কলকাতা : একদিকে মোদী সরকারের দেওয়া পদ্ম সম্মান প্রত্যাখ্যান করেছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আর অন্যদিকে, কেন বুদ্ধবাবুকেই বেছে নেওয়া হল পদ্ম পুরস্কারের জন্য, সেই প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। রাম-বাম আঁতাতের প্রশ্ন তুলে ঘাসফুল শিবিরের দাবি, আদতে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানানো হয়েছে বাম ভোটারদের। পাশাপাশি, বুধবার তৃণমূলের মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’য় আরও দাবি করা হয়েছে, বুদ্ধবাবুকে স্বীকৃতি আদতে জমি আন্দোলনের নিষ্পেষণকে স্বীকৃতি দেওয়া।
এক দিকে বামেরা বলছে, যে সরকার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, সেই সরকারের দেওয়া পুরস্কার গ্রহণ করা হবে না। অন্যদিকে, তৃণমূলের বক্তব্য, এই পুরস্কারেই আরও একবার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বামেদের সঙ্গে বিজেপির গোপন আঁতাত। মঙ্গলবার এই পুরস্কার ঘোষণার পর তৃণমূলের তরফে কুণাল ঘোষ একই দাবি করেছিলেন। আর বুধবার ‘জাগো বাংলা’য় বলা হয়েছে, বুদ্ধবাবুকে সম্মান দিয়ে আসলে সিপিএমের ভোটারদের ‘ভোট অফ থ্যাংকস’ জানাল বিজেপি।
তৃণমূলের দাবি, গত কয়েক বছর ধরে এ রাজ্যে বামেদের ভোট বিজেপিতে আসতে শুরু করেছে। বিধানসভা থেকে পুরসভা সব ক্ষেত্রেই একই ছবি। তাই বামেদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়েছে বলে দাবি ঘাসফুলের।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন এ রাজ্যে জমি আন্দোলনের সূত্রপাত। নন্দীগ্রাম- সিঙ্গুরে সেই জমি আন্দোলনই বাম দূর্গের পতনের অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই বুদ্ধবাবুর পদ্ম পুরস্কারে সেই বিতর্ক উস্কে দিয়েছে তৃণমূল। সদ্য ইতি পড়েছে কেন্দ্র-বিরোধী কৃষক আন্দোলনে। আর এবার বুদ্ধদেবকে পদ্ম সম্মান দেওয়ায় তৃণমূলের দাবি, জমি আন্দোলনের নিষ্পেষণকেই আদতে স্বীকৃতি দিয়েছে বিজেপি।
পদ্ম পুরস্কারে নাম রয়েছে দেশের তিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর। বাংলা থেকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, উত্তর প্রদেশের কল্যান সিং ও কাশ্মীরে গুলাম নবি আজাদ। আর এই তিন নাম উল্লেখ করে বিতর্ক উস্কে দিয়েছে তৃণমূল। সব ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক সমীকরণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে ঘাসফুল নেতৃত্ব। কল্যান সিং-কে দেওয়া হয়েছে মরণোত্তর পদ্মবিভূষণ সম্মান। তৃণমূলের দাবি, এই কল্যান সিং-এর বিরুদ্ধেই বাবরি মসজিদ ভাঙায় মদত দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদের কংগ্রেস বিরোধিতা সামনে এসেছে বেশ কিছুদিন ধরেই। এ ক্ষেত্রে বিজেপি ঘনিষ্ঠতা স্পষ্ট হয়েছে বলেই দাবি করেছে তৃণমূল।
আর সেই অঙ্কেই মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে বুদ্ধবাবুর সম্মানও। মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, একসময় লালকৃষ্ণ আদবানীর সঙ্গে বুদ্ধবাবুর ঘনিষ্ঠতার কথা।
শারীরিক অসুস্থকার কারণে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। এ দিন তৃণমূল প্রশ্ন তুলেছে, বিজেপির আঁতাতের কারণেই হয়ত রাজ্যপাল দেখা করতে যান বুদ্ধবাবুর সঙ্গে। উল্লেখ্য, বুদ্ধবাবুকে দেখতে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
তবে এই আঁতাতের দাবি মানছে না কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী দাবি করেছেন, এতে রাম-বাম সম্পর্ক প্রমাণিত হয় না।
আরও পড়ুন : Buddhadeb Bhattacharya: পদ্ম সম্মান ঘোষণার আগে ফোন করা হয়েছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বাড়িতে, দাবি কেন্দ্রের