Uttam Kumar: উত্তমকুমারের গুপ্তধন আছে মৌলালির পোড়ো বাড়িতে
Uttam Kumar: তিনি আজ ৪৪ বছর নেই। তবু আজও বাঙালির মননে তিনি। বাঙালির প্রেমিক সত্তার কথা উঠলেই তাঁর ছবি মনে ভেসে ওঠে। হৃদয়ে ঝড় তোলা হাসি, আলতো ঘাড় ঘুরিয়ে তাকানো, বাঙালি আজও নকল করার চেষ্টা করে তাঁকে। তিনি মহানায়ক। তিনি উত্তমকুমার। তাঁর অনেক সিনেমাই আজ দুর্লভ। তেমনই অনেক সিনেমা বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা মৌলালির এক পোড়ো বাড়িতে। পড়ুন টিভি৯ বাংলার বিশেষ প্রতিবেদন...
মাকড়সার জাল। ভেঙে পড়া সিঁড়ি। আদ্দিকালের জানলা ফুঁড়ে বট অশ্বত্থ গাছ। এখানে উত্তম কুমার!! কন কী কর্তা
“উত্তমকুমারের সব ছবির নাম জানো?” প্রশ্নটা ছুড়ে দিয়ে যিনি মুচকি মুচকি হাসতে থাকলেন, তাঁর সঙ্গে উত্তমকুমারের ভাই আর দাদার সম্পর্ক। যেহেতু নামটা উত্তমকুমার তাই আমি পৃথিবীর যে কোনও বাঙালির মত ফুল কনফিডেন্স নিয়ে বললাম, “উত্তমকুমারের সিনেমা আবার জানবো না?” এরপর যে নামগুলো ধেয়ে এল, কস্মিনকালেও ভাবিনি।
‘সেই চোখ’, ‘উপহার’, ‘অন্ধ অতীত’। এগুলো মহানায়কের ছবির নাম? যাইহোক সারেন্ডার করলাম তখনই। আর উত্তমকুমারের অজানা এক রত্ন ভান্ডার খুলে গেল। শিল্পী সংসদের ভাঙা বাড়িতে উত্তমকুমারের গুপ্তধন পেলাম। উত্তম কুমারের এখনও এমন সব ছবি আছে যেগুলো জনসমক্ষে আসেনি বা এলেও এখনও বেশ কিছু সিনেমা আছে যেগুলো রেয়ার হয়ে গেছে। এগুলো কোথায় পাবেন জানেন? উত্তমকুমারের প্রতিষ্ঠিত শিল্পী সংসদে গচ্ছিত রাখা আছে। গচ্ছিত রাখা আছে একসময় উত্তমবাবুর ছায়াসঙ্গী সাধন বাগচীর কাছে। যিনি উত্তমকুমারের ভাই বলেও পরিচিত। দাদা অন্ত প্রাণ। পুরসভায় চাকরিও করে দিয়েছিলেন ‘দাদা’ উত্তমকুমার। দাদার ব্যাপারে জগৎ একদিকে আর সাধনদা একদিকে। প্রতিবছর ২৪ জুলাই উত্তমকুমারের প্রয়াণ দিবসের সময়টায় তাঁর সাদা কালো পুরনো একাধিক ছবি নন্দনে দেখানোর ব্যবস্থা করেন। তার মধ্যে দুর্লভ ছবিও থাকে। ২৪ জুলাই ২০২৪ । উত্তমের ৩০ ছবি হল পাচ্ছে। তার মধ্যেই আছে একাধিক দুর্লভ দুষ্প্রাপ্য ছায়াছবি।
‘সেই চোখ’ বলে উত্তমকুমারের কোনও ছবির নাম শুনেছেন? কিংবা ‘অন্ধ অতীত’ নামের কোনও ছবি? মহানায়কের অতি বড় ভক্তও খেয়াল করতে পারবেন না, বাজি রাখছি। ‘উপহার’ নামে উত্তমের কোনও ছবির কথা জানেন? জানেন না।
মজার বিষয় হল সঙ্গীত শিল্পী শ্যামল মিত্র এই ছবির প্রযোজক। বাসবী নন্দীকে দেখা যাবে। যখন ছবিটি মুক্তি পায়, বেশি চলেনি। ছবিটি রিস্টোর করা হয়েছে।
প্রতি বছর খুঁজে পেতে কিছু না কিছু দুষ্প্রাপ্য হারিয়ে যাওয়া মহানায়ক স্পেশাল ছবি বের করেন সাধন বাগচী। তিনিই বর্তমানে উত্তম কুমার প্রতিষ্ঠিত শিল্পী সংসদের সম্পাদক। মৌলালির কাছে এখনও বিপজ্জনক বাড়ির মধ্যে কাজ চলছে শিল্পী সংসদের। কত অমূল্য সম্পদ লুকিয়ে রয়েছে তার কোনও ইয়ত্তা নেই। এখনো বহু ফিল্ম ক্যান রয়েছে শিল্পী সংসদের জিম্মায়।
