কলকাতা: দেউচা, পাঁচামি, দেওয়ানগঞ্জ, হরিণশিঙা কয়লা খনি অঞ্চলে বিতর্ক কার্যত অতীত। স্থানীয় গ্রামবাসীরা এবং জমিদাতারা যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন সেগুলিও প্রায় স্থিমিত। ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের তরফে ওই এলাকায় জমিদাতা বা স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। কোনও জমির মালিক জমি দিতে ইচ্ছুক কি না, কত জমি দিচ্ছেন, সেই জমিদাতারা নির্দিষ্ট হারে ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন কি না, পরিবারের একজনকে যে চাকরি দেওয়ার কথা সেটাও নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া চলছে কি না, এ সবই সমীক্ষার মধ্যে রেখেছে রাজ্য প্রশাসন। তবে প্রশাসনের কর্তাদের আশঙ্কা, সুষ্ঠুভাবে সমীক্ষার কাজ চালানোর পরেও তথ্যে গরমিল অথবা কারচুপি থাকতে পারে। সেই কারণে সমীক্ষায় উঠে আসা নথিগুলিকে ডিজিটাইজেশন বা অ্যাপের মধ্যে রাখতে চাইছে প্রশাসন। বিষয়টিকে মাথায় রেখে শুধুমাত্র দেউচা-পাঁচামির জন্য নতুন সফটওয়্যার তৈরি করল রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন নিগম। রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন নিগমের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এই অত্যাধুনিক সফ্টওয়্যার এর মাধ্যমে অ্যাপ তৈরি করে সেখানে যাবতীয় তথ্য সঠিকভাবে মজুত করে রাখবে। যে অ্যাপটির নাম দেওয়া হয়েছে “বীক্ষণ”।
রাজ্য বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে খবর, ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড় কয়লা খনি এই দেউচা-পাঁচামি। প্রায় ৩৪০০ একর জমি জুড়ে কয়লা খনি রয়েছে। বিগত দিনে এখানে কয়লা খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের বিষয়ে নানান জটিলতা তৈরি হয়। জমিদাতারা আন্দোলনে নামেন। রাজ্য প্রশাসন অবশেষে সেই জমিদাতাদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন। মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস জানিয়েছেন, মোট ৪৮৩৮ টি পরিবারের মধ্যে ৪৩২৮ টি পরিবার জমি দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়ে কাগজে সই করেছেন। তাই কয়লা উত্তোলন এবং সেই কয়লা বিদ্যুতের কাজে ব্যবহার করা আর কোন সমস্যার মধ্যে থাকছে না। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের কর্তারা বলেন, “ইতিমধ্যেই ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসন সংক্রান্ত বিষয়, জমির দাম (৩৯ লক্ষ টাকা প্রতি একর) ইত্যাদি বিষয় প্যাকেজের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সমীক্ষার পর তথ্য কারচুপির আশঙ্কা কোনও মতেই বাইরে রাখা যাচ্ছে না। তাই এই অ্যাপের মধ্যে যাবতীয় রেকর্ড অর্থাৎ কারা জমি দিতে ইচ্ছুক, তাঁদের আবেদনপত্র, জমির তথ্য, পরিবারের তথ্য, যাঁকে চাকরি দেওয়ার জন্য পরিবার মনোনীত করেছেন তাঁর তথ্য। এই ধরনের বিভিন্ন বিষয় রেকর্ড সহকারে মজুত থাকবে। একইসঙ্গে জমির দাম হিসাবে কে কত টাকা পেলেন, পরিবারের কে চাকরি পেলেন সেই তথ্য সঠিকভাবে রেকর্ড করা থাকবে। জমিদাতা পরিবারের সম্পদ নথিকরণের জন্য বিদ্যুৎ দফতরের সমীক্ষকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করে এই অ্যাপে নথিবদ্ধ করে রাখবেন।”
পাশাপাশি এই সফ্টওয়্যার বা অ্যাপের গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, এই সফ্টওয়্যার এর মধ্যে সীমানা নির্দিষ্ট করে রাখা রয়েছে। অর্থাৎ লক্ষণ রেখা। কয়লাখনি এলাকার বাইরের জমিতে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করলেও সেই তথ্য সফ্টওয়্যার এর মধ্যে আপলোড করা যাবে না। যে তথ্য সংগ্রহ করা হবে তার জিও ট্যাগিং থাকবে। অর্থাৎ যে বাড়িতে যাওয়া হবে তার অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমাংশ নথিভুক্ত হয়ে যাবে। অ্যাপের মধ্যে নথিভুক্ত হবে স্থানাঙ্ক, জমিদাতার পাকা বাড়ি না কাঁচা বাড়ি, বাড়িতে কত তলা, কতগুলি ঘর রয়েছে, মাটির না কংক্রিটের, বাড়ির জমিতে কতগুলি গাছ রয়েছে, রান্নাঘর কি ধরনের। এই ধরনের সব তথ্য মজুত করা থাকবে সফ্টওয়্যার এর মধ্যে। যে তথ্য মূল সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবে এবং সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করেই পরবর্তীকালে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জেলাশাসকের নেতৃত্বে বিভিন্ন সরকারি দফতরের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি টেকনিক্যাল দল তৈরি করা হয়েছে। যারা এই সব তথ্য বিশ্লেষণ করে ক্ষতিপূরণের মাপকাঠি ঠিক করবেন। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটিকে নিয়ে কোনও রকম দুর্নীতি বা কারচুপি চাইছেন না রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা। সে কারণেই এই ধরনের অত্যাধুনিক সফটওয়্যার তৈরি করা হল বলেই মনে করছে প্রশাসনিক মহল।
এ ছাড়াও বিদ্যুৎ দফতর নিজেদের প্রশাসনিক কাজের জন্য এবং কোন কোন ইউনিটে কত বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে, কত কয়লা লাগছে, কত সময় ধরে কাজ হচ্ছে যাবতীয় বিষয় হাতের নাগালে রাখার জন্য আরও একটি অত্যাধুনিক সফটওয়্যার তৈরি করেছে। এই সফটওয়্যার দিয়ে একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে “অণুবীক্ষণ”। রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন নিগমের অফিসে বসে পাঁচজন ইঞ্জিনিয়ার এই অ্যাপের মাধ্যমে যাবতীয় নজরদারি রাখবেন।