Robbery At Gold Shop: রানাঘাটের ডাকাতি কি স্পেশাল ২৬-এর ‘অনুপ্রেরণায়’? রিক্রুটমেন্টের কৌশল হার মানাবে অক্ষয় কুমারকেও

সুজয় পাল | Edited By: শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী

Aug 30, 2023 | 3:31 PM

Robbery At Gold Shop: মঙ্গলবার রাজ্য তথা দেশের প্রথম সারির স্বর্ণ গহনা প্রস্তুতকারক ও বিক্রয়কারী সংস্থার দুটি আউটলেটে ডাকাতি হয়েছে। আর দুটি ঘটনারই 'মোডাস অপারেন্ডি'এক।

Robbery At Gold Shop: রানাঘাটের ডাকাতি কি স্পেশাল ২৬-এর ‘অনুপ্রেরণায়’? রিক্রুটমেন্টের কৌশল হার মানাবে অক্ষয় কুমারকেও
রানাঘাটের ডাকাতি কি স্পেশাল ২৬-এর ‘অনুপ্রেরণায়’?

Follow Us

কলকাতা: মাস দেড়েক আগে কল্যাণীতে এসেছিল পাঁচ অবাঙালি যুবক। টিনের চালের ঘুপতি দুটো ঘর ভাড়া নিয়েছিল। বাড়িওয়ালাকে তারা জানিয়েছিল, কাজের খোঁজে ভিন রাজ্য থেকে এসেছে। আখছার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে তা হয়। বাড়িওয়ালার দাবি মতো অগ্রিম টাকাও দিয়েছিল। ফলে খুশি খুশিই ঘরের চাবি দিয়েছিলেন বাড়িওয়ালা। কল্যাণীর টিনের চালের সেই ঘরে বসেই পরিকল্পিত হয়েছিল বাংলায় গত কয়েক বছরের মধ্যে হাড়হিম করা এক ডাকাতির ছক। মঙ্গলবার রাজ্য তথা দেশের প্রথম সারির স্বর্ণ গহনা প্রস্তুতকারক ও বিক্রয়কারী সংস্থার দুটি আউটলেটে ডাকাতি হয়েছে। আর দুটি ঘটনারই ‘মোডাস অপারেন্ডি’এক।

পরিসংখ্যান বলছে, গত কয়েক বছরে রাজ্যে ডাকাতির সংখ্যা কমলেও, সম্পূর্ণ বন্ধ করা যায়নি। তদন্তকারীরাই বলছেন, ডাকাতির ধরন এখন বদলেছে। ডাকাতরা এখন নগদ ছেড়ে সোনায় মজেছে। টার্গেট গোল্ড লোন কোম্পানি কিংবা জুয়েলারি সংস্থা। গত কয়েক বছরের রেকর্ড তাই বলছে। আগে টার্গেট থাকত ব্যাঙ্ক। কিন্তু এখন র্গেট সোনা। কেন?

এর পিছনেও বিশেষ কারণ রয়েছে। পুলিশ বলছে, ব্যাঙ্কে নগদ কম থাকে। ব্যাঙ্কের বড় কোনও ব্রাঞ্চে খুব বেশি হলে ১-২ কোটি টাকা নগদ থাকে। কিন্তু গোল্ড লোন বা জুয়েলারি সংস্থায় যে পরিমাণ সোনা থাকে, তার মূল্য ৫ থেকে ১০ কোটি টাকা। ফলে ডাকাতি সফল হলে লাভ বেশি।

ব্যাঙ্কের বড় শাখায় নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা থাকে বেশি। ফলে ডাকাতি করতে যাওয়াও বেশি ঝুঁকির। সেক্ষেত্রে গোল্ড লোন বা জুয়েলারি সংস্থায় রক্ষীর সংখ্যা কম থাকে। টাকা লুঠ করলে সেই টাকা নিয়ে পালানো কঠিন। সোনার ক্ষেত্রে কম জায়গায় অনেক টাকার সোনা নিয়ে পালানো যায়।

