভাবশালী ও অসহযোগিতার অস্ত্রে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতিকে এবার জেলে পাঠানোর আবেদন করা হবে না, তার সঙ্গে তাপসের বয়ানে শান দিয়ে মানিকের জামিন রোখার চেষ্টা হতে পারে আজ। তদন্তকারী সংস্থার দাবি, তাদের হাতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এসেছে। সৌজন্যে নাকি মানিক-ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডল। ইডি সূত্রে খবর, ডিএলএড কলেজে ভর্তির জন্য নগদ টাকা নিতেন মানিক, তাপসের এই বয়ানকে সামনে রেখেই এদিন আদালতে সওয়াল করবে ইডি। সেই সঙ্গে তৃণমূল বিধায়ক ও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে জেলে রেখে ফের জেরা করার আবেদনও জানানো হবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে, খবর সূত্রের।
২ নভেম্বর, ইডি-র অফিসে হাজিরা দিতে যাওয়ার সময় ঘুরপথে নিয়োগের টাকা নেওয়ার দায় মানিক ভট্টাচার্যের উপর চাপিয়েছিলেন তাপস মণ্ডল। তার ২৪ ঘণ্টা পরই এক্কেবারে ১৮০ ডিগ্রি অবস্থান বদল করে তাপসের দাবি ছিল, “টাকা নিত পর্ষদ।” উল্লেখ্য, সে সময় পর্ষদ সভাপতি ছিলেন মানিক ভট্টাচার্যই। ইডি তদন্তাকারীদের দাবি, অফলাইনে ছাত্র ভর্তির করে দুর্নীতির জাল বুনেছিলেন মানিক। আর তাতে তাঁর ডান হাত ছিলেন তাপস।
তদন্তে ইডি আরও জানতে পেরেছে, অনলাইনে ভর্তির নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে। ইডির দাবি, তার মধ্যে যাঁরা ভর্তি হতে পারতেন না, তাঁদের ভর্তির বন্দোবস্ত করতেন মানিক। সরকারি পদের ক্ষমতা ব্যবহার করে পড়ুয়াদের অফলাইনে ভর্তি করা হত। ঘুরপথে পড়ুয়া ভর্তির সংখ্যাটা কলেজ পিছু ২০-২২ জন। সে সব পড়ুয়াদের ভর্তি করে ২০ কোটির বেশি টাকা ‘কামিয়েছেন’ মানিক, এমনই দাবি ইডির।
অভিযোগ, ঘুরপথে পড়ুয়া ভর্তির জন্য প্রার্থী পিছু ৫ হাজার টাকা নিতেন মানিক। ২০১৮-১৯ থেকে শুরু করে টানা ৩ বছর বিপুল পরিমাণ টাকা আদায় করা হয়েছে। কয়েক বছরে ঠিক কতজন ছাত্র ভর্তি করা হয়েছে, তার উপর টাকার অঙ্ক নির্ভর করছে। ইডি-র হাতে আসা তথ্যপ্রমাণ বলছে, ২০-২২ কোটি টাকা পকেটে ঢুকেছে মানিকের।
ডিএলএড কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া পুরোটাই অনলাইন। তারপরও কীভাবে অফলাইনে পড়ুয়া ভর্তি করা হল? কার সিদ্ধান্তে করা হত বেআইনি কাজ? গোয়েন্দা সূত্রের খবর, তাপসবাবু সরাসরি আঙুল তুলছেন মানিক ভট্টাচার্যের দিকেই।
ইতিমধ্যেই তাপস মণ্ডলকে বহুবার ইডি দফতরে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্তকারী সংস্থা। তাপসকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর, বীরভূম, উত্তর ২৪ পরগনা, এবং মুর্শিদাবাদের প্রায় ৫০টি বি এড এবং ডি এল এড কলেজ কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি। মূলত মানিকের ছেলের কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি এবং অফলাইনে ভর্তি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
তদন্তকারী সংস্থার দাবি, এমন কিছু তথ্য তাদের হাতে এসেছে, যা আদালতের সামনে হাজির করলে আদালত কোনওভাবেই মানিকের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করবে না। যদিও সহযোগিতার কথা বলে পাল্টা মানিক ভট্টাচার্যের আইনজীবীরা জামিন চাইবেন বলে খবর। একইসঙ্গে মানিক ভট্টাচার্যের বয়স ও শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়েও জামিন চাইবে বলে সূত্রের খবর। বৃহস্পতিতে মানিকের জামিন মঞ্জুর হয় কিনা, সেটাই এখন দেখার।