SLST Movement: ‘দিদি, একটু দেখুন’ মেধাতালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও ৫ বছর ধরে কেবল গঞ্জনাই সঙ্গী রিজিয়ার!

TV9 Bangla Digital | Edited By: tista roychowdhury

Oct 22, 2021 | 11:01 PM

Kolkata: সরকারি চাকরির স্বপ্ন দেখেই পড়াশোনার প্রস্তুতি। কঠিন পরিশ্রম করে অবশেষে পরীক্ষায় বসা। ২০১৬ সালে পরীক্ষা দিয়ে পাশও করে যান রিজিয়া।

SLST Movement: দিদি, একটু দেখুন মেধাতালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও ৫ বছর ধরে কেবল গঞ্জনাই সঙ্গী রিজিয়ার!
রিজিয়া সুলতানা, নিজস্ব চিত্র

Follow Us

কলকাতা: বয়স সাঁইত্রিশ। বিয়ে হয়েছে। সন্তানও রয়েছে। দু’জন। ছাত্রাবস্থায় কৃতী ছাত্রী বলে পরিচিত ছিলেন। প্রস্তুতি নিয়েছেন। পরীক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু, তাঁর ভাগ্যে শিঁকে ছেড়েনি! সাত বছর ধরে গঞ্জনা-ব্যঞ্জনাই তাঁর সঙ্গী। না, সরস্বতীলাভ হলেও ‘লক্ষ্মীমন্ত’  হয়ে উঠতে পারেননি তিনি। চাকরিটাই (SLST) যে জোটেনি তাঁর। তিনি অর্থাত্‍ রিজিয়া। রিজিয়া সুলতানা। নিবাস বসিরহাটে।

সরকারি চাকরির স্বপ্ন দেখেই পড়াশোনার প্রস্তুতি। কঠিন পরিশ্রম করে অবশেষে পরীক্ষায় বসা। ২০১৬ সালে পরীক্ষা দিয়ে পাশও করে যান রিজিয়া। মেধাাতালিকায় নামও ওঠে তাঁর। কিন্তু, ব্য়স, ওই পর্যন্তই! ডাক আর আসেনি। ২০১৬ সালে স্টেট লেভেস সিলেকশন টেস্টে উত্তীর্ণ হয়েও কোনও লাভ হয়নি। ছোট থেকেই মেধাবী রিজিয়ার বিয়ে হয় ২০১৪ সালে। বছর না ঘুরতেই সন্তান। প্রথম সন্তান ছেলে। তারমধ্যেই পড়াশোনা, কাজের চেষ্টা। স্বপ্ন দেখা তখনও শেষ হয়ে যায়নি রিজিয়ার। তাঁর স্বামী চুক্তিভিত্তিক স্বাস্থ্যকর্মী। সংসারে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। তবুও দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই। হার মানেননি রিজিয়া। চাকরিটা তাঁর পেতেই হবে। কিন্তু কোথায় কী! কাকস্য়পরিবেদনা!

এদিকে চাকরি না পেয়ে বাড়ি থেকে কেবল জুটেছে গঞ্জনা। ‘অত পড়াশোনা করে কী লাভ হল! চাকরিটাই তো জুটল না!’ হ্যাঁ, এই কথাটাই শুনে আসছেন রিজিয়া। এক-দুইদিন নয়, বিগত পাঁচ বছর ধরে। রোজ একই লাঞ্ছনা, গঞ্জনা। এরই মধ্যে অভাবের সংসারে আরও এক সন্তান। এ বার কন্যা। রিজিয়ার কোল ভরেছে, কিন্তু মন ভরেনি। সন্তানদের ভবিষ্যত্‍, বেঁচে থাকা কুড়ে কুড়ে খায় তাঁকে। তাই নিজের দেড় বছরের মেয়ে আর ছয় বছরের ছেলেকে নিয়ে সুদূর বসিরহাট থেকে ছুটে এসেছেন ধর্মতলায়। অংশ নিয়েছেন অবস্থান বিক্ষোভে। চোখের জল ফেলতে ফেলতে রিজিয়ার একটাই আর্তি, “দিদি, একটু দেখুন।”

গত রবিবার থেকে চাকরির দাবিতে রিলে অনশনে বসেছেন ২০১৬ সালের প্রথম স্টেট লেভেস সিলেকশন টেস্ট অর্থাত্ এসএলএসটি-র চাকরিপ্রার্থীরা। চাকরির দাবিতে, গত ৩০ জানুয়ারি থেকে সল্টলেক সেন্ট্রাল পার্কের ৫ নম্বর গেটের সামনে ধর্না ও অনশন করছিলেন এই চাকরিপ্রার্থীরা।

১৮০ দিনেরও বেশিদিন চলে এই ধর্না। পরে ধর্না মঞ্চ তুলে দেওয়া হয়। তবে দিন কয়েক আগে হাইকোর্টের অনুমতি নিয়ে ফের সিটি সেন্টারের কাছে ধর্নায় বসেন তাঁরা। এবার স্থান পরিবর্তন। আজ থেকে শুরু গান্ধীমূর্তির পাদদেশে এসএলএসটি-র নবম দশমের চাকরি প্রার্থীদের রিলে অনশন।

এর আগে কালীঘাটে বিক্ষোভ দেখান ওই স্টেট লেভেল সিলেকশন টেস্ট বা এসএলএসটি (SLST) চাকরিপ্রার্থীরা। বিক্ষোভকারীদের দাবি, ২০১৬ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা দিয়ে প্রথম তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও তাঁরা কেউ চাকরি পাননি। তার প্রেক্ষিতে তাঁরা অনশন করেন। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতিও দেন। তারপরও চাকরি না মেলায় এই বিক্ষোভ। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে শুয়ে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। বিক্ষোভ চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়েন এক প্রার্থী। তাঁকে সেসময় হাসপাতালে পাঠানো হয়।

তারও আগে তত্কালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান এই প্রার্থীরা। নিয়োগে স্বচ্ছতার দাবি তুলে শিক্ষামন্ত্রীর নাকতলার বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখিয়ে ছিলেন তাঁরা। তাঁদের দাবি ছিল মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও চাকরি মেলেনি। সেই সময় পার্থ চট্টোপাধ্যায় তাঁদের বলেন, যিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি নিশ্চই ব্যবস্থা করবেন। সেই কথা মাথায় রেখেই কালীঘাটে যান বিক্ষোভকারীরা। কিন্তু সেখানেও পরিস্থিতি আরও জটিল হয়।

সল্টলেকে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন চালাচ্ছেন এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীরা। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, ২০১৬ সালের তাঁদের যে ওয়েটিং লিস্ট প্রকাশিত হয়, তাতে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, মেধাতালিকায় প্রথমদিকের নাম বাদ দিয়ে পিছন দিক থেকে নিয়োগ করা হয়েছে। প্রকৃত যোগ্যরা এর জেরে বঞ্চিত হচ্ছেন, বক্তব্য তাঁদের। এর আগে প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করেন এসএলএসটি প্রার্থীরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই মঞ্চে গিয়ে আশ্বাস দেন। তাঁদের দাবিগুলি খতিয়ে দেখার ক্ষেত্রে সদর্থক ভূমিকা নেওয়ার কথাও জানান। কিন্তু তারপর প্রায় দু’ বছর কেটে গেলেও পরিস্থিতি বদলায়নি বলে দাবি আন্দোলনকারীদের।

আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: উত্তরবঙ্গ সফর শেষেই গোয়ায় পাড়ি মুখ্যমন্ত্রীর, সাগরপারে ঘর গোছাতে ব্যস্ত তৃণমূল

Next Article