কলকাতা: স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড (Student Credit Card) নিয়ে জটিলতা বহাল রইল শনিবারের বৈঠকের পরও। পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ছাড়া আর কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক এখনও পর্যন্ত তাদের সদর দফতর থেকে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণ (Loan) দেওয়ার জন্য অনুমোদন পায়নি। এদিন স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড নিয়ে মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকে এমনটাই জানান বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা।
স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডে ঋণ দেওয়া নিয়ে শনিবার যে বৈঠক হয়, সেখানে ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা জানান, সদর দফতর থেকে অনুমোদন পেলেই স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের জন্য তাঁরা ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করবেন। বৈঠকে রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী জানান, তাঁরা প্রফেশনাল কোর্সগুলির প্রতিই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। কারণ, তাঁদের এ ক্ষেত্রেই বেশি করে সাপোর্ট দরকার। এই বিষয়টি নিয়ে ব্যাঙ্কগুলির একটু ভাবনা চিন্তা করা দরকার।
এখনও পর্যন্ত ৯২০০০টি আবেদন এসেছে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের জন্য। এদিকে ঋণ দেওয়ার জন্য এখনও অবধি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির মধ্যে কেবল মাত্র পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কই এগিয়ে এসেছে। বাকিদের কাছে এখনও সদর দফতর থেকে অনুমোদন না আসায় কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে রাজ্য। যদিও শনিবারের বৈঠকে ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে সদর দফতর থেকে সবুজ সঙ্কেত এলেই তাঁরাও ঋণ দেওয়া শুরু করবেন।
একুশের বিধানসভা ভোটের আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কথা দিয়েছিলেন। ভোটের ফল ঘোষণার পর তৃতীয় বাংলার সিংহাসনে তৃণমূল সরকার বসার পরই মাস দেড়েকের মধ্যে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের কাজ শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী।
পরিকল্পনামাফিক, রাজ্যের সমবায় ব্যাঙ্ক, রাজ্যের অনুমোদিত কেন্দ্রীয় এবং জেলা সমবায় ব্যাঙ্ক, রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি থেকে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা পাওয়া যাবে। ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের পাশাপাশি সুদের হারেও ভর্তুকি পাওয়া যাবে। অর্থাৎ, ব্যাঙ্কের সুদের হার যতই ধার্য্য থাকুক না কেন, যিনি ঋণ নিচ্ছেন, তিনি কেবল ৪ শতাংশই সুদ দেবেন। সুদের হারের বাকি অঙ্ক দেবে রাজ্য সরকার। মহিলাদের জন্য রয়েছে আরও ছাড়। সুদের উপর অতিরিক্ত ৫০ বেসিস পয়েন্ট ছাড় পাবেন মহিলারা।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অন্য জায়গায়। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির মধ্যে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ছাড়া আর কেউই এখনও এই ঋণ দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। এ মাসের শুরুতেই এই ঋণ সংক্রান্ত একটি মউ স্বাক্ষর হয় পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের সঙ্গে। রাজ্য সরকার এই ঋণের গ্যারান্টার, তাই সরকারের সঙ্গে ব্যাঙ্কগুলির মউ চুক্তি স্বাক্ষর করা দরকার ছিল। কিন্তু বাকি ব্যাঙ্কগুলি এখনও এগিয়ে আসেনি। এদিকে আবেদনের সংখ্য়া বাড়ছে। যা নিয়ে চিন্তার মেঘ নবান্নে বলেই সূত্রের দাবি।
‘স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড’ প্রকল্পে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। একবারে এই ১০ লক্ষ টাকা ঋণ না নিয়ে ধাপে ধাপেও সেই টাকা নেওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অনলাইনেই এই ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করা যাবে।
সর্বাধিক ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ নেওয়া যাবে। বছরে সর্বনিম্ন ৪ শতাংশ সুদে ঋণ মেটাতে হবে পড়ুয়াকে। ৪ লক্ষ টাকা ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও মার্জিন মানি দিতে হবে না অর্থাৎ ব্যাঙ্কে এককালীন কোনও টাকা দিতে হবে না। তার বেশি টাকা ঋণ নিলে সেই টাকার ওপর ৫ শতাংশ মার্জিন মানি দিতে হবে।
কোর্স চলাকালীন যে কোনও সময়ে এই ঋণ নেওয়া যাবে। ঋণ দেওয়া হলেও ব্যাঙ্ক সরকারি পোর্টালে সেই তথ্য আপলোড করবে। ঋণ নেওয়ার জন্য ব্যাঙ্ক কোনও অতিরিক্ত শর্ত চাপাতে পারবে না। সরকারই এই ঋণের গ্যারান্টার হবে। ব্যাঙ্কে পড়ুয়ার অভিভাবককে কোনও চাপ দিতে পারবে না। ১৫ বছরের মধ্যে সুদ মেটাতে হবে। কোনও অভিভাবক চাইলে আগেও সেই টাকা মিটিয়ে দিতে পারে।
আরও পড়ুন: Coal Scam: হাজিরা এড়াচ্ছেন রুজিরা! অভিষেক-পত্নীকে সমন দিল্লি আদালতের