কলকাতা: সর্বত্রই লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ডেল্টার প্রভাব যেভাবে গোটা দেশে বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছেছিল, এ বারও ঠিক তেমনই ছবি দেখা যেতে পারে, সংক্রমণের হার আরও বাড়তে পারে। এই পরিস্থিতিতে করোনার করাল গ্রাস থেকে বাদ যাচ্ছেন না খ্যাতনামা ব্যক্তিরাও। সদ্যই করোনা আক্রান্ত হয়েছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাঁর করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর শুনেই ফোন করে খোঁজ নেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় (Mamata Banerjee)। আর মুখ্য়মন্ত্রীর এই সৌজন্যতার পাল্টা পোস্ট করে নিজের মতামত স্পষ্ট করলেন সুকান্ত (Sukanta Majumder)।
নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে সুকান্ত লিখেছেন, “মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিয়েছেন। আমি এই জন্য ওনাকে ধন্যবাদ জানাই। উনি আমার প্রতি যে রাজনৈতিক সৌজন্যতা দেখিয়েছেন তা ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দেখালে আমি আরও খুশি হতাম।”
সুকান্তর এই পোস্টকে ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক তুঙ্গে। কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের সংঘাত নতুন কিছু নয়। বিভিন্ন সময়েই দেখা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আয়োজিত নানা বৈঠক বা সভাও এড়িয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সুপ্রিমোর বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে বরাবর সরব হয়েছে বিরোধী শিবির। সেই একই সুর এ বার সুকান্তর। পোস্টেই তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সম-সৌজন্যতা দেখানো হলে তিনিই খুশিই হবেন।
কিছুদিন আগে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের নতুন ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভার্চুয়ালি সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী মোদীর উপস্থিতিতেই বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর কারণেই আমি অনুষ্ঠানে উপস্থিত। আমন্ত্রণ জানাতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমাকে দুই বার ফোন করেন। প্রধানমন্ত্রী যে বাংলার উন্নয়নের জন্য আগ্রহ দেখিয়েছেন তার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে চাই আমি। তবে আমি বলতে চাই, এই ক্যাম্পাসের উদ্বোধন আমরা আগেই করে দিয়েছি।” তবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিনে তাঁকে টুইট করে শুভেচ্ছাবার্তা জানান নমো। পাল্টা ধন্যবাদও জ্ঞাপন করেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। কিন্তু, নির্বাচন আবহ থেকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা, সর্বত্রই দেখা গিয়েছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধেই সুর চড়িয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। সেই কথা স্মরণে এনেই বিজেপির রাজ্য সভাপতির এই মন্তব্য বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
প্রসঙ্গত, করোনা আক্রান্ত হয়ে রবিবার হাসপাতালে ভর্তি হন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাঁকে ঢাকুরিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সুকান্ত মজুমদারের র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট বা র্যাট (RAT) পরীক্ষা করা হয় প্রথমে। সেই রিপোর্ট পজিটিভ আসার পরই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে।
জানা গিয়েছে, হালকা জ্বর, কফ, সর্দির মতো উপসর্গ রয়েছে তাঁর। অক্সিজেন স্যাচুরেশন প্রাথমিকভাবে স্থিতিশীল থাকলেও পরে তাঁকে অক্সিজেন দিতে হয়েছে। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ আসার পর তাঁকে হাসপাতালের একটি আইসোলেশন কেবিনে রাখা হয়েছে। তাঁর নমুনা পাঠানো হয়েছে আরটিপিসিআর টেস্টের জন্য।
সুকান্তর অসুস্থতার খবর পেয়ে সোমবারই তাঁকে ফোন করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। প্রায় তিন মিনিট ফোনে কথাও হয় তাঁদের। সুকান্তর জন্য ফল ও অন্যান্য কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস পাঠিয়েও দেন তৃণমূল সুপ্রিমো। রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকলেও সৌজন্যের রাজনীতি বাংলায় নতুন নয়। ২০২০-তে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, তখনও তাঁর খোঁজ নিতে ফোন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকী, শুধু বিজেপি নেতাদের ক্ষেত্রেই নয় একসময়ের মমতার প্রধান বিরোধী বামেদের একাধিক নেতার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় সৌজন্য দেখিয়েছেন মমতা। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে দেখতে তাঁর বাড়িতেও গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: Dilip Ghosh on Shantanu Thakur: ‘আমারও মাঝেমাঝে মনে হয়, গ্রুপ লেফট করি, তাহলে…’