কলকাতা: জয়েন্ট এন্ট্রান্সে পাশ না করলেও চলবে। শুধু উচ্চমাধ্যমিক বা সমতুল্য পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতেই মিলবে বেসরকারি কলেজগুলিতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ। ভাবছেন এ আবার কীভাবে সম্ভব? সম্প্রতি এমনই এক বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে শিক্ষা দফতর। সেখানে বেসরকারি কলেজগুলিতে ফাঁকা পড়ে থাকা সিটগুলি ভর্তি করার এই সুযোগ দিচ্ছে শিক্ষা দফতর। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলিতে বহু আসন ফাঁকা যাচ্ছে। এমন অবস্থায় তাই এ বছরও কাউন্সেলিং ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণের অর্থাৎ কলেজভিত্তিক কাউন্সেলিংয়ের পথে হাঁটছে শিক্ষা দফতর।
সেক্ষেত্রে বেসরকারি কলেজগুলি ফাঁকা আসনের জন্য কাউন্সেলিং করে কোন কোন উপায়ে পড়ুয়া ভর্তি করতে পারবে, তাও বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। তিনটি উপায় বলা হয়েছে বেসরকারির কলেজগুলির জন্য। প্রথমত রাজ্যের জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার র্যাঙ্কের ভিত্তিতে, দ্বিতীয়ত, সর্বভারতীয় জয়েন্ট এন্ট্রান্সের র্যাঙ্কের ভিত্তিতে এবং তৃতীয়ত, যদি কারও রাজ্যের জয়েন্ট বা সর্বভারতীয় জয়েন্টে র্যাঙ্ক না থাকে, সেক্ষেত্রে উচ্চমাধ্যমিক বা সমতুল্য পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে।
অর্থাৎ, শুধু উচ্চমাধ্যমিকের নম্বরের ভিত্তিতেই এবার মিলে যাবে বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তির সুযোগ। কিন্তু কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে? জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড তিন দফায় কাউন্সেলিং করার পরেও কেন ভর্তি হচ্ছে না আসন? ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার প্রতি কি আগ্রহ হারাচ্ছে রাজ্যের পড়ুয়ারা? নাকি রাজ্যে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ? এদিকে এমনভাবে জয়েন্ট ছাড়াই আসন ভর্তি করলে সঠিক ইঞ্জিনিয়ার কি তৈরি হবে? তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে শিক্ষা মহলে। জয়েন্ট ছাড়া ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে পড়ুয়া ভর্তি নেওয়ার বিপক্ষে শিক্ষাবিদদের একটি বড় অংশ।
ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে আগ্রহী পড়ুয়ার থেকে বেশি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ খোলা হয়ে গিয়েছে বলেই মনে করছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এর বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপিকা নন্দিনী মুখোপাধ্যায়। তাঁর মতে, অনেক বেসরকারি কলেজেই পড়াশোনার মান নিয়ে সংশয় রয়েছে এবং সেই কারণে পড়ুয়া বাইরে পড়তে চলে যাচ্ছে, কিন্তু রাজ্যের বেসরকারি কলেজগুলিতে ভর্তি হচ্ছে না। বেঙ্গালুরু বা হায়দরাবাদ বা নয়ডার মতো কিছু জায়গা বাদে গোটা দেশেই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়াদের কর্মসংস্থানের বিশেষ ব্যবস্থা নেই বলেই মনে করছেন অধ্যাপিকা নন্দিনী মুখোপাধ্যায়। আর সেই কারণেই ইঞ্জিনিয়ারিং-এর পরিবর্তে অন্যান্য বিষয়ের উপর পড়ুয়ারা আগ্রহী হচ্ছে বলে মত তাঁর।
ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়াদের জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে বলেও মনে করছেন তিনি। জয়েন্ট্র এন্ট্রান্স পরীক্ষায় র্যাঙ্ক কিংবা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় খুব ভাল ফল থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন বলেই মত তাঁর। নাহলে, এর ফলে অনেক পড়ুয়া ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেও কর্মদক্ষ হয়ে উঠতে পারবে না বলেও মনে করছেন তিনি।