Sonagachi & CAA: সোনাগাছির কিস্সা ও সিএএ

Sukla Bhattacharjee |

Jun 27, 2024 | 8:07 PM

Sonagachi: 'সোনাগাছি'- নামটা আজও গোটা বিশ্বের কাছে বিস্ময়! সেই অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতক থেকে পথ চলা শুরু সোনাগাছির। ঠাকুরবাড়ির সঙ্গেও নাম জড়িয়ে রয়েছে সোনাগাছির। নিন্দুকেরা বলেন, ঠাকুরবাড়ির হাত ধরেই সোনাগাছির পথ চলা শুরু। বর্তমানে সিএএ কতটা প্রভাব ফেলবে সোনাগাছিতে? এমনই প্রশ্ন ভিড় করছে এশিয়ার বৃহত্তম বেশ্যাপল্লির যৌনকর্মীদের মধ্যে।

Sonagachi & CAA: সোনাগাছির কিস্সা ও সিএএ
প্রতীকী ছবি।
Image Credit source: TV9 Bangla

Follow Us

দুপুরের খাওয়া সবে শেষ হয়েছে। এঁটো বাসন হাতে নিয়ে কলে যাচ্ছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব মহিলাটি। হঠাৎ করেই বাড়ির গেটের সামনে এসে দাঁড়ালেন হাট্টাগোট্টা জনা কয়েকজন। বেশ গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন করলেন, “ভোটার কার্ড, আধার কার্ড রয়েছে? জবাব “হ্যাঁ” হলে পরের প্রশ্ন, জন্ম সার্টিফিকেট রয়েছে?”
দু-একটা পরিচিত মুখ হলেও বাকিগুলো অপরিচিত। ষণ্ডা চেহারার যুবদের হঠাৎ করে এই প্রশ্নে কিছুটা হকচকিয়ে গিয়েছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব মহিলাটি। হঠাৎ করে কয়েকজন মিলে বাড়িতে এসে এই ধরনের প্রশ্ন করলে অবাক হওয়াটাই স্বাভাবিক। বিশেষত, যেখানে NRC-CAA-র হাওয়া চলছে, অসমের ডিটেনশন ক্যাম্পের কথা শুনেছেন, সেখানে বাড়ির বয়স্কদের কাছে জন্ম সার্টিফিকেটের কথা উঠলে সত্যিই চিন্তার বিষয়।

বছর পাঁচেক আগে CAA অর্থাৎ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন সংসদে পাশ হলেও চলতি বছর লোকসভা ভোটের আগেই সেটা কার্যকর হয়েছে। এদিকে, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ফের বিপুল ভোট নিয়ে তৃতীয়বার সরকার গড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এবার সিএএ নিয়ে যে তোড়জোড় শুরু হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আগেই জানিয়েছেন, সিএএ-র অর্থ নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া নয়, নাগরিকত্ব প্রদান করা। কিন্তু, খবরের কাগজে যে পড়লাম, অসমের ডিটেনশন ক্যাম্পে কতজনকে ঢোকাচ্ছে! সেখানে কী অবস্থাই না হচ্ছে! – চায়ের দোকানে বসে বুড়োদের আড্ডায় এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। আর এসব শুনেই যেন বুকের ভিতর ধরফর শুরু হয়ে যাচ্ছে, কী হবে, ভেবে হাড় হিম হয়ে যাচ্ছে অনেকেরই।

