কলকাতা: ফের বিপত্তিতে স্কুল শিক্ষক ও শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ উপদেষ্টা কমিটির চার কর্তা। বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের পর এবার এই মামলা শুনল না বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি ও বিভাস পট্টনায়েকের ডিভিশন বেঞ্চ। ব্যাক্তিগত কারণে তিনি মামলা শুনবেন না বলে জানিয়েছেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি। ফলে কলকাতা হাইকোর্টে নিয়োগ দুর্নীতি জট আরও বাড়ল। উল্লেখ্য, সোমবারই এই মামলা শুনতে চায়নি হরিশ ট্যান্ডনের ডিভিশন বেঞ্চ। এরপর মামলাটি যায় প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের কাছে। নিয়ম অনুযায়ী, প্রধান বিচারপতিই এক্ষেত্রে ঠিক করেন কোন ঘরে মামলাটি যাবে। তারপর তিনিই ঠিক করে দেন, বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চে। কিন্তু তিনিও ব্যস্ত থাকার কারণে মামলা থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর ফের প্রধান বিচারপতি মামলাটি পাঠান বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চে। কিন্তু তিনিও অন্য মামলায় ব্যস্ত থাকার কারণ দর্শিয়ে সরে দাঁড়ান। (উল্লেখ্য, এই ডিভিশন বেঞ্চই এসএসসি-র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহাকে রক্ষাকবচ দিয়েছিল।) এরপরই প্রধান বিচারপতি বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতির বিভাস পট্টনায়েকের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলাটি পাঠান। মঙ্গলবার আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল, জয়মাল্য বাগচীর ঘরে মামলাটি উঠবে। তবে শেষ মুহূর্তে এই মামলা থেকে সরে দাঁড়ালেন বিচারপতি। আবারও চার এসএসসি কর্তার পক্ষ থেকে আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির ঘরে গিয়েছেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, ফের তিনি এই মামলাটি কারোর ঘরে পাঠাবেন। প্রশ্ন উঠছে, আদৌ কি কোনও বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলাটি গ্রহণ করবে।
মামলার প্রেক্ষাপট
শুক্রবারের শুনানিতে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ স্পষ্ট বলে দিয়েছিল, যদি এই চার কর্তা সিবিআই দফতরে না যান, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে আরও কড়া পদক্ষেপ করা হবে। কিন্তু দেখা যায়, চার কর্তা গত শুক্রবার সিবিআই দফতরে যাননি। এদিন সোমবার ফের এই মামলার শুনানি ছিল সিঙ্গল বেঞ্চে।
বিতর্কিত চার কর্তা সিঙ্গল বেঞ্চে আবেদন করেন, যাতে তাঁদের অন্তত একটা দিন সময় দেওয়া হয়। তাঁরা যুক্তি দেখান, রায়ের অর্ডার কপি তাঁরা কেউই হাতে পাননি। তাই তাঁদের একটা অতিরিক্ত দিন দেওয়া হোক। কিন্তু বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সেটা একেবারেই মানতে চাননি।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় অত্যন্ত বিরক্তি প্রকাশ করেন তাতে। তাঁর বক্তব্য, চার কর্তা মোটেও ওতটা ‘ইনোসেন্ট’ নন, যে তাঁরা আদালতের নির্দেশ সম্পর্কে অবগত নন। তাঁর যুক্তি, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তাঁদের সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়েছে। রাজ্য সরকারে আলাদা করে আপিল করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, এই চার জন এখনও পর্যন্ত সরকারি পদে বহাল রয়েছেন। তাহলে রাজ্য সরকারের কোনও সিদ্ধান্ত তাঁদের কাছে কীভাবে পৌঁছছে না? চার কর্তার বক্তব্যে একেবারেই সন্তুষ্ট হতে পারেননি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ। সিবিআই দফতরে যাওয়ার যাওয়ার ক্ষেত্রে নির্দেশ বহাল রাখেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
এরই মধ্যে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন ওই চার কর্তা। যেহেতু এসএসসি সংক্রান্ত ১০ টি মামলা থেকে সোমবার সকালেই সরে দাঁড়ান বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন, তাই সেটি প্রধান বিচারপতির কাছে যায়। এরপর একই দিনে তিন বিচারপতি পরপর এই মামলা থেকে সরে দাঁড়ান।
এরপর বিচারপতিরা মামলা শুনতেই অনাগ্রহী হওয়ায় চাপ বাড়ছে এসএসসি-র চার কর্তার।