কলকাতা: সারদাকাণ্ডের পর এতগুলো বছর কেটে গিয়েছে। যাঁরা সর্বস্ব খুইয়েছেন, তাঁরা কিছু পান বা না পান, রাজনৈতিক আকচাআকচি কিন্তু দিব্যি জিইয়ে রয়েছে। শুক্রবার আরও একবার সেই বিতর্কের আগুনে ঘি ঢাললেন স্বয়ং সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেন। এদিন তাঁর মুখে শুভেন্দু অধিকারীর নাম। তাঁর দাবি, শুভেন্দু অধিকারী তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। ২০২০ সালে জেল থেকে লেখা সুদীপ্ত সেনের চিঠি সামনে এসেছিল। একুশের বিধানসভা ভোটের আগে যা ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। সেই চিঠির সত্যতা যাচাই করেনি টিভিনাইন বাংলা। তবে দু’ বছর আগের সেই ‘বিস্ফোরণ’-এর রেশ এখনও রয়েছে। সেই ক্ষত খোঁচালেই মাথা চাড়া দেয় বিতর্ক।
২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীকে বিস্ফোরক সেই চিঠি লিখেছিলেন সুদীপ্ত সেন। সেখানে এক নেতার কথা তিনি বলেছিলেন, যিনি ‘বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন’। সঙ্গে ছিল কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী, সিপিএম নেতা বিমান বসু, সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী, মুকুল রায়ের নাম। মুকুল রায় সে সময় জাঁকিয়ে বসেছেন বিজেপিতে। শুভেন্দু সবেমাত্র তৃণমূলের মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। বিজেপিতে যোগদান সময়ের অপেক্ষা। সেই চিঠি ঘিরে তুমুল আলোড়ন হয়েছিল। সেই চিঠিকে শুভেন্দু বলেছিলেন, ‘বড়সড় চক্রান্ত’। সুদীপ্ত সেনের হাতে লেখা সেই চিঠির তদন্তভার সিবিআইকে দেওয়ার দাবিও তুলেছিলেন তিনি।
সারদাকর্তা সেই চিঠিতে লিখেছিলেন, অধীররঞ্জন চৌধুরীকে তিনি ৬ কোটি টাকা, সুজন চক্রবর্তীকে ৯ কোটি টাকা, শুভেন্দু অধিকারীকে ৬ কোটি টাকা, বিমান বসুকে ২ কোটি টাকা দিয়েছিলেন। তবে মুকুল রায়ের প্রসঙ্গে সুদীপ্তর চিঠিতে উল্লেখ ছিল, ‘বিরাট অঙ্ক, আমার ঠিকমতো মনেও নেই’। যদিও এই চিঠি নিয়ে মুখ খুলেছিলেন অধীর, সুজনরা।
সে সময় বাংলায় সিপিএম-কংগ্রেস জোট। অধীরের বক্তব্য ছিল, বাম-কংগ্রেস জোট নিয়ে উদ্বিগ্ন তৃণমূল জোটের নেতাদের কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছে। সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য ছিল, এত বছর ধরে সিট, সিবিআই তদন্ত করছে, কিছু পেল না। হঠাৎ চিঠি লিখছেন সুদীপ্ত সেন। এটা খুবই ‘কাঁচা হাতের কাজ’, বলেছিলেন তিনি। ছোট্ট অথচ তীক্ষ্ণ প্রতিক্রিয়া ছিল বিমান বসুর। বলেছিলেন, চিঠিতে তেমন কিছু থাকলে দেখা যাবে। অন্যদিকে মুকুল বলেছিলেন, জেলে বসে আছেন সুদীপ্ত সেন। তাঁর বক্তব্যে কিছুই এসে যায় না।
তবে শুক্রবার শুভেন্দু অধিকারী সম্পর্কে সুদীপ্ত সেন যখন এমপিএমএলএ আদালতে দাঁড়িয়ে বলেন, শুভেন্দু অধিকারী তাঁর কাছ থেকে একাধিকবার টাকা নিয়েছেন। তাঁকে ব্ল্যাকমেল করতেন। তখনই নতুন করে পুরনো বিতর্ক মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। ফের ভেসে আসছে দু’ পাতার সেই চিঠি। যা নাকি সারদাকর্তা নিজের হাতে লিখেছিলেন।