আপাতত মঙ্গলবারের ঘটনার তদন্তে নেমে পূর্বের বেশ কয়েকটি সোনার দোকান কিংবা গোল্ড লোন সংস্থার ডাকাতির ঘটনার যোগসূত্র খতিয়ে পেয়েছেন তদন্তকারীরা। তদন্তকারীরা প্রাথমিক একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন, এই ডাকাতদলের ‘হেড কোয়ার্টার’ বিহারের হাজিপুর ও সংলগ্ন এলাকা। মূল মাথা জেলবন্দি এক কুখ্যাত দুষ্কৃতী ও তার দল থেকে বেরিয়ে আসা কয়েকটি গোষ্ঠী।

‘টিম-মেম্বার’ বাছাই পর্ব

মূলত, অপারেশনের আগে এই দলেও চলে বাছাইপর্ব। এই ধরণের ডাকাতিতে পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে সেই হয় লিডার। সঙ্গে নেওয়া হয় শার্প শুটার। বাইক চালানোর এক্সপার্ট। এই দলে গুরুত্ব পায় দ্রুত দৌড়ে পালাতে সক্ষমরাও। গুরুত্ব দেওয়া হয় চুরি, ছিনতাইয়ে জেল খেটে আসামীদের। মূল অপারেশন টিম তৈরি হয় ৬-৮ জনের। তাঁদের কাছে থাকে সেভেন এমএম পিস্তল বা নাইন এমএম পিস্তল।

টিম তৈরির পর ‘অ্যাসাইনমেন্ট’

টিম তৈরির পর এবার টার্গেটে পাঠানো হয় তাদের। দিন ১৫ আগে পাঠানো হয় রেইকি করার জন্য। এক সঙ্গে এক দিনে ২টি জায়গায় ডাকাতির টার্গেট দেওয়া হয়। জায়গা বুঝে তারা কোথাও ইলেকট্রিক মিস্ত্রি, কোথাও তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী হিসাবে কাজও নিয়ে নেয়। কোথাও ছাত্র হিসেবে ভুয়ো আইডি কার্ড দিয়ে ঘর ভাড়া নেয়। কেনে পুরোনো বাইক। তারপর দুজন করে বাইকে এলাকায় রেইকি করে। কোন রাস্তা দিয়ে ডাকাতি করতে যাবে আর কোন রাস্তা দিয়ে পালাবে, সব ঠিক করে রাখা হয়।

এরপর টার্গেটস্থলে রেইকি

আলোচনার ভিত্তিতে অপারেশনের দিন ধার্য হয়। কয়েক জন বিক্রেতা কিংবা কিছু সোনা নিয়ে গোল্ড লোন সংস্থায় লোন নেওয়ার নামে সংস্থায় ঢোকে রেইকির জন্য।

‘মিশন সাকসেসফুল’

এবার মূল অপারেশনের দিন টিম জড়ো হয়ে সোজা শো-রুমে ঢুকে সবাইকে অস্ত্র দিয়ে ভয় দেখায়। প্রয়োজন হলে প্যানিক ফায়ার করে। তারপর একটা টিম লকার খুলতে চলে যায়। অন্য টিম সংস্থার কর্মীদের ভয় দেখিয়ে রাখে। কেউ যাতে ফোন করতে না পারেন, সেজন্য ছোট জ্যামার জাতীয় মেশিন চালু করে দেয়। ডাকাতি সফল হলেই বাইরে চলে আসে কালো কাচ দেওয়া এসইউভি গাড়ি। তাতে চুরি করা সোনা তুলে দেওয়া হয়। গাড়িতে দু’একজন উঠে যায়। বাকিরা বাস, ট্রেন, এমনকি প্লেনে করে আলাদা হয়ে যায়।

সেই অপারেশনটাই মঙ্গলবার এক ঘণ্টার ব্যবধানে সংঘঠিত হয়েছে স্বর্ণগহনা সংস্থার রানাঘাট ও পুরুলিয়ার আউটলেটে।

আপাতত এই ডাকাতির ঘটনাতেও বিহার যোগেরই প্রমাণ মিলেছে। রানাঘাটের ডাকাতির ঘটনায় পুলিশ আপাতত ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। তারা প্রত্যেকেই বিহারের বাসিন্দারা। তদন্তকারীরা মনে করছেন, পুরুলিয়ার ডাকাতির ঘটনাতেও তাদেরই গ্যাঙ জড়িত। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

Next Article