E-Census: ই-সেনসাস কি CAA-NRC চালুর প্রথম ধাপ? কী বলছে রাজনৈতিক মহল

TV9 Bangla Digital | Edited By: Soumya Saha

May 10, 2022 | 10:51 PM

Amit Shah: প্রশ্ন উঠছে, এই ই-সেনসাসের নেপথ্যে কি রয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন? ২০২৪ সালের আগে আদমসুমারি রেজিস্টার তৈরি হলে, সেই ই-সেনসাস কি হয়ে উঠবে জাতীয় নাগরিকপঞ্জির ভিত্তি? কী বলছে রাজনৈতিক মহল?

E-Census: ই-সেনসাস কি CAA-NRC চালুর প্রথম ধাপ? কী বলছে রাজনৈতিক মহল
ই সেনসাসের হাত ধরেই কি আসবে এনআরসি?

Follow Us

নয়া দিল্লি ও কলকাতা : শেষ আদমসুমারি হয়েছে ২০১১ সালে। দশ বছর অন্তর জন গণনা হয়ে থাকে। সেই মতো ২০২১ সালে আবার আদমসুমারি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতির কারণে তা পিছিয়ে গিয়েছে। এবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন,ই-সেনসাস হবে। জন গণনা প্রক্রিয়া যাতে আরও নিখুঁত করা যায়, এবং আরও বিজ্ঞাত ভিত্তিক উপায়ে করা যায়, তার জন্যই এই ই-সেনসাসের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কেমন হবে এই অনলাইন আদমসুমারি? জানা গিয়েছে, সেনসাসের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাবে মোবাইলেই। এক ক্লিকেই অনলাইন সেনসাসের যাবতীয় প্রয়োজনীয় তথ্য রেজিস্টার করা যাবে। আদমসুমারির সময় রেজিস্টার তৈরি হবে। প্রাপ্তবয়স্ক হলেই ভোটার তালিকায় নাম উঠে যাবে। মৃত্যুর পর নিজে থেকেই নাম বাদ পড়ে যাবে। এই অনলাইন আদমসুমারির রেজিস্টার পরবর্তী ২৫ বছরের জাতীয় নীতির ভিত্তি হতে চলেছে। উন্নয়নের গতি,তফসিল জাতি ও উপজাতির জীবন, সবই নথিভুক্ত থাকবে এখানে।

উপরের তথ্যগুলি থেকে এটা স্পষ্ট, যে এগুলি দেশের জাতীয় নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে অনেকটা সুবিধা করবে। কিন্তু এই নিয়ে বেশ বিতর্কও তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, এই ই-সেনসাসের নেপথ্যে কি রয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন? ২০২৪ সালের আগে আদমসুমারি রেজিস্টার তৈরি হলে, সেই ই-সেনসাস কি হয়ে উঠবে জাতীয় নাগরিকপঞ্জির ভিত্তি? কারণ, দেশে বসবাসকারী বৈধ নাগরিকদের তালিকা পেয়ে যাবে কেন্দ্র, যা সম্পূর্ণ নির্ভুল ও ত্রুটিমুক্ত হবে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, এই ই-সেনসাসের রেজিস্টার কি এনআরসি তৈরির নীল নকশা? রাজনৈতিক মহলে এমন বেশ কিছু প্রশ্ন ঘিরে জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে।

এই বিষয়ে বিজেপি নেতা কণক দেবনাথ জানিয়েছেন, “কোভিডের কারণে এই কাজটি অনেকদিন ধরে স্থগিত ছিল। অতীতের আদমসুমারিগুলির মধ্যে একেবারে সঠিক ও নির্ভুল তথ্য ছিল না। ভাষা-ভাষা জনভিত্তির উপর নির্ভর করে সেটি দেওয়া হয়েছে। এখনও ভারতের অনেক গ্রাম আছে, যেখানে জন্ম ও মৃত্যু হলে, চট করে কোনও খবর জোগাড় করতে পারি না। কিন্তু ই-সেনসাসের ফলে যাঁর মৃত্যু হল বা যাঁর জন্ম হল, সেই তথ্য পাওয়া যাবে। সেই সঙ্গে পারিপার্শ্বিক মানুষের জীবনযাত্রার তথ্যগুলিও পাওয়া যাবে। আদিবাসী অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা, পানীয় জলের সমস্যা কোথায়, সেই সব জানা যাবে। এই সিদ্ধান্ত আরও আগে হলে ভারতকে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যেত।”

