কলকাতা: নিয়োগের ছত্রে ছত্রে দুর্নীতি। আর তাই ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ প্যানেলই বাতিল করেছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ সাব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ। এক রায়ে চাকরি হারিয়েছেন ২৫ হাজার ৭৫৩ জন শিত্রক। আইনজীবীদেরই একাংশের মতে, এই রায় ‘ঐতিহাসিক’। শেষ কবে এত বড় রায় দিয়েছিল হাইকোর্ট, সোমবার প্রাচীন আদালতের আনাচে কানাচে দাঁড়িয়ে সেই বিষয়েই কথা বলতে গিয়েছে প্রবীণ আইনজীবীদেরও। ২৭২ পাতার অর্ডারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৬ সালের নিয়োগে ১৭ রকমের বেনিয়ম হয়েছিল।
১৭ রকম বেনিয়মের ফর্দ
১. রুদ্ধদ্বার বৈঠকে নাইসা-কে ওএমআর শিট স্ক্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আইন অনুযায়ী, সেটা অনুচিত। রুদ্ধদ্বার বৈঠকে কেন এত বড় দায়িত্ব দেওয়া হবে?
২. ওএমআর শিট স্ক্যানের দায়িত্ব অবশ্য নাইসা নিজের হাতে রাখে নি। নাইসা আবার সেই দায়িত্ব দেয় ডেটা স্ক্যানটেক নামে একটি বেসরকারি সংস্থাকে।
৩. ওএমআর স্ক্যান হয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশনের অফিসের ঘরে। সেখানে ডেটা স্ক্যানটেক কোম্পানিকে ওএমআর শিট স্ক্যান করতেই দেয়নি এসএসসি। সেটা নিজে করে।
৪. পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্রের হার্ডকপি নষ্ট করে ফেলে এসএসসি।
৫. এসএসসি যে ওএমআর শিট স্ক্যান করে, তারও কোনও প্রমাণ রাখা হয়নি। কারণ এসএসসি-র সার্ভারে কোনও স্ক্যান কপি নেই। তদন্ত চলাকালীন কোনও স্ক্যান বা মিরর কপি পায়নি সিবিআই।
৬. ওএমআর শিটের কোনও স্ক্যানড কপি সার্ভারে না রেখেই হার্ড কপি নষ্ট করে ফেলা হয়েছে।
৭. চাকরিপ্রার্থীদের উত্তরপত্রের স্ক্যানড কপি দিয়েছে এসএসসি।
৮. সুপার নিউমেরিক পোস্ট। শূন্যপদের থেকেও অতিরিক্ত পদে নিয়োগ করা হয়েছে।
৯. প্যানেল বহির্ভূত নিয়োগ করা হয়েছে।
১০. মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেল থেকে চাকরি হয়েছে।
১১. র্যাঙ্ক জাম্প- অর্থাৎ মেধাক্রম না মেনেই নিয়োগ করা হয়েছে। পিছনের সারির অনেককেই ওপরে তুলে চাকরি দেওয়া হয়েছে।
১২. এমনকি সাদা খাতা জমা দিয়েও চাকরি হয়েছে।
১৩. মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেল থেকে কাউন্সিলিং পর্যন্ত হয়েছে।
১৪. হাইকোর্ট বারবার জানতে চাইলেও, রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বেআইনিভাবে নিযুক্তদের চিহ্নিত করতে পারেনি পর্ষদ কিংবা এসএসসি।
১৫. বেআইনিভাবে নিযুক্তদের চাকরি বাঁচাতে অতিরিক্ত পদ বাড়ানোরও আবেদন করেছিল এসএসসি।
১৬. প্রাপ্ত নম্বর-সহ মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়নি।
১৭. নিয়োগের সম্পূর্ণ নিয়মই মানা হয়নি।