কলকাতা : যে রক্তের জন্য ব্লাড ব্যাঙ্কে কার্যত হন্যে হয়ে ঘুরতে হয় সাধারণ মানুষকে, সেই রক্ত নিয়েই জালিয়াতি চলছে কলকাতা শহরে। ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত নিয়ে বাইরে বিক্রি করা হচ্ছে চড়া দামে। সাধারণ ফ্রিজে দিনের পর দিন রেখে দেওয়া হয় সেই রক্ত। জীবনের দাম অনেক বেশি! তাই এক ইউনিট ১৫০০ টাকা দিয়ে সেটাই কেনে রোগীর পরিবার। বৃহস্পতিবার অভিযোগের ভিত্তিতে ওই জালিয়াতি চক্রের অন্যতম পাণ্ডাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আর এবার জানা গেল সর্ষের মধ্যেই রয়েছে ভূত। সূত্রের খবর, ওই জালিয়াতিতে জড়িত ব্লাড ব্যাঙ্কেরই পাঁচ কর্মী।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরাই সাহায্য করেছেন জালিয়াতদের। পাশাপাশি ওই ঘটনায় নাম জড়িয়েছে ৬ টি নার্সিং হোমের। ধৃতদের কাছ থেকে কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কের একাধিক নথি উদ্ধার হয়েছে। তাঁদের কাছে ছিল সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের ব্যাগও। এ ভাবেই দিনের পর দিন চলছিল মানুষকে ঠকিয়ে রক্ত বিক্রির ব্যবসা। অবশেষে সেই চক্রের নাগাল পেয়েছে পুলিশ।
ওই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর ঢেলে সাজানো হচ্ছে ব্লাড ব্যাঙ্কের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। জানা গিয়েছে, প্রতিটি রক্তের ব্যাগে থাকবে বার কোড। কোন ব্লাড ব্যাঙ্কের রক্ত তা যাচাই করতে সাহায্য করবে ওই বারকোড। ভুয়ো কার্ড দেখিয়ে রক্তের ব্যাগ পাচার বন্ধ করতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া মানিকতলা-কাণ্ডের জেরে নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য ভবন। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম জানিয়েছেন, মানিকতলা ব্লাড ব্যাঙ্ক- কাণ্ডে ডিরেক্টরের কাছে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে। ডিরেক্টর কী রিপোর্ট দেন, তার অপেক্ষায় রয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। এ ছাড়া পুলিশি তদন্তে কী উঠে আসে তাও খতিয়ে দেখা হবে। এরপরই পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি জালিয়াতির কথা জানতে পারেন মানিকতলা ব্লাড ব্যাঙ্কের ডিরেক্টর স্বপন সোরেন। অভিযোগ, ভুয়ো স্লিপ আর ভুয়ো ডোনার কার্ড দিয়ে সংগ্রহ করা হত রক্ত। তারপর সেই রক্ত রেখে দেওয়া হত সাধারণ ফ্রিজে। সাধারণ মানুষের রক্তের প্রয়োজন পড়লে এক বা দেড় হাজার টাকায় সেই রক্ত বিক্রি করা হত। প্লাজমা বিক্রি হত আরও চড়া দামে।