কলকাতা: বালির তৃণমূল নেতা তপন দত্ত খুনের মামলায়, বৃহস্পতিবারই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। শুক্রবার (১০ জুন) এই মামলার বিষয়ে দিল্লি ও কলকাতার লিগ্যাল সেলের পরামর্শ চাইলো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি। মামলাটি ১১ বছরের পুরনো। ২০১১ সালের ৬ মে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছিল তপন দত্তের। প্রাথমিকভাবে এই মামলার তদন্তের ভার ছিল সিআইডি-এর হাতে। তারা জানিয়েছিল, জলাভূমি ভরাটের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য়ই খুন হতে হয়েছে তপন দত্তকে। ঘটনায় তৃণমূলের বেশ কয়েকজন স্থানীয় নেতা কর্মীর নাম জড়ালেও, পরে অনেকেই মুক্তি পেয়েছিলেন। এই অবস্থায় নতুন করে তদন্ত শুরুর আগে আইনি পরামর্শ চাইছে সিবিআই।
গত ১১ বছর ধরে নিম্ন আদালত, কলকাতা হাই কোর্ট এমনকি, সুপ্রিম কোর্টেও এই খুনের ঘটনার মামলার বিচার চলেছে। সিআইডির পক্ষ থেকে চার্জশিট পেশ করা হয়েছিল। কিন্তু তথ্য প্রামাণাদির অভাবে চার্জশিটে নাম থাকা সকলেই বেকসুর খালাস পেয়ে গিয়েছে। সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে কোন পথে তদন্ত করা উচিত, সেই বিষয়েই লিগ্যাল সেলের পরামর্শ চেয়েছে সিবিআই। এই মামলার ক্ষেত্রে তারা নতুন করে এফআইআর দায়ের করে মামলা শুরু করতে চাইছে। কিন্তু বিচারাধীন কোনও মামলার ক্ষেত্রে তা করা সম্ভব কিনা, সেই বিষয়ে আইনি পরামর্শ চেয়েছে সিবিআই। সিবিআই সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, লিগাল সেলের সুপারিশ মতোই তদন্ত শুরু করা হবে। পাশাপাশি সিআইডি-র কাছ থেকে তদন্ত সংক্রান্ত সমস্ত নথিপত্রও চেয়ে নেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চ, তপন দত্ত হত্যা মামলার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন সিবিআইকে। শুধু তাই নয়, এখন থেকে এই মামলায় বিচার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সব দায়িত্বও সিবিআই পালন করবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। তিনি আরও জানিয়েছিলেন, এখন থেকে এই মামলার বিচার চলবে এক বিশেষ সিবিআই আদালতে। সিআইডি-কে বিচারপতি মান্থা এই মামলার তদন্তের সব নথিপত্র সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রয়োজনে সিবিআই-কে আরও তদন্তের অনুমতিও দেওয়া হয়েছিল।
তপন দত্ত খুনের হাওড়ার তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায়, কল্যাণ বসু, ষষ্ঠী গায়েন-সহ শাসক দলের একাধিক নেতা ও বিধায়কের নাম জড়িয়েছিল। তপন দত্তের স্ত্রীর অভিযোগ প্রাথমিক চার্জশিটে অরূপ দত্তের নামও ছিল। তবে পরবর্তী সময়ে সিআইডির পক্ষ থেকে যে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করা হয়েছিল, তাতে কোনও কারণ না দেখিয়েই ৯ জনের নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল সিআইডির বিরুদ্ধে। এঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন তৃণমূল নেতা। ২০১৪ সালে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণের অভাবে চার্জশিটে নাম থাকা বাকিরাও বেকসুর খালাস পেয়েছিলেন। ২০১৭ সালে কলকাতা হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের সেই রায় খারিজ করে দিয়েছিল। অভিযুক্তরা এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন। তবে শীর্ষ আদালত হাইকোর্টের রায়ই বহাল রেখেছিল। হাইকোর্টকে এই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।