প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ: বৃষ্টি পড়ছে। আর তার মাঝেই করতে হবে সাংবাদিক বৈঠক। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর মাথায় কে ছাতা ধরবেন? নিরাপত্তারক্ষী। সেই দৃশ্যই তো দেখতে অভ্যস্ত আম নাগরিক। এবার আর সেই দৃশ্য দেখলেন না তাঁরা। বরং নিজের বা হাতে ছাতা ধরেই সাংবাদিক বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী। গত ১৯ জুলাই সংসদ ভবনের বাইরের সেই দৃশ্যের সাক্ষী ছিল আমজনতা। আর সোমবার বিধানসভা চত্বর চাক্ষুষ করল বৃষ্টির মধ্যে ছাতা ছাড়া বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সাংবাদিক বৈঠক।
সোমবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে কলকাতায়। গতিবেগ কমলেও কখনও ঝিরঝির, কখনও টিপটিপ করে বৃষ্টি হচ্ছিল। সে অবস্থায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে বিধানসভার গেটের পাশে দাঁড়ালেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। আবার মাথার উপরে রয়েছে গাছ। প্রবল বৃষ্টিতে সেই গাছের ডালপালাও ভিজে একসা। ফলে ঝিরঝির বৃষ্টি আর গাছের ডালপালা থেকে চুঁইয়ে পড়া জলে ভিজে যাচ্ছিল ‘ভিআইপি’-র মাথা। তখনই দৌড়ে কালো রঙের ছাতা নিয়ে ‘ভিআইপি’ মাথা বাঁচাতে এলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে সেই ছাতা হাত দিয়ে বিরক্তির সঙ্গে সরিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ১৯০০-র বেশি ভোটে পরাস্ত করে পদ্মফুলে জয়ী হওয়া বিধায়ক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকের মতে, ভাবমূর্তি সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন শুভেন্দু। কয়েকদিন আগে বৃষ্টির মধ্যে সাংবাদিক বৈঠকে নিজের ছাতা নিজেই ধরেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আর সেখানে একই রকম সাংবাদিক বৈঠকের দৃশ্যে মাথার উপরে নিরাপত্তারক্ষী ছাতা ধরলে তা নিয়ে দলের অন্দরে বা বাইরে নানা মত উঠে আসতে পারে। সে কারণে বৃষ্টির মধ্যে শুভেন্দুর ছাতা সরিয়ে দেওয়া বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
একদা শুভেন্দু কলেজ বা পরবর্তী সময়ে দামি রোদচশমা, ঘড়ি ব্যবহার করতেন। তবে যে সময় থেকে ক্রমশ রাজনীতির সঙ্গে নিজের জীবনকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধেছেন, তখন থেকেই দামি রোদচশমা বা ঘড়ির সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়েছেন কাঁথির শান্তিকুঞ্জের মেজ ছেলে। তাঁর মতে, এখন মোবাইলে সময় দেখা যায়, দামি রোদচশমা ছাড়া দিব্যি চলা যায়। ফলে ওসবের কী দরকার? বিভিন্ন সময়েই ঘরোয়া আলোচনায় বলেছেন, “আমি অকৃতদার। আমার সারাদিনে দু’শো টাকা খরচ! কোনও শখ নেই। শুধু মানুষের জন্য কাজ ছাড়া।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সে সব মনে করিয়ে সোম সন্ধ্যায় বিধানসভা গেটের বাইরে বৃষ্টির মাঝে সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দুর ছাতা সরানোর মধ্যে ‘ভাবমূর্তি সচেতন’ রাজনীতিই খুঁজছেন। তবে বিরোধী দলনেতার ঘনিষ্ঠ মহলের কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, “এসব মিডিয়ার ভাবনা। শুভেন্দুবাবু মানুষের জন্য কাজ করেন। তাই তাঁর আলাদা করে ভাবমূর্তি তৈরির প্রয়োজন পড়ে না।” আরও পড়ুন: উচ্চ মাধ্যমিকে নয়া কেলেঙ্কারি! পাশ করাতে ৫০০ টাকা নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক