কলকাতা: আরজি কর হাসপাতালে (RG Kar Hospital) জুনিয়র ডাক্তারদের টানা আন্দোলনে রোগী-পরিষেবার বেহাল দশা। পড়ুয়াদের আন্দোলন নিয়ে অস্বস্তিতে কর্তৃপক্ষ। তার মধ্যেই এক কেলেঙ্কারি ফাঁসে কপালে ভাঁজ আরজি কর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। অভিযোগ, ৬৬ লক্ষ টাকার স্টেন্ট নয়ছয় (Stent Scam) হয়েছে হাসপাতালে। তার রহস্য সন্ধানে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে টিভি নাইন বাংলার হাতে।
কলকাতা মেডিক্যালের টসিলিজুমাব কেলেঙ্কারি থেকে এসএসকেএমে চিকিত্সা যন্ত্রের নয়ছয়ের অভিযোগ। এবার পাওয়া গেল আরজি করের স্টেন্ট কেলেঙ্কারির অভিযোগ। যার পর্দা ফাঁস করছে টিভি নাইন বাংলা। কী সেই অভিযোগ? স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, সময় মতো ব্যবহার না হওয়ায় হাসপাতালের ইন্ডোর এমার্জেন্সি ফার্মাসিতে পড়ে পড়ে নষ্ট হয়েছে ২২১টি স্টেন্ট। ইন্ডোর এমার্জেন্সি ফার্মাসিতে স্টেন্ট থাকা সত্ত্বেও নতুন করে স্টেন্টের বরাত দেওয়া হয়েছিল। যার প্রত্যেকটির দাম ছিল ৩০ হাজার টাকা!
সূত্রের খবর, ডেপুটি ডিরেক্টর হেলথ সার্ভিস প্রশান্ত বিশ্বাসের নেতৃত্বাধীন কমিটি গত ১১ অক্টোবরই ওই কেলেঙ্কারিতে জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে। ডিডিএইচএস-র রিপোর্ট সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত ১ অক্টোবর হাসপাতালের ডেপুটি সুপার স্টোর বিল্ডিং পরিদর্শন করতে গিয়ে আবিষ্কার করেন ২২১ টি স্টেন্ট স্রেফ পড়ে পড়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এদের এক একটির দাম ৩০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ৬৬ লক্ষ টা কার স্টেন্ট নষ্ট হয়েছে পড়ে পড়ে। হার্টের ব্লক সারাতে ব্যবহৃত হওয়া যে বহুমূল্য স্টেন্ট নষ্ট হল তাতে ২০০ জনের বেশি রোগী উপকৃত হতেন।
এদিকে এর পর এই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়। তাতে উঠে আসে আরেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা যায়, এই ২২১টি স্টেন্ট থাকা সত্ত্বেও নতুন স্টেন্টের বরাত দেওয়া হয়েছিল। এখানেই বড়সড় দুর্নীতির অভিযোগ উঠে আসছে। জানা গিয়েছে, গত ৫ ডিসেম্বর ২০১৫ থেকে ২৮ জুলাই, ২০১৬-র মধ্যে ৪৪০টি প্ল্যাটিনাম ক্রোমিয়াম করোনারি স্টেন্ট কেনা হয়েছিল। তার পর মূল স্টোর থেকে স্টেন্টগুলি পাঠানো এমার্জেন্সি ইন্ডোর ফার্মাসিতে পাঠানো হয়েছিল। তার পর ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ৮ অগস্টের মধ্যে ২১৯টি স্টেন্ট ব্যবহার হয়। বাদবাকি ২২১টি স্টেন্ট এমার্জেন্সি ইন্ডোর ফার্মাসিতেই পড়ে ছিল।
অথচ এরপর ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ফের নতুন স্টেন্ট কেনা শুরু হয়! এদিকে ২০১৯-র মে মাসের মধ্যে ২২১টি স্টেন্টের মেয়াদ ফুরিয়ে যায়। ২০২০-২১ সালে আবার ৭৪২টি নতুন স্টেন্ট কেনা হয়। আর ২০২১-২২ আর্থিক বছরে এ পর্যন্ত কেনা নতুন স্টেন্টের সংখ্যা ৪০৪। স্বভাবতই এই ডিডিএইচএস-র নেতৃত্বাধীন কমিটির রিপোর্ট পেতেই নড়েচড়ে বসেন আরজি হাসপাতালের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। সূত্রের খবর, ওই রিপোর্টের ভিত্তিতেই স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যকে চিঠি লিখেছেন অধ্যক্ষ। মূল আর্জি একটাই। আরজি করের প্রাক্তন এমএসভিপি মানস বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেপুটি সুপার সুপ্রিয় চৌধুরী, স্টোরকিপার মৃণালকান্তি ঘোষ এবং ঘটনার সময় ইন্ডোর এমার্জেন্সি ফার্মাসির দায়িত্বে থাকা ফার্মাসিস্ট প্রশান্ত মান্নাকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়া হোক।
কার্ডিওলজি বিভাগে চিকিৎসক জানাচ্ছেন তাঁরা জানতেনই না যে এত সংখ্যক স্টেন্ট পড়ে ছিল! এই ঘটনায় তৃণমূল সাংসদ চিকিৎসক শান্তনু সেনের প্রতিক্রিয়া, যদি কোনও অভিযোগ থাকে তা তদন্তসাপেক্ষ। আরজি কর কর্তৃপক্ষও বলছে তারা যথাযথ তদন্ত করবে।