কলকাতা: বার বার অবস্থান বিক্ষোভে মেলেনি সুরাহা। গভীর রাত অবধি অধ্যক্ষ ঘেরাও থেকে অধ্যক্ষের পদত্যাগ চেয়ে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (RG Kar Medical College Hospital) চত্বরজুড়ে পোস্টার। কোনও কিছুতেই মেটেনি দাবি। এবার অনশনের পথ বেছে নিলেন চিকিৎসক-পড়ুয়ারা। রবিবার রাত ৯টা থেকে অনশনে বসলেন ৩০ জন পড়ুয়া। রীতিমতো অনশন মঞ্চ তৈরি করে অবস্থানে বসেন তাঁরা।
গত কয়েকদিনে বার বার শিরোনামে উঠে এসেছে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাম। গত ১ অক্টোবরই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষকে ঘেরাও করে দফায় দফায় বিক্ষোভে সরগরম হয়ে ওঠে হাসপাতাল চত্বর। মাঝরাতে রোগী কল্যাণ কমিটির চেয়ারম্যান সুদীপ্ত রায়ের উপস্থিতিতে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের মধ্যে ঘণ্টা তিনেকের আলোচনা চলে।
সেই আলোচনা থেকে বেরিয়ে সুদীপ্ত রায় জানান, পড়ুয়ারা সন্তুষ্ট। সমাধান সূত্র বেরিয়ে গিয়েছে বলে রাত আড়াইটে নাগাদ বেরিয়ে যান রোগী কল্যাণ কমিটির চেয়ারম্যান সুদীপ্ত রায়। কিন্তু চেয়ারম্যানের সেই বক্তব্য মানতে নারাজ বিক্ষোভকারী পড়ুয়ারা। দাবি না মানায় ও আলোচনায় কোনও রকম সমাধান সূত্র না মেলার দাবি তুলে অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের গাড়ির সামনে ফের অবস্থান-বিক্ষোভে বসে পড়েন তাঁরা। গভীর রাত অবধি এই প্রতিবাদ চলে। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ ঘেরাওমুক্ত হন সন্দীপ ঘোষ।
এর আগেও আরজি করের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে একাধিকবার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ দেখান ছাত্র-ছাত্রীরা। মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসে পোস্টারও পড়ে। যেখানে অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবি করা হয়। সেই ঘটনা ঘিরে হাসপাতালের এমএসভিপি সঞ্জয় বশিষ্ঠকে অসুস্থ হয়ে কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি পর্যন্ত হতে হয়। এই টানাপোড়েনের প্রসঙ্গে এসএসকেএমে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকেও উঠে আসে। কী নিয়ে আরজি করে গোলমাল, কেন দিনের পর দিন এই অশান্তি চলছে তা নিয়ে আলোচনা হয়।
চিকিৎসক পড়ুয়াদের অভিযোগ, অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ স্বৈরাচারী মনোভাব দেখাচ্ছেন। ১২ দফা দাবিতে চলা আন্দোলনে হস্টেল সমস্যার বিষয় যেমন ছিল, তেমনই ছিল চিকিৎসক পড়ুয়াদের হেপাটাইটিস বি টিকাকরণ না হওয়া, কলেজ চত্বরে ছাত্র-ছাত্রীদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ এবং সর্বোপরি হস্টেল কমিটি গঠন নিয়ে চিকিৎসক পড়ুয়াদের অসন্তোষ।
গত মাসে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে একাধিক বিতর্কিত পোস্টার দেয় বিক্ষোভকারীরা। প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে পড়া সেই পোস্টারগুলি খুলে নেওয়ার নির্দেশ দেন এমএসভিপি সঞ্জয় বশিষ্ঠ। এরপরই সঞ্জয় বশিষ্ঠকেও ঘেরাও করা হয়। এমনকী, সুপারকে তালা বন্ধ করে রেখে দেওয়া বলেও দাবি হাসপাতালের একটি সূত্রের। তিনি সুগারের রোগী। জলও পর্যন্ত খেতে পারেননি বলে গুরুতর অভিযোগ ওঠে। এরপর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় প্রথমে ইমারজেন্সি, এবং পরে আইসিইউ-তে ভর্তি করা হয়।
করোনা, ডেঙ্গু-সহ একাধিক ফ্লুয়ের দাপটে যখন বাংলা কার্যত ত্রস্ত, তখন কলকাতার প্রথম সারির একটি মেডিক্যাল কলেজে এ ধরনের অব্যবস্থা নিঃসন্দেহে প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। এতদিন সাধারণ অবস্থান চলছিল, এদিন রাত থেকে অনশনও শুরু করেছেন আন্দোলনকারীরা। পরিস্থিতি যে আরও ঘোরাল হবে, তা অনুমেয়।
আরও পড়ুন: COVID 19: উৎসবের বাংলায় মাথাচাড়া দিচ্ছে করোনাও! সাবধান হলেই এড়ানো যাবে বিপদ