আর হবে না-ই বা কেন! আজও অনেক গৃহস্থ বাড়িতে বয়স্কদের জন্ম সার্টিফিকেট নেই। অনেকেই বহুকাল আগে ওপার বাংলা থেকে ভিটেমাটি ছেড়ে চলে এসেছেন, অনেকের আবার এপার বাংলায় জন্ম হলেও বাড়িতেই দাই-মায়ের হাত ধরে পৃথিবীর আলো দেখেছেন। ফলে জন্ম সার্টিফিকেটের প্রশ্ন-ই আসে না। স্কুল সার্টিফিকেট থাকলেও জন্ম শংসাপত্র নেই। অনেকে আবার স্কুলের গণ্ডিও পেরোননি। ফলে স্কুল সার্টিফিকেটও নেই। তাহলে কি এঁদের সকলের ঠাঁই হবে ডিটেনশন ক্যাম্প? অনেকেরই মনে এই সব প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। সাধারণ গৃহস্থ বাড়ির প্রবীণ সদস্যরা যদি এই সব ভেবে আতান্তরে পড়েন, তাহলে ঘর-পরিবার ছেড়ে আসা সোনাগাছির মহিলাদের কী হবে?

‘সোনাগাছি’- নামটা আজও গোটা বিশ্বের কাছে বিস্ময়! সেই অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতক থেকে পথ চলা শুরু সোনাগাছির। ঠাকুরবাড়ির সঙ্গেও নাম জড়িয়ে রয়েছে সোনাগাছির। নিন্দুকেরা বলেন, ঠাকুরবাড়ির হাত ধরেই সোনাগাছির পথ চলা শুরু। যদিও এর কোনও প্রমাণ ইতিহাসে মেলেনি।

ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর পেশায় আইনজীবী ছিলেন। তবে প্রথমদিকে তাঁর আয় ছিল যৎসামান্য। তাই প্রথম থেকেই উপার্জন বৃদ্ধি ও বিনিয়োগের বিষয়ে তিনি মনোযোগী ছিলেন। নিজের উপার্জিত জমানো টাকা দিয়েই সুদের কারবার শুরু করেন তিনি। ধীরে-ধীরে তাঁর এই তেজারতির ব্যবসা বেশ ফুলে-ফেঁপে ওঠে। তারপর ধীরে-ধীরে ব্রিটিশ বন্ধুদের সঙ্গে রেশম, চিনি, সোডা, নীলের আমদানি-রফতানির ব্যবসা শুরু করেন। এরপর ১৮২২ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিশেষ পদে আসীন হন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর। পরে আফিম বোর্ডের ডিরেক্টরও হন, তিনিই প্রথম ভারতীয় যিনি এই পদে বসতে পেরেছিলেন। স্বাভাবিকভাবে তাঁর বন্ধু মহলে ইংরেজদের সংখ্যা যথেষ্ট ছিল। তিনি ব্রিটিশ শাসকদের এতটাই ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন যে, প্রিন্স উপাধিও অর্জন করেন। এরপর নিজের দক্ষতা এবং কার্য-কুশলতা ও ইংরেজ বন্ধুদের সাহায্যে একে একে বহু ভূসম্পত্তির অধিকারী হন দ্বারকানাথ ঠাকুর। ওড়িশা ও পূর্ববঙ্গে তিনি বহু জমি-বাড়ি কেনেন। তারপর ইংরেজ বন্ধুদের আনন্দদানের মধ্য দিয়ে ব্যবসার প্রসার ঘটাতে নিজের জমিদারি জায়গায় একের পর এক কুঠিবাড়ি নির্মাণ করেন প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। আর এই সব কুঠিবাড়ি থেকেই জন্ম হয় সোনাগাছির।

শোনা যায়, ব্রিটিশ রাজকর্মচারীদের আপ্যায়নের জন্যই দ্বারকানাথ প্রথমে প্রায় ৪৩টি বেশ্যালয়ের মালিক হন। অনেকের মতে, এটা দ্বারকানাথ ঠাকুরের ইংরেজদের তোষণ-নীতি, তবে এটা তাঁর বাণিজ্যিক বুদ্ধি ও দূরদৃষ্টি বললেও ভুল হবে না। যদিও দ্বারকানাথ ঠাকুর সরাসরি এই বেশ্যালয়ের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কি না, তার কোনও প্রমাণ ইতিহাসে মেলেনি।

বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও গবেষক গৌতম বসু মল্লিক জানান, আগেকার দিনে লোকেদের টাকা থাকলে জমি, বাড়ি এবং সোনায় বিনিয়োগ করতেন। দ্বারকানাথ ঠাকুরও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। এছাড়া উত্তরাধিকার সূত্রে বেশ কিছু বাড়ির মালিক হয়েছিলেন তিনি। সম্পত্তি বাড়াতে তিনি সেই বাড়িগুলি ভাড়া দিয়েছিলেন। যাঁদের ভাড়া দিয়েছিলেন, তাঁরা সেই বাড়িগুলিতে কী করতেন তার খোঁজ রাখতেন না দ্বারকানাথ ঠাকুর। অর্থাৎ তাঁর সম্পর্ক ছিল কেবল বাড়ি ভাড়ার টাকার সঙ্গে। ফলে যিনি বাড়িটি ভাড়া নিয়েছেন, তিনি আদতে সেখানে কী করছেন, সে বিষয়ে খোঁজ রাখার প্রয়োজন মনে করেননি তিনি। আর সেই সময়ে একজন বাড়ি ভাড়া নিয়ে তিনি আবার সেটি ভাড়া দিতে পারতেন, এটা আইনসিদ্ধ ছিল। ফলে এভাবেই ওই পুরানো বাড়িগুলি ভাড়া নিয়ে গড়ে ওঠে বেশ্যালয়। তবে দ্বারকানাথ ঠাকুরের সঙ্গে বেশ্যাবৃত্তির সরাসরি কোনও যোগ পাওয়া না গেলেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই সন্দেহ উসকে দেন বলে ইতিহাস সাক্ষ্য। গৌতম বসু মল্লিক জানান, ঠাকুরবাড়িতে থাকা দ্বারকানাথ ঠাকুরের বহু নথি পুড়িয়ে দেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

‘বেশ্যালয়’, ‘পতিতাবৃত্তি’ শব্দগুলি শুনলেই অনেকে ভ্রু কুঁচকান। অনেকেই এটা খুব নিকৃষ্ট পেশা বলে মনে করেন। কিন্তু, সুস্থ সমাজ গঠনের লক্ষ্যে সমাজের এই আদি-পেশারও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। গৌতম বসু মল্লিকের মতে, যৌন চাহিদা খুবই স্বাভাবিক চাহিদা। অনেকের পক্ষেই সেটা সবসময় ঘরে নিবৃত্ত করা সম্ভব হয় না। আগেকার দিনে ব্রিটিশরা ব্যবসার সূত্রে দীর্ঘদিন কলকাতায় এসে পড়ে থাকতেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের যৌন ক্ষুধা নিবৃত্তি করতে এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ-স্বাভাবিক রাখতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন বারাঙ্গনারাই। ফলে তৎকালীন সময়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক কেন্দ্র, কলকাতায় হুগলী নদীর তীর ধরে বিভিন্ন পুরানো বাড়ি ভাড়া নিয়ে গড়ে ওঠে একাধিক বেশ্যালয়। কেবল বারাঙ্গানাদের মাধ্যমে ইংরেজদের আনন্দদান নয়, তৎকালীন এদেশি ‘বাবু’রাও একাধিক উপপত্নী রাখতেন এই সব কোঠাবাড়িতে। আবার অনেক সাধারণ ব্যক্তিও যৌন চাহিদা নিবৃত্তি করতে নিয়মিত আসতেন এই বারাঙ্গনাদের কুঠিতে। এখনও যেমন ট্রাক চালক থেকে বিশিষ্ট ব্যক্তিও আসেন সোনাগাছিতে।