নায়কের পাশাপাশি খলনায়কের ভূমিকাতেও উত্তমকুমারের অভিনয় বারবার প্রশংসিত হয়েছে। খলনায়কের ভূমিকায় উত্তমকুমারের বেশ কিছু সিনেমা এখনও দেখা যায়। কিন্তু অন্ধ অতীতের মতো দুষ্প্রাপ্য কিছু ছবি রয়েছে যেখানে মহানায়ক ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এছাড়াও পরিচিত ‘রাইকমল’, ‘সাড়ে চুয়াত্তর’-র মত মোট ৩০টি সাদা কালো উত্তমকুমারের চলচ্চিত্র বড় পর্দায় দেখানোর উদ্যোগ নিয়েছে শিল্পী সংসদ।
নিচের তালিকায় দেওয়া রইল এরকম ৩০টি উত্তমকুমার অভিনীত ছবি, যেগুলো আবার নন্দনে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
সাড়ে চুয়াত্তর। সবার উপরে । মৌচাক। মন নিয়ে। অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি। সদানন্দের মেলা। রাইকমল। সাথী হারা। চৌরঙ্গী। সূর্য তোরণ। উত্তরায়ণ। অন্ধ অতীত। জীবন তৃষ্ণা। পৃথিবী আমারে চায়। রাজকুমারী। কখনও মেঘ। অবাক পৃথিবী। শুন বর নারী। প্রিয় বান্ধবী। রাজকন্যা। পুত্র বধূ। যদি জানতেম। শেষ অঙ্ক। উপহার। একটি রাত। থানা থেকে আসছি। অভয়ের বিয়ে। শ্যামলী। জীবন মৃত্যু। সেই চোখ। দুর্লভ সিনেমার এত সম্ভার কী ভাবে হাতে এল? আসলে শিল্পী সংসদ তো উত্তম কুমারের নিজের হাতে গড়া। দুঃস্থ শিল্পীদের সাহায্য করার জন্য। বহু ফান্ড তুলে দিয়েছেন উত্তমবাবু। এখনও চলছে শিল্পী সংসদ। তবে খুব করুণ দশা মৌলালির কাছে শিল্পী সংসদের অফিসটি। ভাঙা বাড়ি। ইট বেরিয়ে এসেছে। রং চটা পুরনো কাঠের চিঠি ফেলার বক্স। ভেতরে সিঁড়ি দিয়ে উঠতেও ভয় হয়। দিনের বেলাতেও আঁধার নেমেছে। তারপর একটা শিল্পী সংসদ নেম প্লেট লেখা দরজা ঠেলতেই অন্য জগৎ। একটা পুরনো ঘরে মহা নায়কের হাজারো ছবি। চেয়ারে বসে সম্পাদক সাধন বাগচী। যাঁর দাদার তৈরি এই প্রতিষ্ঠান ধরে রেখেছেন ছায়াসঙ্গী ভাই।
সাধন বাগচী বলছেন, “মহানায়ক উত্তমকুমারের অনেক মণিমুক্ত এভাবে পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। সরকারি স্তরে কোনও উদ্যোগ নেই। সে কারণেই আরও বেশি করে চোখের সামনে এই দুরবস্থা দেখতে হচ্ছে। আমরা আমাদের ক্ষুদ্র প্রয়াসের মধ্যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি দাদা উত্তমকুমারের আরও এরকম অপ্রকাশিত সিনেমা ছবি কারও সংগ্রহে আছে কি না। আমরা ঠিক করেছি নিজেরাই এবার আরও বেশি করে উত্তমকুমারের পুরনো দুষ্প্রাপ্য ছবি সংগ্রহ করে রেস্টোরেশন করব। পুনরুদ্ধার করব। এবং মানুষকে সেগুলো দেখার সুযোগ করে দেব। অগণিত উত্তম ভক্তের কাছে, উত্তম অনুরাগীর কাছে আমাদের একান্ত বিনীত অনুরোধ, পাশে থাকুন।”