কলকাতা: “আমার মেয়েটার শরীরের এমন কোনও জায়গা ছিল না, যেখানে আঘাত করেনি।” কথাটা বলতে গিয়েই ডুকরে কেঁদে উঠলেন তিলজলার আট বছরের শিশুকন্যার আত্মীয়। সদ্য মেয়েকে হারিয়েছেন তিনি। এটুকু বাচ্চার খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই কেঁপে উঠেছে গোটা বাংলা। তদন্তে নেমে শিউরে উঠেছেন পুলিশকর্তারাই। শিশুটির সারা শরীরে সুচ জাতীয় কিছু জিনিসের ক্ষত। পুলিশ জানাচ্ছে, খুনের আগে যৌন নির্যাতনও করা হয়েছিল শিশুটির ওপর। বস্তা থেকে উদ্ধার হয়েছিল আট বছরের শিশুটির হাত পা বাঁধা দেহ। শিশুটির আত্মীয়ের কথায় উঠে আসল ঘটনার বীভৎসতা। শিশুটির আত্মীয় বলেন, “আমি বলেছিলাম, ময়লাটা ফেলে দুটো দুধের প্যাকেট নিয়ে চলে আসবি। ময়লার প্যাকেটটা নিয়ে নীচে নামেও। কিন্তু কুকুর থাকায় ভয়ে আবার চলে আসে। দুধ আনেনি ও ময়লাও ফেলেনি।”
কথা বলতে বলতেই উত্তেজিত হয়ে পড়েন তিনি। বললেন, “আমার মেয়েটা চলেই আসছিল। ওই লোকটা সিঁড়ি থেকে আমার মেয়েটাকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। এতটা মারল আমার বাচ্চাটাকে মাথায় এক আঙুল মতো ফুটো করে দিয়েছে। কাপড় দিয়ে মুখ বাঁধা ছিল। জিভটাও বেরিয়ে গিয়েছিল।”
শিশুটির পরিবারের তরফে থেকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তোলা হচ্ছে না। কেবল খুনের অভিযোগ করা হচ্ছে। যদিও পুলিশের বক্তব্য, খুনের আগে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে শিশুটি। দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। তবে প্রাথমিক তদন্ত অভিযুক্তকে জেরা করে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য জানতে পেরেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, জেরায় অভিযুক্ত যা যা কবুল করেছেন, তাতে তন্ত্রযোগেরও তত্ত্ব উঠে আসছে। অভিযুক্তের কোনও সন্তান ছিল না। তাই সন্তান কামনায় কোনও এক তান্ত্রিকের বলে দেওয়া পথ অনুসরণ করেই শিশুটিকে বলি দিয়েছেন। অন্তত জেরায় তেমনটাই জানাচ্ছেন অভিযুক্ত। আপাতত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।
তবে এই ঘটনায় পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দারাপুলিশের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। সকালে নিখোঁজ অভিযোগ দায়ের হলেও কেন শিশুটিকে খুঁজতে গড়িমসি করল পুলিশ, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। ঘটনাকে ঘিরে রবিবার রীতিমতো ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয় ওই এলাকায়। প্রতিবাদ সোমবারও বন্ডেল রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রশ্ন থাকছে আরও একটি বিষয়ে, পাশের ফ্ল্যাটেই যখন ঘটে গেল এতটা নৃশংসতা, তখন আশপাশের কেউ কীভাবে টের পেলেন না এক ফোঁটাও? পুরোটাই আপাতত তদন্তসাপেক্ষ।