তৃণমূল নেতা তৃনাঙ্কুর ভট্টাচার্য অবশ্য বিজেপির এই সিদ্ধান্ত আদৌ কতটা বাস্তব সম্মত হবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “যখনই কোথাও নির্বাচন আসে, বা তখনই বিভিন্ন সময় সিএএ, এনআরসি হাওয়া তুলে রাখতে চায়।” এটি বিজেপির একটি নির্বাচনী স্টান্ট বলেই মনে করছেন তিনি। তৃণমূল নেতা আরও বলেন, “বিজেপি ধর্ম, জাত, বর্ণের বিনিময়ে ভারতে ভাঙার চেষ্টা করছে।”

সিপিএম নেতা সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় এই নিয়ে বলেন, ” অমিত শাহের মুখ থেকে এই কথাটি আসছে বলে সবরকমের দুশ্চিন্তা আসছে। কারণ, তিনি অসমে গিয়ে এই কথা বলেছেন। আমাদের দেশে জনগণনাভিত্তিক রাজনীতির একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং এর সূত্রপাত ওই অসমেই। এখন প্রশ্ন, এনআরসির সঙ্গে ই-সেনসাসের কোনও সম্পর্ক আছে কি? আমাদের দেশে জন্ম ও মৃত্যুর পঞ্জিকরণ একটি আইনের মাধ্যমে হয়। সেই আইনের একটি সংশোধনী বর্তমানে পেন্ডিং রয়েছে। সেখানে বলা হচ্ছে, এই তথ্যগুলি প্রয়োজনে এনপিআর বা অন্যান্য কাজে সংযুক্ত করে দেওয়ার কথা।”

সেইসঙ্গে রাজ্যের শাসক শিবিরকেও আক্রমণ শানান তিনি। বলেন, “২০১৫ সালে তৃণমূল পরিচালিত হাওড়া পুরনিগম এনপিআর ডেটাবেস আপডেট করেছে। অর্থাৎ, এই প্রক্রিয়াটি সারা দেশে এবং পশ্চিমবঙ্গে চলছে। আসল উদ্দেশ্য হল, তথ্য সংগ্রহ করা। আজকের দিকে সব ডেটা যদি একজায়গায় চলে আসে, তাহলে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার যে অধিকার প্রত্যেক মানুষের আছে, সেটি খর্ব হতে পারে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভময় মৈত্র অবশ্য বলছেন, “এটি একেবারেই নতুন সিস্টেম নয়। জন গণনা অনেক পুরানো বিষয়। যত কম্পিউটার ও ইন্টারনেট এগোচ্ছে, এই জনগণনা সঠিকভাবে করতে হবে। কোভিডের কারণে কিছুদিন পিছিয়ে গিয়েছে, রাষ্ট্রের দায়িত্ব জনগণনা করা, সেটা করতে হবে।” সেই সঙ্গে তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে তিনি বলেন,” রাষ্ট্র যখন মানুষের সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে, তার দুটি দিক থাকে। মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, তাদের মাথায় ছাদ দেওয়া, তাঁদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা, বয়স্কদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সেগুলি দেখার ক্ষেত্রে এই তথ্য কাজ লাগে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বা তার আগে দেখা গিয়েছে মানুষের তথ্য নিয়ে তার ক্ষতি করা হয়েছে। ফ্যাসিবাদী শক্তির কথাও আমরা জানি। সুতরাং, তথ্য কীভাবে ব্যবহৃত হবে, রাজনীতি কীভাবে চলবে, তা নিয়ে তর্ক বিতর্ক রয়েছে। তবে ভারত একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র বলে আমি মনে করি এবং এটি একটি গণতন্ত্রে চলে। আমি বিশ্বাস করি এই তথ্য সংগ্রহের পর মানুষের উপকারই হবে।”

Next Article