নামটা শুনতে ‘সোনাগাছি’ হলেও আদতে শব্দটা হল, ‘সোনাগাজি’। নামটা এসেছে সোনাউল্লা নামে এক ইসলাম ধর্ম প্রচারকের নামে তৈরি এক দরগা থেকে। এখনকার ‘সোনাগাছি’ নামে পরিচিত যৌনপল্লি গড়ে উঠেছিল কলকাতার শহর হয়ে ওঠারও অনেক আগে থেকে। পাশ দিয়ে বয়ে চলা হুগলি নদী এবং পার্শ্ববর্তী সুতানুটির হাট ছিল ওই এলাকার একটা বড় ব্যবসাকেন্দ্র। আর নদীর ঠিক ধার ধরেই ছিল সে যুগের তীর্থযাত্রীদের চলাচলের রাস্তা, যা ইংরেজ যুগে পরিচিত হয় চিৎপুর রোড নামে। ব্যবসাকেন্দ্রে আসা মানুষজন ও তীর্থযাত্রীদের মনোরঞ্জনের জন্য ধীরে ধীরে একটা যৌনপল্লিও গড়ে ওঠে ওই অঞ্চলে। বর্তমান শোভাবাজার অঞ্চলের কাছাকাছি সেই যৌনপল্লি পরবর্তীকালে আরও বড় যৌনপল্লিতে পরিণত হয়।

বর্তমানে শোভাবাজার, বি.কে পাল অ্যাভিনিউ এলাকায় গেলে দেখা যাবে, গলির বাঁকে, গলির মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন বয়সের মেয়েরা। কারও বয়স ২০-২২ বছর তো কারও বয়স ৪০-এর ঘরে। অধিকাংশেরই পরনে শাড়ি। তবে শাড়ির আঁচল সরে গিয়ে দেখা যাচ্ছে ব্লাউজে ঢাকা ডানদিকের বক্ষ, অনেক সময় আঁচল আর ব্লাউজের মাঝখান দিয়ে বক্ষ যুগলের খাঁজও ফুটে উঠেছে। ব্লাউজের পিঠও অনেকটাই কাটা, আবার কারও ফাঁকা পিঠে ঝুলছে রঙচঙে লডকন। ব্লাউজ শেষে আবার কোমরের উপর অংশ অনাবৃত। সামনে কুঁচির উপর থেকেও উঁকি দিচ্ছে থলথলে পেটের নাভি। যারা চুড়িদার পড়ে রয়েছে, তাদেরও চুড়িদারের গলা ও পিঠের অনেকটাই অংশ ফাঁকা। এর সঙ্গে রয়েছে গালে-ঠোঁটে উচ্চ মেকাপ। কারও চুল খোলা তো কারও খোঁপা করা। চোখে-মুখে শরীরী আহ্বান। অনেকের মুখে অবশ্য বিরক্তির ছাপ। আবার কারও চোখে ক্লান্তি। এরকম অবিন্যস্ত শাড়ি, উচ্চ মেকাপ এবং দাঁড়ানোর ভঙ্গিমা দেখেই বোঝা যাচ্ছে, এরা ঘরোয়া কোনও রমণী নয়, এরাই বারাঙ্গনা। কখন, কোন বাবু আসে তার জন্য অপেক্ষা করছে। কেবল বাবু বললে অবশ্য এদের ছোট করা হবে। বলা ভাল, ‘লক্ষ্মী’লাভের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।

এই বারাঙ্গনারা কেউ হঠাৎ করে বা জন্ম থেকে বারাঙ্গনা হয়ে যায়নি। কেউ স্বামী-শ্বশুরবাড়ির লোকেদের অত্যাচারে বাধ্য হয়ে ঘর-সংসার ছেড়েছে তো কেউ প্রতারিত হয়েছে। তারপর পেটের দায়ে জীবন চালাতে হয়ে উঠেছে দেহ-পশারিনী। অনেকে আবার জীবনটা বুঝে ওঠার আগেই দালালের হাতে পড়ে অন্ধকার গলির মধ্যে বিক্রি হয়ে গিয়েছে। এরা এমন পরিস্থিতিতে ঘর-সংসার ছেড়ে সোনাগাছিতে এসে পড়েছে, যখন পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে আসার সুযোগ পায়নি। ফলে নাগরিকত্বের প্রমাণ নিয়ে যাচাই শুরু হলে কী হবে এই মানুষগুলোর? তাহলে কী এদের সকলকে ঘর ছাড়ার পর এবার ‘পল্লি’ও ছাড়তে হবে? আবার অনিশ্চিত জীবন? সিএএ কতটা প্রভাব ফেলবে সোনাগাছিতে? এমনই প্রশ্ন ভিড় করছে এশিয়ার বৃহত্তম বেশ্যাপল্লির যৌনকর্মীদের মধ্যে। বলা যায়, যত দিন যাচ্ছে, ততই অজানা আতঙ্কের মেঘ ঘিরে ধরছে তাঁদের। যেন তাঁদের মাথার উপর সিএএ-র খাঁড়া ঝুলছে? কোপ পড়তে পারে যে কোনও সময়ে!

সিএএ নিয়ে কতটা আতঙ্ক আপনাদের মধ্যে? সোনাগাছির এক দেহ-পশারিনীর কাছে প্রশ্ন ছুঁড়লে তাঁর পাল্টা জবাব, “সেই কবে বাবার ঘর ছেড়ে এখানে এসে পড়েছিলাম। তারপর অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। এটাকেই ঘর, ব্যবসা বলে মেনে নিয়েছি। আবার এখান থেকেও খেদিয়ে দেবে? আবার যাব কোথায়? আমাদের কি একটু শান্তি নেই?”

যদিও সোনাগাছি-সহ বিভিন্ন পতিতাপল্লির যৌনকর্মীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ‘দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি’ সিএএ নিয়ে আতঙ্ক কাটানোর মরিয়া চেষ্টা করছেন। চার বছর আগে, ২০১৯-এ সিএএ সংসদে পাশ হওয়ার আগে থেকেই যৌনকর্মীদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড-সহ যথাযথ পরিচয়পত্র বের করার চেষ্টা করেছে ‘দুর্বার’। যৌনকর্মীদের আতঙ্ক কাটাতে তাঁদের কাউন্সিলিংও করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের অন্যতম কর্ণধার মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “চার বছর আগে যখন প্রথম সিএএ আইন হয়, তখন এখানকার মেয়েরা কিছুটা ভয়ই পেয়েছিল। কাজে মন বসছিল না। যখনই দু-জন, চারজন এক জায়গায় জড়ো হL, তখনই সিএএ নিয়ে আলোচনা করছিল। সিএএ কী? খায় না মাথায় দেয়? কিছুই প্রথমে বুঝতে পারছিল না। ফলে এখানে যাঁরা আসতেন, কারও কারও বাঁধা খদ্দের রয়েছে, তাঁদের কাছেও সিএএ নিয়ে জিজ্ঞাসা করছিল। সিএএ নিয়ে তাদের মধ্যে যথেষ্ট আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। তখন আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে আলাদাভাবে ওদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলি। বেশ কয়েকবার সন্ধ্যায় ওদের একসঙ্গে ছাদে বসিয়ে বিষয়টি বোঝানো হয়েছিল। কাউন্সিলিংও করা হয়েছিল। এখন আর ওদের মধ্যে অতটা আতঙ্ক নেই। তবে যাদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড এখনও নেই তারা কিছুটা চিন্তিত রয়েছে।” তাহলে কী সত্যিই এই ‘পল্লি’ ছেড়ে চলে যেতে হবে? অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে এখানে এসে একরকমভাবে নিয়তির লিখন মেনে নিয়েছিল যে মহিলারা, আবার কী নতুন কোনও লড়াই আসতে চলেছে? জবাব খুঁজছে অভাগা মেয়েগুলো।

Next Article