কলকাতা: ১৯৮৯ সালের ১৮ জুন। রাত ১০:২০ মিনিট। আচমকাই ভেঙে পড়ল সাত তলা বাড়ি। সম্পূর্ণ মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছিল ওই বহুতলটি। ১১ জনের মৃত্যু হয়েছিল ঘটনাস্থলে। কেটে গিয়েছে ৩৫ বছর। কিন্তু ভবানীপুরের ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনস্থ ৩২ রাজেন্দ্র রোড ঠিকানার বাসিন্দারা কিছুতেই ভুলতে পারেন না সেই অভিশপ্ত রাতের ঘটনা। গার্ডেনরিচের ঘটনাও ঘটেছে রাতে। সেই ঘটনা টিভির পর্দায় ফুটে উঠতেই স্মৃতি যেন নতুন করে উসকে উঠল ভবানীপুরের সেই ঠিকানার এখনকার বাসিন্দাদের মনে। ওই বহুতলের প্রোমোটার প্রদীপ কুন্দলিয়াকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। গার্ডেনরিচের ঘটনাতেও দ্রুত প্রোমোটারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে জমির মালিককেও।
নিজেদের পরিজনদের যেভাবে হারিয়েছিল এই ভবানীপুরের বাসিন্দারা তা মনে করতে গিয়েই কেঁদে উঠলেন তাঁরা। বাড়ির বাসিন্দা বিজন সিং। তাঁর পরিবারের পাঁচজনকে ওই ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল। যার মধ্যে তিনটি ছিল ছোট ছোট শিশুও। এদিন সেই ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন ওই বৃদ্ধ। ওই ঘটনায় নিজের পাও হারিয়েছেন ওই বৃদ্ধ। কিভাবে সেই ঘটনা ঘটেছিল এদিন তা রীতিমতো বলতে গিয়ে ভয়ে শিউরে উঠলেন তাঁরা।
যেই জায়গায় বাড়িটা ভেঙে পড়েছিল সেখানেই এখন ছোট ছোট ঝুপড়ি করে তাঁরা থাকেন। ধ্বংসস্তুপের লেশ মাত্র নেই। কিন্তু সেই পাথর এবং কংক্রিটের কিছু স্ল্যাব পড়ে রয়েছে। নিজেদের দুর্ভাগ্যের পরিণতির সঙ্গে গার্ডেনরিচের মৃতদের স্বজনহারাদের একই সারিতে নিয়ে এলেন তাঁরা। অভিযোগ, ৩৫ বছর কেটে গেলেও তাঁরা এখনও কোনও সুযোগ-সুবিধা পাননি। তাঁরাও যেমন পরিস্থিতির শিকার হয়ে রয়ে গিয়েছেন, তেমনই গার্ডেনরিচের ঘটনাতেও স্বজন হারারা পরিস্থিতির শিকার হয়ে রয়ে যাবেন বলেই মনে করছেন ভবানীপুরের বিজন সিং এবং তাঁর পরিবার। ওই বাড়িতেই থাকতেন কামেশ্বর সিং। ঘটনার দিন দোতলা থেকে ঝাঁপ মেরেছিলেন তিনি। ভাই কিছুক্ষণ আগে বাইরের হোটেলে ভাত খেতে চলে গিয়েছিলেন বলে প্রাণে বেঁচে ছিল। কিন্তু, তিনি ধ্বংসস্তূপ এর তলায় চাপা পড়ে যান। তবে কোনওভাবে নিজেকে উদ্ধার করতে পেরেছিলেন। মনে জোর থাকায় তিনি বেঁচে ফিরেছিলেন। সেই স্মৃতিও আজকে টাটকা হয়ে উঠল গার্ডের নিচের ঘটনার পর। গার্ডেনরিচের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্য়া ১০। মঙ্গলবার সন্ধ্যাতে শেষ একজনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। গার্ডেনরিচ কাণ্ডে মৃতদের পরিবারের জন্য সরকারের তরফে ইতিমধ্যেই ৫ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে।